ইসলামে আইনের শাসন ও সুবিচার
- Get link
- Other Apps
ইসলামে আইনের শাসন ও সুবিচার
শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
নিসফ অর্থ সমান অর্ধেক। আর ইনসাফ অর্থ সমান দুই ভাগ করা, বেশি বা কম না করা। আল্লাহ তাআলার একটি নাম হলো ‘আদল’ অর্থাৎ ন্যায়বান, ন্যায়পরায়ণ। আদালত অর্থ ন্যায়ের স্থান। মুমিন জীবনের পূর্ণতার জন্য তাকওয়া বিশেষ শর্ত; তাকওয়ার পরিচায়ক হলো ন্যায়বিচার।
মানবজীবনে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অত্যধিক। পবিত্র কোরআন কারিমে প্রথম সুরা ফাতিহার তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলার পরিচয় দেওয়া হয়েছে, ‘তিনি বিচার দিবসের মালিক,’ যা আমরা প্রত্যহ দিবারাত্রি বহুবার পাঠ করে থাকি।
সভ্য সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো বিকল্প নেই। সুবিচারপ্রাপ্তি সব নাগরিকের অধিকার এবং ন্যায়বিচার আল্লাহর হুকুম। এটি ফরজ ইবাদত। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে, তোমরা যা করো নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৮)।
ন্যায়ের বিধান সর্বকালের ও সব সমাজের জন্য। সব আসমানি কিতাবে এই নির্দেশ রয়েছে, ‘স্মরণ করো দাউদ ও সোলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে, তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোনো সম্প্রদায়ের মেষ, আমি প্রত্যক্ষ করতে ছিলাম তাদের বিচার।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ৭৮)। ‘নিশ্চয়ই আমি “তাওরাত” অবতীর্ণ করেছিলাম; তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো; নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইহুদিদের তদনুসারে বিধান দিত, আরও বিধান দিত রব্বানিগণ এবং বিদ্বানগণ, কারণ তাদের আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর সাক্ষী। আমি তাদের জন্য তাতে বিধান দিয়ে ছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম। অতঃপর কেউ তা ক্ষমা করলে তাতে তারই পাপমোচন হবে। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই জালিম। ইঞ্জিল অনুসারীরা যেন আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই ফাসিক।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৪৪-৪৭)।
কোরআন তথা ধর্মীয় বিধানের উদ্দেশ্য হলো মানবকল্যাণ। তথা জীবন সুরক্ষা, সম্পদ সুরক্ষা, জ্ঞান সুরক্ষা, বংশ সুরক্ষা এবং এরই মাধ্যমে ধর্ম সুরক্ষা। কোরআনের বর্ণনা, ‘কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী তাদের বিচার নিষ্পত্তি করো, তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ না করো এবং তাদের সম্বন্ধে সতর্ক হও, যাতে আল্লাহ যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তারা তার কিছু থেকে তোমাকে বিচ্যুত না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রেখো যে তাদের কোনো কোনো পাপের জন্য আল্লাহ তাদের শাস্তি দিতে চান এবং মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্যত্যাগী। তবে কি তারা জাহিলি যুগের বিধিবিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধানদানে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৪৮-৫০)।
আল্লাহর একটি নাম ‘হাকিম’ বা ন্যায়বিচারক, তিনি ‘আহকামুল হাকিমিন’ অর্থাৎ সব বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক। মানুষকে আল্লাহ তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে ন্যায়বিচারের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। সুবিচার মানবিক চাওয়া এবং ইবাদত, ‘এবং দাউদের নিকট পৌঁছাল, তখন তাদের কারণে সে ভীত হয়ে পড়ল। তারা বলল, ভীত হবেন না, আমরা দুই বিবদমান পক্ষ—আমাদের একে অপরের ওপর জুলুম করেছে, অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করুন, অবিচার করবেন না এবং আমাদের সঠিক পথ নির্দেশ করুন।’ আল্লাহ বললেন, ‘হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার করো এবং খেয়ালখুশির অনুসরণ কোরো না, কেননা এটা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি, কারণ তারা বিচার দিবসকে বিস্মৃত হয়েছে।’ (সুরা-৩৮ সদর, আয়াত: ২২ ও ২৬)।
ইসলামি বিধানে বিচার আদালতের মাধ্যমে অথবা আদালত কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংঘ দ্বারা সম্পন্ন হওয়া বিধেয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিচারিক কার্য সম্পাদনের এখতিয়ার রাখে না। এতে জুলুম ও বিশৃঙ্খলার অরাজকতার সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান। মানবাধিকার সুরক্ষার স্বার্থে বিচারবহির্ভূত হত্যা, সন্ত্রাস, খুন, গুম বন্ধ করা এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
SOURCE-prothomalo.com
- Get link
- Other Apps
Comments
Post a Comment