আযান সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক আলোচনাঃ

আযান সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক আলোচনাঃ
১) আযানের জবাবঃ বিভিন্ন হাদিসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মুআযযিন আযানে যা যা বলবেন শ্রোতাও তাই বলবেন। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন,রাসূল (সাঃ) বলেছেন- "যখন তোমরা মুওয়ায্যিনকে আযান দিতে শুনবে তখন সে যা বলবে তদ্রুপ বলবে।" [1] "যে ব্যক্তি মুআযযিনের পিছে পিছে আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে এবং ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও 'হাইয়া আলাল ফালা-হ’ শেষে ‘لا حول ولا قوة الا بالله 'লা-হাওলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ (নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত) বলে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।" [2] অতএব আযান ও ইকামতে ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘ফালা-হ’ বাদে বাকী বাক্যগুলির জওয়াবে মুআযযিন যেমন বলবে, তেমনই বলতে হবে। ইক্বামতের জবাবও একইভাবে দিবে। কেননা আযান ও ইক্বামত দু’টিকেই হাদীছে ‘আযান’ বলা হয়েছে। [3] লক্ষ্যণীয় যে, (ক) ফজরের আযানে ‘الصلاة خير من النوم 'আছ ছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’-এর জওয়াবে صدقت وبررت ‘ছাদাক্বতা ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই।[4] (খ) তেমনিভাবে এক্বামত-এর সময় قد قامت الصلاة ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’-এর জওয়াবে اقامها الله وأدامها ‘আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা’ বলা সম্পর্কে আবুদাঊদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।[5] (গ) এবং ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ -এর জওয়াবে ‘ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ বলারও কোন দলীল নেই। ২) আযানের পরে দরূদ ও ওয়াসীলার দু'আ পাঠঃ আযান দেওয়া ও শোনার পর আযানের দু'আ পড়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে দরূদে ইব্রাহিম পড়া উত্তম। অর্থাত, ছালতে আমরা যেই দরূদ পড়ে থাকি সেটি। [6] দূর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকেই এই দরূদ পাঠের আমলটি করেন না। রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর দরূদ পাঠ দু'আ কবুলের শর্ত। অতপর মুআজ্জিন ও শ্রোতা ওয়াসীলার দু'আ করবেন। ...আযানের পরে ওয়াসীলার দু'আঃ [7] اَللَّهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا الَّذِىْ وَعَدْتَهُ জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন,রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "মুওয়ায্যিনের আযান শুনে যে ব্যক্তি উপরের বাক্যগুলো বলবে,তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাওনা হয়ে যাবে।" [8] ৩) এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্যনীয় যে, আযান এবং ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত দু'আ আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দেন না। তাই আমাদের উচিত, এ সময় বিভিন্ন দু'আ, যেমন সুসন্তান লাভ, সন্তান ও পরিবারের সফলতা ও শান্তি এবং পিতা মাতার জন্য দু'আ করা এবং পার্থিব বা পারলৌকিক যে কোন সমস্যা, যে কোন বিপদ আপদে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা। আযানের পরে দরূদ পাঠ, ওয়াসীলার দু'আ পাঠ ও নিজের জন্য দু'আ চাওয়া সবই একাগ্রতার সাথে ব্যক্তিগতভাবে এবং মনে মনে আদায় করা সুন্নাত।

 __________________ [1] বুখারী-১/২২১ [2] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮। [3] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৬২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮৮ ‘আযান’ অধ্যায়, মাসআলা-৯। [4] . মির‘আত ২/৩৬৩, হা/৬৬২-এর ভাষ্য দ্রষ্টব্য। [5] . আবুদাঊদ হা/৫২৮; , মিশকাত হা/৬৭০; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪১, ১/২৫৮-৫৯ পৃঃ। [6] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭। দরূদ-এর জন্য ১৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। [7] . বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৯; রাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ)। [8] মিশকাত হা/৫৫৭২, ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়-২৮, ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ-৪)


ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, 'সালাতের মধ্যে ছয়টি বৈশিষ্ট্য মুনাফিকির লক্ষণঃ ১) সালাতে দাঁড়িয়ে অলসতা করা। ২) লোকজনকে দেখানোর জন্য সালাত দাঁড়ানো। ৩) সঠিক সময়ে সালাত আদায় না করে, দেরিতে সালাত আদায় করা। ৪) অতি দ্রুত সালাত আদায় করা অর্থাৎ সালাতের আহকাম-আরকান গুলো যথাযথ ভাবে আদায় না করা। ৫) সালাতে অল্প পরিমাণই আল্লাহকে স্মরণ করা। ৬) অমনোযোগী হয়ে অর্থাৎ খুশু-খুযু বিহীন সালাত আদায় করা।'
source-nokib tv 24/youtube

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট