তোমাদের পাপ পুণ্যে পরিণত করে দিলাম

তোমাদের পাপ পুণ্যে পরিণত করে দিলাম

তোফায়েল গাজালি
হতে পারে আজই রহমতের মাসের শেষ দিন। আজকের প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণ করিয়ে দেবে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের সুযোগ বয়ে যাচ্ছে।
মাওলার রহমতে সিক্ত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ যারা হেলায় পার করেছেন তাদের জন্য দুঃখ করা ছাড়া কী থাকতে পারে? এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য। হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন মহানবী (সা.) মিম্বরে ওঠার সময় প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে বললেন ‘আমিন’, দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রেখে আবার বললেন ‘আমিন’, তৃতীয় সিঁড়িতেও পা রেখে বললেন ‘আমিন’।
এভাবে তিনবার ‘আমিন’ বলার তাৎপর্য সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন সাহাবায়ে কেরাম। জবাবে হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, আমি যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন জিবরাইল এসে আমাকে জানালেন, যে ব্যক্তি আপনার নাম শুনেও দরুদ পাঠ করে না, তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। আমি বললাম, ‘আমিন’।
তিনি আবার বললেন, যে ব্যক্তি মাতা-পিতা দু’জনকে কিংবা একজনকে বৃদ্ধ বয়সে পেয়েও তাদের খেদমতের বদৌলতে জান্নাতের উপযুক্ত হতে পারল না, তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। আমি বললাম, ‘আমিন’। তারপর জিবরাইল (আ.) বললেন, যে ব্যক্তি রমজান পেল। কিন্তু রমজান বিদায় হয়ে গেল এই অবস্থায় যে, সে ক্ষমা লাভ করতে পারল না, তার প্রতিও আল্লাহর অভিশাপ। আমি বললাম, ‘আমিন’। এ হাদিস থেকে অনুমান করা যায় রমজানের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা নিতান্ত হতভাগা হওয়ার আলামত।
অন্য দিকে যারা অবারিত রহমতের মাসটিকে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তাদের নিয়ে গর্ব করেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের শেষে মুমিন বান্দারা যখন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের উদ্দেশে রওনা হন, আল্লাহতায়ালা তখন ফেরেশতাদের বলেন, যে বান্দা তার কর্তব্য সম্পন্ন করে, তার প্রতিদান কী হওয়া উচিত?
ফেরেশতারা বলেন, তার প্রতিদান পূর্ণ মাত্রায় দেয়া উচিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দারা তাদের ওপর আরোপিত কর্তব্য পালন করে এখন আমার মহিমা ঘোষণা করতে করতে বের হয়েছে। আমি আমার মর্যাদা ও প্রতিপত্তির শপথ করে বলছি, তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহ ঘোষণা করেন, তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপরাশিকে সওয়াবে পরিণত করলাম। (বায়হাকি)।
সিয়াম সাধনার মাস সফলভাবে সম্পন্ন করার শেষ প্রান্তে আসা একটি শুভ আলামত। তাই আল্লাহতায়ালার অপার রহমত ও অনুগ্রহের অধিকারী হওয়ার এবং পাপরাশি থেকে পবিত্র হয়ে ঈদের আনন্দ ভোগের সুসংবাদ ঘোষণা হতে থাকে রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে। মাহে রমজানে যেসব সদভ্যাস গড়ে উঠেছে, যেসব নেক কাজ পালন করা হয়েছে, বিশেষভাবে নফল ইবাদতের প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়েছে, রমজানের পরও সেগুলো অব্যাহত রাখতে পারা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়।
তাকওয়া, তাওয়াক্কুল ও খোদাপ্রেমের দীক্ষা রমজানের বহুল আলোচিত বিষয় হলেও এগুলোর সম্পর্ক শুধু এ মাসের সঙ্গে নয়, সারা জীবন এসব মহৎ গুণ চর্চা করা জরুরি। দুনিয়ায় মানুষের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য আল্লাহর আদেশ ও অভিপ্রায়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। বস্তুত এরই নাম ইমান ও ইসলাম। মুমিনের প্রতিটি কাজ হতে হবে উদ্দেশ্য ও ফলাফল বিবেচনায় রেখে।
পার্থিব স্বার্থ ও সুবিধার চেয়ে আখিরাতের কল্যাণকে প্রাধান্য দিতে হবে। রমজানের তিরিশ বা ঊনত্রিশ দিনের পর পানাহার ও কামাচার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ রহিত হবে না। সব ক্ষেত্রেই তাকে আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাসের শেষভাগে মুমিন বান্দাদের হওয়া উচিত।
লেখক : পরিচালক, ফিদায়ে মিল্লাত ইন্সটিটিউট
SOURCE -DAILY JUGANTOR

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট