Posts

Showing posts from December, 2019

কবিরা গুনাহের পরিচয় ও পরিণতি

Image
কবিরা গুনাহের পরিচয় ও পরিণতি শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী কবিরা অর্থ বড়, ছগিরা অর্থ ছোট। ছগিরা গুনাহ মানে ছোট পাপ, কবিরা গুনাহ মানে বড় পাপ। ছগিরার বহুবচন ছগায়ের, কবিরার বহুবচন কাবায়ের। পাপের আরবি হলো মাছিয়াত, ইছম, তুগইয়ান, জুরম, ফিসক ইত্যাদি। ফারসি, উর্দু ও হিন্দিতে গুনাহ, খতা, পাপ, বদ, বদী ইত্যাদি।  পাপ হলো শরিয়তের আদেশ–নিষেধ লঙ্ঘন করা, নির্দেশ অবহেলা করা ও নিষেধ অমান্য করা। পাপ বা অপরাধ ছোট হোক বা বড় হোক, তা সব সময় বর্জনীয়। কোনো ছোট পাপকে হালকা মনে করাও একটি কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ। মাত্রাভেদে ও পরিণতির ভিত্তিতে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পাপকে ছগিরা ও কবিরা দুই ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো কুফর ও শিরক। কুফর মানে হলো আড়াল করা, গোপন করা, লুকানো এবং কৃতঘ্নতা বা অকৃতজ্ঞতা। পরিভাষায় কুফর হলো আল্লাহ বা স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করা। এটা সবচেয়ে বড় গুনাহ। এই প্রকার কুফরের কোনো ক্ষমা নেই। শিরক অর্থ হলো আল্লাহর সঙ্গে সত্তা, গুণ ও ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করা। পবিত্র কোরআনে মুশরিকদেরও কাফির বলে সম্বোধন করা হয়েছে। যেমন ‘(হে রাসুল সা.!) আপনি বলুন “

জীবনব্যাপী পরকালের প্রস্তুতি

Image
জীবনব্যাপী পরকালের প্রস্তুতি শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী আল্লাহ তাআলা সব মানবাত্মা সৃষ্টি করে রুহের জগতে রেখেছিলেন। পর্যায়ক্রমে দুনিয়াতে পাঠাচ্ছেন। মাতৃগর্ভে অবস্থান ও ভূমিষ্ঠ হয়ে দুনিয়াতে আগমন এবং তারপর মৃত্যুবরণ। এই সময়টুকু দুনিয়ার জীবন। দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি হলো মৃত্যু। এর মাধ্যমে আমরা দুনিয়ার জীবনের নির্ধারিত আয়ু শেষ করে বারজাখ জীবনে প্রবেশ করি, যা সবার জন্যই অবধারিত। জীবনমাত্রই মরণশীল। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মাউত’। অর্থাৎ প্রত্যেক সত্তাই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)। কবর মানে সমাধি। ইসলামি বিধানমতে, মৃত ব্যক্তির দেহ দাফন বা সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত তথা হাশর নশর ও বিচার ফয়সালার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে বারজাখ বা অন্তর্বর্তী সময় বলা হয়। বারজাখ জীবনকে সাধারণভাবে কবর জীবন বলা হয়ে থাকে। কারণ, স্বাভাবিক অবস্থায় মৃতদেহ বা লাশ কবর দেওয়া হয়ে থাকে। যাদের বিশেষ কোনো কারণে কবর বা দাফন করা হবে না, তাদেরও বারজাখ জীবন একই রকম হবে। যদিও কবর বারজাখের সমার্থক নয়, তবু বারজাখ জীবন বোঝাতে কবর শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

মানবজীবনে প্রকৃত সফলতা ও চূড়ান্ত বিজয়

Image
মানবজীবনে প্রকৃত সফলতা ও চূড়ান্ত বিজয় শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী মানবজীবন এক অনন্ত সফর। রুহের জগৎ থেকে এর পরিভ্রমণের সূচনা, দুনিয়া তার কর্মক্ষেত্র, বারজাখ (কবরজীবন) হলো অন্তর্বর্তী সময় এবং আখিরাত হলো এর ফল লাভের ও উপভোগের স্থান। মানুষের কর্ম ও তার ফলাফল এবং পরিণতির ওপর নির্ভর করে বিজয় ও পরাজয়। বিজয় যখন সফল ও সার্থক হবে, তখনই তা যথার্থ হবে; বিজয় যদি বিফল হয়, তবে সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমে বলেন: ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মোমিনগণ—যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও নম্র, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে, যারা জাকাত প্রদানে সক্রিয়, যারা নিজেদের সম্ভ্রম সুরক্ষা করে।’ ‘এবং যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে, তারাই অধিকারী হবে (জান্নাত) ফিরদাউসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ১-১১)। বিজয় মানুষকে সুপথে ও কল্যাণ কর্মের সুযোগ করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়, যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে

ইসলামে আইনের শাসন ও সুবিচার

Image
ইসলামে আইনের শাসন ও সুবিচার শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী নিসফ অর্থ সমান অর্ধেক। আর ইনসাফ অর্থ সমান দুই ভাগ করা, বেশি বা কম না করা। আল্লাহ তাআলার একটি নাম হলো ‘আদল’ অর্থাৎ ন্যায়বান, ন্যায়পরায়ণ। আদালত অর্থ ন্যায়ের স্থান। মুমিন জীবনের পূর্ণতার জন্য তাকওয়া বিশেষ শর্ত; তাকওয়ার পরিচায়ক হলো ন্যায়বিচার। মানবজীবনে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অত্যধিক। পবিত্র কোরআন কারিমে প্রথম সুরা ফাতিহার তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলার পরিচয় দেওয়া হয়েছে, ‘তিনি বিচার দিবসের মালিক,’ যা আমরা প্রত্যহ দিবারাত্রি বহুবার পাঠ করে থাকি। সভ্য সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো বিকল্প নেই। সুবিচারপ্রাপ্তি সব নাগরিকের অধিকার এবং ন্যায়বিচার আল্লাহর হুকুম। এটি ফরজ ইবাদত। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে, তোমরা যা করো নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৮)। ন্

মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব

Image
মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান বিশ্ব জগতের দু’টি সত্তা স্র্রষ্টা ও সৃষ্টি। যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তিনি স্রষ্টা। আর বাকি সব তাঁর সৃষ্টি। যিনি সৃষ্টি করেন, তিনিই নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিপালন করেন। সব সৃষ্টি স্র্রষ্টার নিয়ন্ত্রণাধীন। একটি নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে স্রষ্টা সব সৃষ্টিকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। এ নিয়মকে প্রাকৃতিক নিয়ম  বলা হয়। কোনো সৃষ্টিই এ প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে নয়। সব সৃষ্টিকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এ নিয়ম মেনে চলতে হয়। এটিই স্র্রষ্টার বিধান। মানুষ স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি। মানুষের জন্যও স্র্রষ্টার নিয়ম রয়েছে। তবে এ নিয়ম মানার ক্ষেত্রে মানুষের একটি স্বাধীনতা রয়েছে। মানুষ ইচ্ছা করলে এ নিয়ম মেনে চলতে পারে, ইচ্ছা করলে অমান্য করতে পারে। তবে স্র্রষ্টার নিয়ম মানা আর না মানার পরিণাম কখনো এক নয়। নিয়ম মানলে যেমন পুরস্কার রয়েছে, না মানলে তেমনি শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এটিই স্র্রষ্টার বিধান। যেকোনো বিবেচনায় এটা একান্ত ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত। অন্য সব সৃষ্টির নিয়ন্ত্রণের জন্য যে বিধান রয়েছে, সেটাকে বলা হয় প্রাকৃতিক নিয়ম বা বিধান। মানুষের জন্য যে বিধান প্রদত্ত হয়েছে,

নামাজে আল্লাহর দিদার

Image
নামাজে আল্লাহর দিদার শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ইসলামের প্রথম বাহ্যিক ইবাদত হলো নামাজ। নামাজ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে নির্দেশনা রয়েছে ৮২ বার। নামাজের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘আর তোমরা আমার স্মরণোদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম করো।’ (সুরা-২০ তহা, আয়াত: ১৪)। নামাজ ইসলামের মূল পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইসলাম পাঁচটি খুঁটির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, নামাজ কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজ করা ও রমজান মাসে রোজা পালন করা।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, ইমান অধ্যায়, পৃষ্ঠা: ১৬, হাদিস: ৭)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কর্ম থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা-২৯ আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হুজুরে কলব (হৃদয়ের উপস্থিতি) ব্যতীত নামাজ প্রকৃত নামাজ হয় না।’ (ফিকহুর রিজা)। হুজুর অর্থ উপস্থিতি, হাজির অর্থ উপস্থিত, কলব মানে দিল, হৃদয়, মন। সফল মুমিনদের পরিচয় পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে, ‘ওই সকল বিশ্বাসীগণ সফল, যারা তাদের নামাজে আল্লাহর ভয়ে