পোস্টগুলি

নামাজ: দাসের মহিমা

ছবি
  নামাজ পড়া খুব সহজ একটি কাজ। গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নেই, অর্থ ব্যয়ের ভয় নেই। একজনের নামাজের জন্য মাত্র কয়েক ফুট জায়গার দরকার হয়, জায়নামাজেরও দরকার নেই। দরকার পবিত্র জায়গা, তবে অপবিত্র জায়গার চেয়ে পবিত্র জায়গাই আমাদের থাকে বেশি। নামাজ ইসলামের একেবারে প্রাথমিক একটি ইবাদত। ইবাদত অর্থ বন্দেগি, মানের বান্দার কাজ। বান্দা মানে গোলাম, দাস। নিজেকে মুসলমান মেনে নেওয়ার অর্থ হলো, আল্লাহর বান্দা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া। নিজেকে আল্লাহর দাস ভাবা। নামাজ পড়া মানে এই দাসত্বকে দৈহিক বিভিন্ন ভঙ্গিমায় প্রকাশ করা। মুজিব পরদেশীর গানে আছে, ‘হইতাম যদি দেশেরও দেশি, ওই চরণে হইতাম দাসী গো।/ আমি দাসী হইয়া সঙ্গে যাইতাম গো, বন্ধু, শুনতাম না কারও মানা।’ এমন বহু গান-কবিতায় এবং বহু বাস্তব ও পরাবাস্তব গল্পেও আমরা প্রিয়জন-প্রেয়সীর দাসানুদাস হওয়ার আকুতির কথা শুনি। তো প্রেমের মোহে মানুষ যেখানে তুচ্ছ মানুষের দাসী হতে রাজি, সেখানে মহান প্রভু, যাকে ভালোবাসা শুধু বিবেকের দাবি বলে জটিল করা যায় না, বরং ভালোবাসাটা স্বভাবতই এসে থাকে, তার দাসত্ব বললে কঠিন মনে হবে কেন?এই যে ধরুন, আজ দুপুরে মসজিদে নামাজে দাঁড়িয়েছি, জানালা গলে রোদ আস...

নবীজি (সা.)-এর হাসি

ছবি
  হাসি ও আনন্দ মানুষের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে দেয়। নবীজির (সা.)হাসিখুশির ভঙ্গিও ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের খুবই জরুরি অনুষঙ্গ। এ সম্পর্কিত হাদিসগুলো খণ্ডিত হলেও একেবারে অপ্রতুল নয়। মহানবী (সা.)-এর আনন্দ তাঁর চেহারায় প্রকাশ পেতো। সাহাবিদের অনেকেই তাঁর আনন্দের টুকরো টুকরো ছবি তুলে ধরেছেন।   আনন্দের প্রকাশ মহানবী (সা.)-এর আনন্দ প্রকাশের ধরন নিয়ে দুটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। সিরাত পাঠকমাত্রই কাব ইবনে মালেকের (রা.) ঘটনা সম্পর্কে জানেন। তাবুক যুদ্ধে শরিক না থাকায় তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। পরে যখন আল্লাহ তাঁর তাওবা কবুল করেন। সে সময়ে নবীজির অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি নিজেই বলেছেন, আমি নবীজিকে সালাম দিলাম, আনন্দে তাঁর চেহারা ঝলমল করছিল। তিনি বললেন, ইতোমধ্যে তোমার কেটে যাওয়া জীবনের ওপর সুসংবাদ গ্রহণ করো...। (বুখারি, হাদিস: ৪৪১৮) কাব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আনন্দিত হলে তাঁর চেহারা এমন আলোকিত হয় মনে হয় যেন এক টুকরো দীপ্তিমান চাঁদ। দেখামাত্রই আমরা তাঁর আনন্দ বুঝতে পারতাম। (বুখারি, হাদিস: ৪১৪১) ইফকের ঘটনার পরে আয়েশা (রা.) নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবীজির এমন...

