পোস্টগুলি

অলসতা দূর করার জন্য নবীজির শেখানো দোয়া

ছবি
মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অলসতা। এটি ধীরে ধীরে মন, শরীর ও আত্মাকে দুর্বল করে দেয়। ইসলামে অলসতা শুধু কাজের অনীহা নয়, বরং এক ধরনের আত্মিক ব্যাধি বলে বিবেচিত। তাই মহানবী মুহাম্মদ (স.) প্রতিদিনের দোয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দোয়ায় বিশেষভাবে অলসতা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। ইসলামে কর্মপ্রেরণা কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর বলো, তোমরা কাজ করো, আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনগণ তোমাদের কাজ দেখবেন।” (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৫) অর্থাৎ, ইসলামে কাজ বা শ্রম কোনো পার্থিব বিষয় নয়, বরং এক ধরনের ইবাদত। অলসতা এই ইবাদতের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই রাসুল (স.) বলেছেন, “বলবান মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ আছে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪) ইমাম নববী (রহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখানে ‘বলবান’ বলতে কেবল শারীরিক শক্তি বোঝানো হয়নি; বরং বোঝানো হয়েছে আত্মিক শক্তি, কর্মোদ্যম, ও আল্লাহর আদেশ পালনে দৃঢ় সংকল্প। আর ‘দুর্বল মুমিন’ বলতে বোঝানো হয়েছে সেই ব্যক্তিকে, যে ঈমানদার হলেও অলসতা ও অনীহায় ভোগে, ফলে আমল কম করে। (শারহ সহিহ মুসলিম, ১৬/২০৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত,...

সাপ্তাহিক ছুটির দিন সম্পর্কে ধর্ম কী বলে

ছবি
  আমাদের জীবনের একটা বড় অংশ এখন সাপ্তাহিক ছুটির ওপর নির্ভর করে। শুক্র, শনি বা রোববার—বিভিন্ন দেশে ছুটির দিন ভিন্ন হলেও এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদি প্রশ্ন করা হয়, এ ছুটির দিন কি ধর্মীয় বিধান থেকে এসেছে, নাকি আমাদের সমাজ আর অর্থনীতির প্রয়োজনে তৈরি হওয়া নিয়ম? বিশেষ করে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে শুক্রবারের ছুটি কি ধর্মীয়ভাবে বাধ্যতামূলক, নাকি শুধু প্রশাসনিক একটি সিদ্ধান্ত? আসুন, এ প্রশ্নের উত্তর আমরা ইসলামি শরিয়াহ, ঐতিহ্য ও সমাজের বাস্তবতার আলোকে দেখি। ধর্মে ছুটি ও উৎসবের ধারণা ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মে ছুটি ও উৎসবের ধারণা একেক রকম। ইহুদি ধর্মে শনিবার পবিত্র একটি দিন। বাইবেলের জেনেসিসে (২: ২-৩) বলা হয়েছে, ঈশ্বর সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং সেই দিনকে পবিত্র করেছিলেন। তাই শনিবারে কোনো কাজ করা যায় না, এটি পুরোপুরি বিশ্রাম ও উপাসনার জন্য নির্ধারিত। (বাইবেল, এক্সোডাস, ২০: ৮-১১) এটি ইহুদিদের জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে একটি চিরন্তন চুক্তি। হে মুমিনগণ, শুক্রবারে যখন নামাজের জন্য ডাক দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এগিয়ে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। …নামাজ শে...

