Posts

জুওয়াইরিয়া (রা.)

Image
  একদিন সকালে রাসুল (সা.) দেখতে পেলেন জুওয়াইরিয়া (রা.) মসজিদে বসে দোয়া করছেন। তিনি চলে গেলেন। দুপুরে এসে তাঁকে একই অবস্থায় পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সব সময় এ অবস্থাতেই থাকো?’ সে অবস্থাতেই তিনি জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাকে এর চেয়েও ভালো কিছু শিখিয়ে দেব, যা তোমার এই নফল ইবাদতের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর পর তিনি তাঁকে এই দোয়াটি শিখিয়ে দেন: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিজা নাফসিহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’ অর্থাৎ: ‘আমি আল্লাহ–তায়ালার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি, তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি সন্তুষ্ট হওয়ার পরিমাণ, তাঁর আরশের ওজন সমপরিমাণ, তার কথা লিপিবদ্ধ করার কালি পরিমাণ।’(মুসলিম, হাদিস: ৭.০৮৮) জুওয়াইরিয়া (রা.) ছিলেন আরবের দুর্ধর্ষ বনু মুসতালিক গোত্রের মেয়ে, যাঁরা যুদ্ধেই সবকিছুর সমাধান খুঁজতেন। জুওয়াইরিয়ার বাবা হারিস ইবন দিরার ছিলেন বনু মুসতালিক গোত্রের সর্দার। প্রথমে তাঁর নাম ছিল বাররা। বিয়ের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) সেটি পাল্টে তাঁর নাম রাখেন জুওয়াইরিয়া। বাররা নামটিতে আত্মপ্রশান্তির ভাব থাকায় রাসুল (

হজরত আবু মুসা(রা.)

Image
  হজরত আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.)-এর জীবন ছিল যেন রাসুলের (সা.) জীবনের প্রতিচ্ছবি। সব সময় তিনি চেষ্টা করতেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিটি কাজ ও আচরণ হুবহু অনুসরণ করতে। রমজানের রোজা ছাড়াও তিনি নফল রোজা রাখতেন। এ ছাড়া তিনি আশুরার রোজা রাখতেন এবং মানুষকে তা রাখতে বলতেন। প্রচণ্ড গরমের সময়ও তাঁকে রোজা রাখতে দেখা যেত। তিনি বলতেন, ‘হয়তো দুপুরের গরমের তৃষ্ণা কিয়ামতের দিনে আমাদের জন্য প্রশমিত হবে।’ সুন্নত ছাড়া মুস্তাহাবের প্রতিও তিনি খুব যত্নবান ছিলেন। কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। এ কারণে তিনি তাঁর কন্যাদেরও হুকুম দিতেন নিজ হাতে পশু জবাই করার জন্য। আবু মুসা (রা.) জীবনের শেষ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশ ও নিষেধ পালনে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তাঁর অবস্থা যখন সংকটজনক হয়ে পড়ে এবং তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন, তখন নারীরা কান্নাকাটি শুরু করেন। সেই কঠিন মুহূর্তেও ক্ষণিকের জন্য চেতনা ফিরে পেলে তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এভাবে বিলাপ করতে নিষেধ করেছেন। আবু মুসা (রা.)-এর মধ্যে এ গুণ পরিপূর্ণরূপে ছিল। রাতে ঘুমানোর সময়ও তিনি বিশেষ ধরনের পোশাক পরে নিতেন, যাতে সতর (শরীরের সেসব অংশ

হাফসা (রা.)

