Posts

Showing posts from April, 2023

অনন্যসুলভ ঈমান

Image
  তাবারানী শরীফের একটি অসাধারণ বর্ণনায় এসেছে "রাসূল (স) একদিন এক বেদুঈনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যখন সে আল্লাহর নিকট দোয়া করছিল..." এখন বেদুইন বলতে আসলে কাদের বুঝায়? সহজভাবে বললে আমাদের সময়কার গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষদের মত। যারা খুবই সিম্পল জীবন যাপন করতেন। তো, রাসূল (স) থামলেন এবং সে কী বলছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন। তিনি শুনতে পেলেন লোকটি বলছে-- “হে একক সত্তা! এই পৃথিবীর চোখ দিয়ে যাকে দেখা সম্ভব নয়, যার মহানুভবতা মানুষের ক্ষুদ্র মস্তিস্কের পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, তিনি যেমন প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য মানুষের পক্ষে সেরূপ প্রশংসা করা সম্ভব নয়, কোনো ঘটনা তাঁকে পরিবর্তন করতে পারে না, তিনি সময় শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় করেন না, তিনি পৃথিবীর সকল পাহাড় পর্বতের একেবারে সঠিক ওজন জানেন, তিনি পৃথিবীর সকল মহাসাগরের একেবারে সঠিক আয়তন জানেন, বৃষ্টির ফোটার একেবারে সঠিক সংখ্যা তিনি অবগত আছেন, তিনি পৃথিবীর সকল গাছের সর্বমোট পাতার একেবারে সঠিক সংখ্যা জানেন, রাত তার অন্ধকারে যা কিছু লুকিয়ে রাখে এবং দিন তার আলোতে যা প্রকাশ করে তার সবই তিনি জানেন, আল্লাহর কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক আকাশ অন্য আকাশ

সুরা ওয়াকিয়ার সারকথা

Image
  সুরা ওয়াকিয়া পবিত্র কোরআনের ৫৬ তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর ৩ রুকু, ৯৬ আয়াত। ওয়াকিয়া মানে মহাঘটনা। এই সুরায় আল্লাহর অসীম ক্ষমতা, কিয়ামতের ভয়াবহতা, ভূমিকম্প, বজ্রপাত, ঝড়ঝঞ্ঝা, শেষ বিচার, জান্নাতের নিয়ামত এবং জাহান্নামের শাস্তির কথা রয়েছে। এ সুরায় বলা হয়েছে কিয়ামতের দিন মানুষের বিভিন্ন অবস্থা ও অবস্থানের কথা। বলা হয়েছে যে কিয়ামতের দিন পৃথিবী প্রকম্পিত হবে এবং পাহাড় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। শেষ বিচারের দিন মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হবে—১. আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তরা, ২. ডান হাতের সঙ্গীরা, এবং ৩. বাম হাতের সঙ্গীরা। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.)–এর দেওয়া বর্ণনা আছে যে, ‘প্রতি রাতে যে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে, দারিদ্র্য কখনো তাকে স্পর্শ করবে না।’ এ জন্য এই সুরাটিকে সুরা গনি বা ধন লাভের সুরা-ও বলা হয়। সুরা ওয়াকিয়ায় আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা ভাগ হয়ে যাবে তিন ভাগে। তখন ডান হাতের সঙ্গীরা? কী হবে ডান হাতের সঙ্গীদের? আর বাম হাতের সঙ্গীরা? কী হবে বাম হাতের সঙ্গীদের? আর যারা আগে যাবে তারা তো আগেই থাকবে ।’ কিয়ামতে মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হবে: সৌভাগ্যবান, দুর্ভাগা, ভালো কাজে অগ্রগামীরা। ভালো কাজে অগ্রগামী

জুওয়াইরিয়া (রা.)

Image
  প্রথমে তাঁর নাম ছিল বাররা। বিয়ের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) সেটি পাল্টে তাঁর নাম রাখেন জুওয়াইরিয়া। বাররা নামটিতে আত্মপ্রশান্তির ভাব থাকায় রাসুল (সা.) তাতে অশুভ ও অকল্যাণের ইঙ্গিত দেখতে পেয়েছিলেন। তাই তিনি সেটি পছন্দ করেননি। (মুসলিম, হাদিস: ২,১২০) একদিন সকালে রাসুল (সা.) দেখতে পেলেন জুওয়াইরিয়া (রা.) মসজিদে বসে দোয়া করছেন। তিনি চলে গেলেন। দুপুরে এসে তাঁকে একই অবস্থায় পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সব সময় এ অবস্থাতেই থাকো?’ সে অবস্থাতেই তিনি জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাকে এর চেয়েও ভালো কিছু শিখিয়ে দেব, যা তোমার এই নফল ইবাদতের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর পর তিনি তাঁকে এই দোয়াটি শিখিয়ে দেন: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিজা নাফসিহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’ অর্থাৎ: ‘আমি আল্লাহ–তায়ালার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি, তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি সন্তুষ্ট হওয়ার পরিমাণ, তাঁর আরশের ওজন সমপরিমাণ, তার কথা লিপিবদ্ধ করার কালি পরিমাণ।’(মুসলিম, হাদিস: ৭.০৮৮) জুওয়াইরিয়া (রা.) ছিলেন আরবের দুর্ধর্ষ বনু মুসতালিক গোত্রের মেয়ে, যাঁরা

প্রকাশ্যে প্রথম কোরআন তিলাওয়াত

Image
  মহানবী (সা.) হিজরতের আগে মক্কায় মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অসম্ভব কঠিন এক পরিস্থিতি। তাকে উপেক্ষা করে মক্কার বায়তুল্লাহ প্রাঙ্গণে মহানবী (সা.)–এর সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কাবা শরিফে মাকামে ইবরাহিমের কাছে দাঁড়িয়ে উচচ স্বরে সুরা আর রহমানের কিছু অংশ তিলাওয়াত করেন। কুরাইশ নেতারা তা শুনে হতবাক হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা তাঁর দিকে ছুটে গিয়ে নির্দয়ভাবে তাঁর মুখে আঘাত করতে থাকে। নির্যাতনের পরও তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর শত্রুরা আমার কাছে খুবই তুচ্ছ। আমি আবারও গিয়ে তাদের সামনে কোরআন তিলাওয়াত করব। তিনিই প্রথম মুসলমান যিনি প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করেছিলেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–র আবেগময় কোরআন তিলাওয়াতের প্রশংসা করে রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআর যেভাবে নাজিল হয়েছে, কেউ যদি সে অনুসারে সুন্দরভাবে তা তিলাওয়াত করে আনন্দ পেতে চায়, তাহলে সে যেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর মতো করে কোরআন তিলাওয়াত করে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–র জন্ম মক্কায়। খুব অল্প বয়সে ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন তিনি। ইসলাম গ্রহণের তাল

অন্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)

Image
  একজন সাহাবিকে নিয়ে কোরআনে ১৬টি আয়াত নাজিল হয়েছে। সেই সৌভাগ্যবান সাহাবির নাম আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)। ঘটনাটা এ রকম। একদিন রাসুল (সা.) কুরাইশ গোত্রের কয়েকজন নেতাকে ইসলাম সম্পর্কে বলছিলেন। সে সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) এসে হাজির হলেন। তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তার থেকে কিছু আমাকে শিখিয়ে দেন।’ রাসুল (সা.) একটু বিরক্ত বোধ করলেন। তবে তাঁর কথায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে কুরাইশ নেতাদের সঙ্গেই কথা চালিয়ে গেলেন। কুরাইশ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে রাসুল (সা.) যখন বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই আল্লাহ ওহি নাজিল করলেন। আল কোরআনে আছে, ‘সে (মুহাম্মদ) ভ্রু কুঁচকে মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার কাছে এক অন্ধ এসেছিল। তুমি ওর সম্পর্কে কী জান? সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো বা উপদেশ নিত কিংবা উপদেশ থেকে উপকার পেত? যে নিজেকে বড় ভাবে, তার প্রতি বরং তোমার মনোযোগ! যদি সে নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে, তবে তাতে তোমার কোনো দোষ হতো না। অথচ যে কিনা তোমার কাছে ছুটে এল, আর এল ভয়ে ভয়ে, তাকে তুমি অবজ্ঞা করলে! কক্ষনো (তুমি এমন করবে) না, এ এক উপদেশবাণী, যার ইচ্ছ

মুসলিম যুবককে পাঁচটি পরামর্শ

Image
  The Thinking Muslim: একজন মুসলিম যুবককে যদি আপনি পাঁচটি পরামর্শ দিতে চান, কি কি হবে সেগুলো? হামজা জর্জিস: প্রথম যে বিষয়টি আমি বলবো, আকিদা। আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। প্রায়োগিক আকিদা সম্পর্কে জানুন। কি রকম সেটা? একটা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। এলজিবিটিকিউর প্রচারকেরা মনে করে তারা তাদের শরীরের মালিক; তাই তারা তাদের শরীর নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। কিন্তু ইসলামী আকিদা অনুযায়ী আমরা বিশ্বাস করি- আল্লাহ হলেন রব। তিনি সবকিছুর মালিক। তিনি আমাদের শরীরেরও মালিক। তাই আমরা আমাদের শরীর নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি না। এ জন্যে আমাদের যুবকদের প্রায়োগিক আকিদা সম্পর্কে শিখতে হবে এবং আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যখন শিখবেন আল্লাহ হলেন আর-রাহমান, যিনি অসীম দয়ালু; তখন আমাকেও একজন মানুষের সামর্থ অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব দয়ালু হতে হবে। আল্লাহ হলেন আল-মুতাকাব্বির। অর্থাৎ তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং গৌরবান্বিত। আমি যেহেতু তাঁর একজন দাস মাত্র, তাই আমাকে এখন তাঁর সামনে একেবারে বিনম্র এবং বিনয়ী হতে যেতে হবে। এভাবে আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীগুলোর আলোকে নিজ জীবনকে সৌন্দর্যম

সুরা জিনের সারকথা

Image
  সুরা জিন পবিত্র কোরআনের ৭২তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর ২ রুকু, ২৮ আয়াত। মুহাম্মদ (সা.)-এর সামনে উপস্থিত একদল জিন পবিত্র কোরআন শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সুরাটিতে জিন জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরার কেন্দ্রীয় বিষয় এই বার্তা দেওয়া যে মানুষের মতো জিনেরাও শরিয়ত পালনে শামিল রয়েছে। এ সুরায় বলা হয়েছে, জিনেরা মানুষের মতোই বিভিন্ন বিধান পালনের জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে বিশ্বাসী–অবিশ্বাসী, সৎ–অসৎ—সবই আছে। জিনদের একটি দল কোরআন শুনেছে এবং এর ফলে প্রভাবিত হয়েছে। রাসুল (সা.)–এর নবুয়ত পাওয়ার পর জিনেরা বিশ্বজগতের ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে। একসময় তারা আসমান পর্যন্ত যেতে পারত, কোনো বাধা দেওয়া হতো না। অথচ তারা দেখতে পেল, আসমানে যাওয়ার চেষ্টা করলে উল্কাপিণ্ড দিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হয়। জিনেরা এ পরিবর্তনের কারণ জানতে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। এর রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তাদের একটি দল বিশ্ব পরিভ্রমণে বের হয়। একদিন রাসুল (সা.) কিছু সাহাবির সঙ্গে তায়েফের পথে উকাজ বাজারে যান। নাখলা নামে একটি স্থানে তিনি ফজর নামাজ আদায় করছিলেন। জিনদের সেই দলটি তখন সে পথ দিয়ে যাচ্

হজরত আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রা.)

Image
  আল্লাহর নির্দেশে নবুয়তের ১৩তম বছরে রাসুল (সা.) এবং মক্কার মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করেন। মদিনার মানুষ রাসুল (সা.)-এর আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন। আনসারদের একটি দল নিয়মিত প্রতিদিন সকালে মদিনার চার-পাঁচ মাইল দূরে ‘হাররা’ নামক স্থানে চলে যেতেন। হজরত আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রা.) এ দলের একজন সদস্য ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্ভাব্য আগমন পথের দিকে তাকিয়ে দলটি দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করত। একদিন তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন, এমন সময় এক ইহুদি বহুদূর থেকে রাসুল (সা.)-কে দেখতে পেয়ে তাঁদের খবর দেয়। আনসাররা মহানবী (সা.)-কে স্বাগত জানাতে দ্রুত ছুটে যান। মদিনার উপকণ্ঠে কুবা নামে একটি জায়গায় কয়েক দিন থাকার পর রাসুল (সা.) মদিনার মূল শহরের দিকে রওনা হলেন। রাস্তার দুই পাশে মদিনাবাসী লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। মদিনার শিশু-কিশোরেরা নাত গেয়ে রাসুল (সা.)-কে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। আনসার সাহাবিরা প্রত্যেকেই চাইছিলেন রাসুল (সা.)-কে আতিথেয়তা দিতে। সবাই তাঁকে তাঁদের বাড়িতে মেহমান হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর বাহন মাদি উটের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের বারবার বলছিলেন, ‘তোমরা ওর পথ