মক্কা–মদিনা ছাড়া সর্বত্রগামী দজ্জাল

ছবি
  দজ্জাল  বা  দাজ্জাল  শব্দটির অর্থ মহাপ্রবঞ্চক। শেষ যুগে মানুষকে প্রতারণা করতে যার আবির্ভাব ঘটবে। পবিত্র কোরআনে দজ্জাল শব্দটি নেই। তবে হাদিসে দজ্জালের উল্লেখ আছে। হজরত মোহাম্মদ (সা.) দজ্জালের যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে ধারণা করা হয়, দজ্জালের ডান চক্ষু অন্ধ থাকবে। তা ছাড়া তার দেহ হবে স্থূল, গাত্রবর্ণ লোহিত ও মাথার চুল কুঞ্চিত। তার অন্ধ চোখটিকে একটি ভাসমান আঙুলের মতো দেখাবে। তার কপালে ‘কাফির’ শব্দটি লেখা থাকবে, যা কেবল মুমিনরাই দেখতে পাবেন। দজ্জালের আবির্ভাবের আগে তিন বছর ভীষণ দুর্ভিক্ষ হবে। দজ্জাল বের হবে খোরাসান থেকে। দজ্জালের কোনো সন্তানসন্ততি থাকবে না। দজ্জালের সঙ্গে থাকবে আগুন ও পানি। কোনো মুমিন যখন তাকে রব বলতে অস্বীকার করবে, তখন সে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবে, কিন্তু তাতে ওই মুমিন ব্যক্তি মহাশান্তি লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি তাকে রব বলে মানবে, তাকে সে তার পানির মধ্যে নিক্ষেপ করবে। কিন্তু তাতে সে জ্বলন্ত আগুনে পুড়তে থাকবে। দজ্জালকে আল্লাহ এই ক্ষমতা দেবেন যে হত্যা করার পর তাকে সে একবার মাত্র পুনর্জীবিত করতে পারবে। পুনর্জীবিত হওয়ার পর দজ্জাল তাকে আর দ্বিতীয়বার ...

তুর পাহাড় কোথায় অবস্থিত

ছবি
  তুর পাহাড় ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নবী মুসা (আ.)-এর সঙ্গে কথা বলেছেন। পবিত্র কোরআনে এই পাহাড়কে ‘তুর সিনিন’ বা ‘আত-তুর’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ভূগোল, ধর্মীয় তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক প্রমাণ ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি—তিন ধর্মেই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ধর্মীয় ইতিহাসে তুর পাহাড় তুর পাহাড়কে ইসলামের পাশাপাশি খ্রিষ্টান ও ইহুদিধর্মেও পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, এখানেই নবী মুসা (আ.) তাওরাত গ্রহণ করেছিলেন। খ্রিষ্টানদের মতে, এখানে নবী মুসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং পরে ‘দশ আদেশ’ লাভ করেছিলেন। (এক্সোডাস ১৯-২০, পুরাতন নিয়ম, বাইবেল) পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.)-কে এই পাহাড়ে আহ্বান করেছিলেন। মুসা (আ.) তখন বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে দেখা দিন, আমি আপনাকে দেখব।’ তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে কখনো দেখবে না। বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৪৩)হাদিস ও তাফসির অনুযায়ী, মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে ৪০ দিন অবস্থান করেছিলেন, যাকে ‘আইয়ামুল আরবাইন’ বলা হয়। সেখানে তিনি রোজা রেখেছিলেন, তাওরাতপ্রাপ্তির প...

ঐক্যই মুসলিম উম্মাহর সৌন্দর্য

ছবি
  মুসলিম উম্মাহর জন্য ঐক্য একটি ঐশী উপহার, যা আমাদের শক্তির উৎস এবং আধ্যাত্মিক ও সামাজিক সংহতির ভিত্তি। এ ঐক্য শুধু মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি মানবতার ভিত্তিতে অমুসলিমদের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তোলে। একজন মুসলিম তাঁর ভাই-বোনদের দুঃখে যেমন ব্যথিত হন, তেমনি অন্যদের দুর্দশাতেও তাঁদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা উচিত। বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে এ ঐক্যের গুরুত্ব আরও বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। মুসলিম ঐক্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এর উত্তর সহজ, ঐক্যই আমাদের শক্তি। একটি সম্মিলিত উম্মাহ একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যা ইসলামের শত্রুদের জন্য ভয়ের কারণ। ঐক্যের তাৎপর্য মুসলিম ঐক্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এর উত্তর সহজ, ঐক্যই আমাদের শক্তি। একটি সম্মিলিত উম্মাহ একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যা ইসলামের শত্রুদের জন্য ভয়ের কারণ। ঐক্যের মাধ্যমে আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা, ভালোবাসা ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারি। এ ঐক্য আমাদের বিশ্বমঞ্চে কণ্ঠস্বর দেয় এবং শত্রুদের হাতে আমাদের দুর্বলতা রোধ করে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ অনেক ক্ষেত্রে শত্রুদের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে। কারণ, আমরা বিভক্ত...