মৃত্যুর মুখে এক বন্দি সাহাবি

ছবি
  হজরত আমর ইবনে আবু সুফিয়ান (রা. )–এর বরাতে একটি হাদিসের বর্ণনা আছে। একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) দশজন লোককে গোয়েন্দা হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য পাঠালেন। আসিম ইবনে সাবিত আনসারি (রা.)–কে তিনি সেই গোয়েন্দা দলের প্রধান নিয়োগ করলেন। আসিম (রা.) ছিলেন উমর ইবনে খাত্তাবের নানা। তাঁরা মদিনা ও মক্কার মাঝামাঝি হাদাত নামে একটি জায়গায় পৌঁছালেন। লেহইয়ান নামে হুযায়েল গোত্রের একটি শাখার লোকেরা দুই শ তিরন্দাজ নিয়ে তাঁদের সন্ধানে বের হয়। রাসুল (সা.)–এর গোয়েন্দারা একটা জায়গায় মদিনা থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা খেজুর খেয়েছিলেন। শত্রুরা সেই জায়গায় লল, এটা তো ইয়াস্রিবের (মদিনার) খেজুর। নানা চিহ্ন দেখে দেখে ওরা তাঁদের পিছু নিল। আসিম আর তাঁর সঙ্গীরা উঁচু একটি স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। তাঁদের ওরা দেখতে পেয়ে বলল, তোমরা নেমে এসে স্বেচ্ছায় বন্দী হও। তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা কাউকে হত্যা করব না। আসিম ইবনে সাবিত (রা.) বললেন, ‘কাফিরদের কথায় তো আমি নিচে নামব না। হে আল্লাহ, আমাদের পক্ষ থেকে আপনার নবীকে সংবাদ পৌঁছে দিন।’ কাফিররা ততক্ষণে তাঁদের দিকে তির ছুড়তে শুরু করেছে। তিরবিদ্ধ হয়ে আসিম (রা.)–সহ সাতজন মারাও গেলেন। বাকি...

মহানবী (সা.) এবং এক ইহুদি ছেলের গল্প

ছবি
  সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন যারা, তাদের মধ্যে আনাস ইবনে মালিক (রা.) অন্যতম। তিনি নাজ্জার গোত্রের জুনদুব ইবন আমিরের বংশধর। এই জুনদুব হলেন নবীজির (সা.) দাদা আবদুল মুত্তালিবের মা সালামার ভাই। সেই হিসেবে তিনি ছিলেন মদিনায় নবীজির (সা.) আপনজন। তার বয়স যখন দশ, তখন তার মা উম্মু সুলাইম তাকে নবীজির ঘরের কাজে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে রেখে যান। তিনি নবীজি (সা.)কে অজুর পানি এগিয়ে দিতেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ৩/৩৯৫; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,১৮৫ ও ২,৭৬৮) এই সময় নবীজির (সা.)ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে একটি ইহুদি ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মদিনার অধিবাসীদের অর্ধেকেরও বেশি তখন ইহুদি। ছেলেটিও ছিল সাধারণ ইহুদি পরিবারের একজন। জীবিকার তাগিদে সে একটি কাজ খুঁজছিল, যা মাধ্যমে পরিবারকে সাহায্য করা যায়। সে মদিনার বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করছিল। ছোটখাটো কাজ, ফুটফরমাশ খাটা বলতে যা বোঝায়। অল্প আয়ের সন্তুষ্ট থাকত সে। (ইসলাম ওয়েব, শামায়িলু রসুলিল্লাহ, ১,৫৪,৪৫৭) শেষে ছেলেটি মহানবী (সা.)-র বাড়িতে কাজ করার সুযোগ পায়। আনাস (রা.) বলেন, সে নবীজির (সা.) জুতা ঠিক করে দিত, অজুর পানি এগিয়ে দিত এবং অন্যান্য কাজ করত। (সহিহ বুখারি, হাদ...