Image
  একবার খলিফা উমর (রা.) এক নারীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কী হয়েছে?’ নারীটি বললেন, ‘কয়েক মাস ধরে আমার স্বামী আমার কাছ থেকে দূরে আছে। তাঁকে আমার কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠেছে।’ উমর (রা.) তখন তাঁর মেয়ে হাফসা (রা.)–র কাছে গিয়ে বললেন, ‘আমি তোমার কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চাই। আমাকে সাহায্য করো। স্বামী কত দিন দূরে থাকলে স্বামীকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মেয়েদের মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠে?’ হাফসা (রা.) লজ্জায় মাথা নত করে ফেলেন। উমর (রা.) তখন বললেন, ‘আল্লাহ সত্য প্রকাশের ব্যাপারে লজ্জা করেন না।’ হাফসা (রা.) তখন হাতে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন তিন বা চার মাস। উমর (রা.) নির্দেশ দিলেন, কোনো সৈনিককে যেন চার মাসের বেশি সময় আটকে রাখা না হয়। হাফসা (রা.) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)–র কন্যা। তাঁর ভাই সাহাবি আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.)। হাফসা (রা.) আবদুল্লাহর চেয়ে ছয় বছরের বড় ছিলেন। বিয়ের বয়স হলে উমর (রা.) বনু সাহম গোত্রের খুনাইস ইবনে হুজাফার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। খুনাইস (রা.) মক্কায় প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। স্বামীর সঙ্গে হাফসা (রা.) মদিনায় হিজ

আসসালামু আলাইকুম

Image
  আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। কুরআন থেকে পাওয়া আজকের শিক্ষাটি সহজ একটি শিক্ষা এবং ইনশা আল্লাহ এটা প্রফুল্যতা প্রদানকারী একটি শিক্ষা। সূরা নিসার ৮৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا - ওয়াইযা হুইয়্যিইতুম বিতাহিয়্যাতিন ফাহাইয়্যু বিআহসানা মিসহা আও রুদ্দুহা, অর্থাৎ যখন কেউ তোমাদের অভিবাদন জানায়, এটা নিশ্চিত করবে যে তুমি জবাবে এর চেয়ে উত্তম অভিবাদন জানাবে অথবা কমপক্ষে একই ধরণের অভিবাদন জানাবে। নিশ্চই আল্লাহ সকল কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত। কুরআনের এই আয়াতটি মানুষকে মাধুর্য সহকারে অভিবাদন জানানোর জন্য আমাদেরকে উৎসাহিত করে। কুরআনের এই আয়াতটি আমাদেরকে শিক্ষা দেয়—এটা আমাদের শিষ্টাচার, এটা আমাদের রীতি এবং সংস্কৃতি যে, আমাদের সাক্ষাত করা এবং অভিবাদন জানানো উচিৎ প্রফুল্ল বদনে, হাস্যোজ্জ্বল মুখে এবং ভাষার সৌন্দর্য সহকারে। তাই আল্লাহ বলেছেন, যখন কেউ তোমাকে অভিবাদন জানায়, সেক্ষেত্রে উত্তম পন্থায় এর জবাব দিবে, অথবা, তা যদি সম্ভব না হয়, কমপক্ষে ঠিক একই রকম জবাব দাও যেভাবে সে তোমাকে অভিবাদন জানিয়েছে। এখানে ব্যবহৃত

রুপান্তরের একটি উদাহরণ

Image
  আমি আপনাদের রুপান্তরের একটি উদাহরণ দিতে চাই। রুপান্তরের দৃশ্যমান উদাহরণ। এটার ক্ষেত্রে কল্পনা করুন যে আয়াতটির সাথে একটি ক্যামেরা আছে।هُوَ الَّذِى يُسَيِّرُكُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ - তিনি আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য স্থলে সফর করা সহজ করে দেন, আর সমুদ্রেও। ( 10:22 ) তো যখন পড়লেন “স্থলে ও সমুদ্রে” তখন কী কল্পনা করলেন? মূলত কল্পনা করলেন কোনো তীর কিংবা বন্দর বা সমুদ্রসৈকত। কেন? কারণ আপনি স্থল দেখতে চান আবার সমুদ্রও দেখতে চান একইসাথে। حَتّٰىٓ إِذَا كُنتُمْ فِى الْفُلْكِ - যতক্ষণ না আপনি জাহাজে উঠে চড়েন। আর যখন জাহাজে ওঠেন তখন আপনি জাহাজ-ঘাট থেকে বন্দরে যান, এরপর জাহাজে উঠে যান। তো জাহাজটি মোটামুটি এখনো স্থলের সাথে সংযুক্ত। وَجَرَيْنَ بِهِم - এরপর জাহাজটি, তাদের নিয়ে পাল তুলে ভেসে চলে যায় بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ - অনুকূল হাওয়াতে। তো কী কল্পনা করছেন? একটি বন্দর, আলোকিত দিন! মানুষজন জাহাজে চড়ছে। জাহাজ ভেসে যাচ্ছে। বাতাসও অনুকূল। সেই বাতাস পালে আটকে জাহাজগুলো দ্রুত গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যাচ্ছে। খুব সুন্দর দৃশ্য। আর তাদের গতিও ভালো, সুন্দর বাতাসের কারণে। بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ আচ্ছা। وَفَرِحُوا ب