শয়তানের মন্দ প্ররোচনা থেকে বাঁচতে

Image
  শয়তানের যেকোনো মন্দ প্ররোচনা নিজেকে রক্ষা করতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। তিনিই আমাদের পরম রক্ষাকর্তা। এ কারণে পড়তে হবে, ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতুয়ানির রাজিম; মিনহামজিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফছিহি।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা ও ফুৎকার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। বাড়িতে নফল নামাজ পড়া মোস্তাহাব। তবে মসজিদেও পড়া জায়েজ। বাড়িতে প্রবেশ করার সময় দোয়া পড়লে এবং সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পড়লে বাড়ি মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকে। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে মূল্যবান মালামাল সিন্দুক বা সংরক্ষিত করে তার মুখ বন্ধ করা ভালো। হাদিসে আছে, ‘যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘরে ঢোকার ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান তার সঙ্গীদের বলে, তোমাদের রাত কাটানোর কোনো জায়গা নেই; তোমাদের রাতের কোনো খাবারও নেই।’ (মুসলিম) জিন ও শয়তানের কাছ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাতের বেলা তোমরা পাত্রগুলো ঢেকে দাও; মশকগুলোর (চামড়ার তৈরি পানি সঞ্চিত রাখার পাত্র) মুখ আটকে রাখো; ঘরের দরজা বন্ধ করো এবং আলো নিভিয়ে দাও। শয়তান মশকের বাঁধন খুলতে পারে

রাসুল (সা.)–এর দেওয়া সর্বশেষ নবীর উপমা

Image
  হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.)-এর বরাতে এই হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, আমি আর আমার আগের নবীদের অবস্থা অনেকটা এমন: যেন কোনো এক লোক একটা ঘর বানাল; ঘরটি সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, অথচ একপাশে একটা ইটের জায়গা খালি থেকে গেল। লোকজন এর চারপাশে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, ওই ফাঁকা জায়গার ইটটা লাগানো হলো না কেন? নবী (সা.) বলেন, আমিই সে ইট। আমিই সর্বশেষ নবী। সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ৩,৫৩৫ নবীজি (সা.)-এর মুজিজা হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর বরাতে এ হাদিসের বর্ণনা আছে। (খন্দকের যুদ্ধে) যখন পরিখা খনন করা হচ্ছে, তখন আমি নবী (সা.)-কে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার কাছে কি কিছু আছে? রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দারুণ ক্ষুধার্ত দেখতে পেলাম। সে একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিল। আমার বাড়িতে একটা বকরির বাচ্চা ছিল। আমি সেটা জবাই করলাম। আর সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। আমার কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সে-ও তার কাজ শেষ করল। গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে চললাম। (লোকের তুলনায় খাবার অনেক কম ছিল বলে