ইসলামে ‘নেয়ামত’ অর্থ কী

ছবি
  নেয়ামত’ শব্দটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি। সুস্বাদু খাবার, আর্থিক স্বচ্ছলতা, স্বাস্থ্য, সন্তান—এসবকে নেয়ামত বলা হয়। কিন্তু ইসলামের আলোকে নেয়ামতের অর্থ এর থেকেও বিস্তৃত। নেয়ামত শুধু ভোগ্যপণ্য নয়; বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের ওপর অর্পিত প্রতিটি অনুগ্রহ, দয়া ও সুযোগই হলো নেয়ামত। নেয়ামতের ভাষাগত অর্থ নেয়ামত শব্দটি এসেছে আরবি “নি’মাহ” থেকে। এর অর্থ, কল্যাণ, দয়া, অনুগ্রহ, উপকারিতা। অর্থাৎ, নেয়ামত মানে এমন সব কিছু যা মানুষের জন্য কল্যাণকর এবং যা আল্লাহর দান ছাড়া সম্ভব নয়। কোরআনে নেয়ামতের উল্লেখ কোরআনে বহু স্থানে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ১. “আর তোমাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন—বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয়ভাবেই।” (সুরা লুকমান, আয়াত: ২০) ২. “যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গুনতে থাকো, তবে তার হিসাব শেষ করতে পারবে না।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৪) এ থেকে বোঝা যায়, নেয়ামতের সংখ্যা সীমাহীন, যা মানুষ কখনো পূর্ণরূপে গুনতে পারবে না। মহানবী (সা.)-এর বাণীতে নেয়ামত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “দুইটি নেয়ামত আছে, যার ব্যাপারে অনেক মানুষ ধোঁকায় থাকে—সুস্থতা ও অবসর সময়।” (সহিহ ব...

সন্দেহের এই যুগে সমাজে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার ৫ উপায়

ছবি
  একটা সময় ছিল, যখন গ্রামের বাড়িগুলোর দরজা খোলা থাকত। প্রতিবেশীরা একে অপরের বাড়িতে যেত, গল্প করত, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিত। মুখে কথাই ছিল তখন অটুট প্রতিশ্রুতি, যেন একটা অলিখিত চুক্তি। এই ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ সমাজকে চলতে সাহায্য করত। বিশ্বাস ছিল তখন সমাজ-ইঞ্জিনের জ্বালানি শক্তি। কিন্তু সময় বদলেছে। শহর বড় হয়েছে, জীবন জটিল হয়েছে। মানুষের শরীর কাছাকাছি এলেও মনের দূরত্ব বেড়েছে। ছলনা আর ভাঙা প্রতিশ্রুতির গল্পে সেই বিশ্বাসের জাল ছিঁড়তে শুরু করেছে। আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে ‘সন্দেহের সংস্কৃতি’—যা কখনো কখনো যুক্তিসঙ্গত হলেও সমাজের গতিকে বারবার আটকে দেয়। অতীতের জন্য শুধু আফসোস নয়, বরং সাহস নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। আমাদের সেই পুরনো ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ থেকে এগিয়ে যেতে হবে ‘সচেতন বিশ্বাস’-এর দিকে। তাহলে কী করব? অতীতের জন্য শুধু আফসোস নয়, বরং সাহস নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। আমাদের সেই পুরনো ‘স্বাভাবিক বিশ্বাস’ থেকে এগিয়ে যেতে হবে ‘সচেতন বিশ্বাস’-এর দিকে। এই নতুন বিশ্বাস হুট করে আসবে না। এটি আমাদের নিজেদের হাতে গড়তে হবে, সচেতনভাবে। এর জন্য দরকার একটা নতুন সামাজিক চুক্তি—যার নিয়ম থাককে স্পষ...