সবচাইতে ক্ষতিকর মানসিক অবস্থা

ছবি
  আপনি যদি সত্যি সত্যিই নিজের অবস্থা নিয়ে চিন্তাবোধ করেন, আর ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন যে “আমার পাপগুলো এতো বেশি পরিমাণে এবং এতো বড় বড় যে আমার কোন আশাই নেই, আমার জন্যে কোন ক্ষমা নেই।” তবে এই সময়েই আমাদের আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লার হেদায়েত প্রয়োজন। কারণ খুবই কষ্টকর আর দুঃখজনক অবস্থা এটি। দেখুন, সবচাইতে কষ্টকর আর সবচাইতে ক্ষতিকর মানসিক অবস্থা হলো একদম নিরাশ হয়ে যাওয়া। যখন কেউ নিজের আত্মার একেবারে নিম্নতর অবস্থায় চলে যায় তখন সে মানুষের মনে আর কোন প্রকার আশারই অস্তিত্ব থাকে না। কিন্তু আল্লাহ আযযা ওয়াজাল আমাদের আশাহীন করে রাখেননি। আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের অনেক আগেই বলে গিয়েছেন, “কুল্লু বনি আদম খাত্তাউন!” প্রত্যেক আদম সন্তান ভুল করে। এরপর তিনি বলেন, “ওয়া খাইরুল খাত্তাইন আত তাওয়াবুন।” ভুলকারী মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো যারা তাওবা করে। যারা আল্লাহর দিকে ফিরে এসে ক্ষমা চায়। অন্যভাবে বললে, আল্লাহ এই দরজা আমাদের জন্য খুলে রেখেছেন। যতো পাপই আমরা করি না কেন, আল্লাহ আমাদের পুরো আমলনামা মুছে পরিষ্কার করে দিতে রাজি আছেন। যদি আপনি আমি আন্তরিকভাবেই আল্ল...

পাপীদের জন্যও ক্ষমা পাওয়ার মাস

ছবি
  প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আজকের খুৎবাটা আমার নিজেকে এবং আপনাদের সবাইকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, রমজান মাস শুধু ধার্মিক লোকদের মাস নয়, শুধু নেককার লোকদের মাস নয়, শুধু মুত্তাকী বা সালেহীনদের মাস নয়। এ মাসটি সকল মুসলিমের মাস, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই। এটি এমন প্রত্যেকের মাস যে কালিমা পাঠ করে। এটি নেককারদের মাস এবং এটি তাদের জন্যও বিশেষ মাস যারা নেককার নয়। এটি যেমন আউলিয়া ও মুত্তাকীদের মাস, ঠিক তেমনি এটি পাপীদের জন্যও ক্ষমা পাওয়ার মাস। এটি এমন একটি মাস যা আল্লাহ্ প্রত্যেক মুসলিমকে উপহার দিয়েছেন, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই। হে মুসলিম, যারা দ্বীন থেকে দূরে রয়েছেন, হে মুসলিম, যার হৃদয় অপরাধবোধে জর্জরিত যে, আপনি ইসলামের জীবনবিধান অনুসরণ করছেন না, আপনার বর্তমান জীবনযাত্রাকে রমজান মাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করবেন না। হে মুসলিম, বুঝে নিন যে রমজান আপনার, আমার এবং আমাদের সবার জন্য একটি উপহার, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই। আমার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো, একবার আমি ইউরোপ ভ্রমণ করছিলাম। ইউরোপে এমন কিছু স্থান আছে–আপনারা জানেন হয়তো–যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা অনেক বেশি। ...

ইমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ

ছবি
  আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতে, ইমানের যাবতীয় স্তর বা রোকনের ওপর অন্তরের বিশ্বাস স্থাপন করাই হলো ইমান। মৌখিকভাবে স্বীকারোক্তি দেওয়াও ইমানের শর্ত। বাহ্যিক আমল ইমানের মৌলিক রোকন নয়, তবে ইমানের পূর্ণতার জন্য আবশ্যক। ( শারহুল ফিকহিল আকবর , ইমাম আজম আবু হানিফা, অনুবাদ: এনামুল হক মাসউদ, মাকতাবাতুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৪৬২) আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যেসব মানুষ ইমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তারা জান্নাতবাসী। তারা সর্বদা সেখানে থাকবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮২) অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, আয়াতে উল্লিখিত সৎকর্ম মানে যাবতীয় ভালো কাজসহ আমল-ইবাদত। ইমান মুমিনের সবচেয়ে বড় পরিচয়, শ্রেষ্ঠ অর্জন। ইমান আনার পর তা ভেঙে যাওয়া মানে ইমান নষ্ট হয়ে যাওয়া। ইমান ভেঙে বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তখন আবার তাওবা করে ইসলাম গ্রহণ আবশ্যক হয়ে ওঠে। ইমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো: ১. আল্লাহর সঙ্গে কারও শরিক করা যদি কোনো মুমিন-মুসলমান উপাস্য বা ইলাহ হিসেবে বা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর সঙ্গ...