সুরা মাউনে মানুষদের মধ্যে দুটি দলের কথা

Image
  সুরা মাউন (নিত্যপ্রয়োজনের সামগ্রী) পবিত্র কোরআনের ১০৭ তম সুরা। ১ রুকু, ৭ আয়াত। দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা এতিমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়, অভাবগ্রস্তকে অন্নদান করে না, লোক দেখানো নামাজ পড়ে এবং সংসারের ছোটখাটো জিনিস দিয়ে অপরকে সাহায্য করে না। এ সুরায় আল্লাহর হক নামাজ ও বান্দার হকের জাকাত, সদকা, পরোপকারের ব্যাপারে সতর্কীকরণ করা হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) তখন মক্কায় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন না। তাঁর মুখ থেকে তৎকালীন নেতাদের এই সব দুর্বলতা ও অবিচারগুলো প্রকাশ করে দিয়ে সমালোচনা করার শিক্ষা আল্লাহ দিয়েছেন। সব যুগের সব অহংকারী, লোক দেখানো ধার্মিক ও মানুষকে যথাযথ সম্মান ও অধিকার না দেওয়া মানুষদের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করায় এই সুরা। প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে ‘তুমি কি দেখেছ তাকে যে ধর্ম (বিচার)-কে অস্বীকার করে’,প্রশ্ন করে আল্লাহ নিজেই উত্তর দিয়েছেন। এখানে ‘ইউকাযযিবু’ মানে যে জেনে বুঝে অস্বীকার করার পাশাপাশি এটাকে মিথ্যা হিসাবে প্রচার করে । দ্বিতীয় আয়াতে আছে ‘যে এতিমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়’ সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও করুণা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি এতিমের প্রতি তার খারাপ ব্যবহারের স্বভাবটি তুলে ধরা হ

হজরত যায়িদ ইবনে সাবিত (রা.)

Image
  রাসুল (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, হজরত যায়িদ ইবনে সাবিত (রা.)-এর বয়স তখন ১১ বছর। সেই বালক বয়সে তিনি ১৭টি সুরা মুখস্থ বলতে পারতেন। লোকেরা তাঁকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রথম পরিচয়ের দিন তিনি রাসুল (সা.)-কে সুরা কাফ তিলাওয়াত করে শোনান। রাসুল (সা.) তিলাওয়াত শুনে অসম্ভব খুশি হয়েছিলেন। রাসুল (সা.)-এর অন্যতম সাহাবি যায়িদ (রা.) মদিনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের সদস্য ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি কোরআন পড়তে শুরু করেন। মানুষ তাঁকে খুব সম্মানের দৃষ্টিতে দেখত। মেধাবী ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। বদর যুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৩ বছর। রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে তিনি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। যুদ্ধ করার মতো বয়স না হওয়ায় রাসুল (সা.) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে ফেরত পাঠান। ওহুদ যুদ্ধেও বয়স কম হওয়ার কারণে তিনি যাওয়ার অনুমতি পাননি। খন্দকের যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। যায়িদ (রা.)-এর পুরো জীবন ব্যয় হয়েছিল ভালো কাজে। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর সচিব ও ওহি লেখক। তাই তাঁকে ‘কাতিবুল ওহি’ বা ওহি লেখক বলা হয়। ওহি নাজিল হওয়ার পর যায়িদ (রা.) কলম, দোয়াত

রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার কারণ

Image
  সুরা মুলক পবিত্র কোরআনের ৬৭তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর ২ রুকু, ৩০ আয়াত। আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী এবং সর্বশক্তিমান। তিনি মানুষকে দিয়েছেন দেখার ও শোনার শক্তি ও বিবেক। অথচ তারা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এ সুরা পাঠের ফজিলত সীমাহীন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনে এমন একটি সুরা আছে, যার আয়াত ৩০টি। এই সুরা যে পাঠ করবে, সেই ব্যক্তির জন্য সুরাটি সুপারিশ করবে এবং তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক)। (সুনানে আত-তিরমিজি, ২৮৯১) প্রতি রাতের যেকোনো সময় সুরা মুলক তিলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তিরমিজি শরিফের ২,৮৯২ নম্বর হাদিস অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরা আস-সাজদা ও সুরা মুলক তিলাওয়াত না করে কোনো দিন ঘুমাতেন না। তার মানে এই নয় যে সুরাটি দিনে পড়া যাবে না। যেকোনো সময়ই পড়া যাবে, তবে রাতে বিশেষ জিকির হিসেবে এ সুরা পড়া উত্তম। সুরাটি নামাজের সঙ্গে পড়াও ভালো। মুখস্থ না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়। সুরা মুলকের ছয়টি ভাগ: প্রথম ভাগ ১ থেকে ৪ আয়াত—এ অংশে আছে আল্লাহর ক্ষমতার বর্ণনা। দ্বিতীয় ভাগ ৫ থেকে ১৫ আয়াত—এ অংশে জাহা