যা অস্তমিত হয়ে যায়

Image
  ড. আকরাম নদভীর কাছে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এর পর সবচেয়ে প্রিয় বাক্যটি হলো ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের এ কথাটি-- " لَاۤ اُحِبُّ الۡاٰفِلِیۡنَ লা উহিব্বুল আফিলিন। (৬:৭৬) যা অস্তমিত হয়ে যায় আমি তা ভালোবাসি না।" যা শেষ হয়ে যায় আমি তা ভালোবাসি না। যা হারিয়ে যায় আমি তা ভালোবাসি না। যে মেয়েটির রূপ লাবণ্য দেখে আপনি এখন মুগ্ধ সে একদিন বৃদ্ধ হয়ে পড়বে এবং মরে যাবে। যে ছেলেটির শক্তি এবং ব্যক্তিত্ব দেখে আপনি মগ্ন সেও একদিন হারিয়ে যাবে। যে সাম্রাজ্যের ক্ষমতা দেখে আপনি অভিভূত সে সাম্রাজ্যটিও একদিন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। যে বাড়িটির বিলাসিতা দেখে আপনি চমৎকৃত সেটিও একদিন ধুলোমনিল হয়ে ভেঙে পড়বে। এভাবে এ জগতের সবকিছু। একমাত্র যার কোনো ক্ষয় নেই, যিনি কোনোদিন শেষ হয়ে যাবেন না তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। کُلُّ مَنۡ عَلَیۡهَا فَانٍ - পৃথিবী পৃষ্ঠে যা আছে সবই ধ্বংসশীল, وَّ یَبۡقٰی وَجۡهُ رَبِّکَ ذُو الۡجَلٰلِ وَ الۡاِکۡرَامِ - "কিন্তু চিরস্থায়ী তোমার প্রতিপালকের চেহারা—যিনি মহীয়ান, গরীয়ান।" (৫৫:২৬-২৭) আর আল্লাহ জান্নাতের নেয়ামতরাজিকে চিরস্থায়ী করে বানিয়েছেন। হ্যাঁ,

দুঃখ কষ্ট এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব

Image
  দুঃখ কষ্ট এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব --------------------------------------- আমি এখন বলছি এবং আগেও বলেছি—স্রষ্টার অস্বীকৃতি দার্শনিক আপত্তির উপর নির্ভর করে নয়, বরং এটি দম্ভ এবং অহংকারের উপর নির্ভর করে করা হয়। এখানেই স্রষ্টার অস্বীকৃতির উৎপত্তি। কোনো নাস্তিককে যদি জিজ্ঞেস করেন কেন তুমি আল্লাহকে বিশ্বাস করো না? সে বলবে— আল্লাহ কেন এতো দুঃখ-কষ্ট ঘটতে দিচ্ছেন? তাদের মতে, যদি একজন ঈশ্বর থাকতো তাহলে কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকতো না। যেহেতু দুঃখ-কষ্ট আছে তাই কোনো স্রষ্টা নেই। প্রসঙ্গত, এ যুক্তিটি অতিশয় দুর্বল। কারণ, আল্লাহর কাজের বিজ্ঞতা বুঝতে না পারা আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমান থেকে স্বাধীন। আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন একটি ইস্যু। তাঁর কাজ বুঝতে না পারার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ দুটি কার্যকারণ অনুযায়ী সম্পর্কযুক্ত নয়। তারা যদি তাদের দাবিতে সত্য হতো তাহলে সর্বোচ্চ বলতে পারত— আমরা বুঝি না কেন স্রষ্টা এগুলো করবেন। আল্লাহর অস্তিত্ব সুস্পষ্ট। দেকার্ত বলেছিলেন— "আমি চিন্তা করি, তাই আমি আছি।" তার সন্দেহবাদ এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো যে, সে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। তাই,