সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল–কোরআন

সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল–কোরআন

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

ইসলামের প্রাথমিক সপ্ত বিশ্বাসের অন্যতম প্রধান বিশ্বাস হলো আসমানি কিতাবে বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা মানুষের হিদায়াত বা পথনির্দেশনার জন্য কিতাব নাজিল করেছেন। মানবসভ্যতার উন্নতিতে আসমানি কিতাবের ভূমিকা অনন্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রধান ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ নবী ও রাসুলদের কাছে পাঠানো বাণী হলো আসমানি কিতাব। এর মধ্যে ১০৪টি আসমানি গ্রন্থ বিখ্যাত। এগুলোর মধ্যে ৪টি কিতাব অর্থাৎ বড় গ্রন্থ, আর ১০০টি রিসালা বা সহিফা অর্থাৎ পুস্তিকা বা ছোট বই।
বড় চারটি কিতাব হলো তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআন। এই চার বড় গ্রন্থ নাজিল হয়েছে বিশিষ্ট চারজন নবী ও রাসুলের প্রতি। যথা: তাওরাত হজরত মুসা (আ.)–এর প্রতি ইবরানি বা হিব্রু ভাষায়, জাবুর হজরত দাউদ (আ.)–এর প্রতি ইউনানি বা আরমাইক ভাষায়, ইঞ্জিল হজরত ঈসা (আ.)–এর প্রতি সুরিয়ানি ভাষায় এবং কোরআন হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়। সহিফাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে হজরত আদম (আ.)–এর প্রতি ১০টি, হজরত শিশ (আ.)–এর প্রতি ৫০টি, হজরত ইদরিস (আ.)–এর প্রতি ৩০টি ও হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর প্রতি ১০টি। সহিফা ও কিতাবের মধ্যে কোরআন হলো সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এরপর আর কোনো কিতাব বা সহিফা নাজিল করা হবে না। কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে আখেরি পয়গাম্বর তথা সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি। এরপর আর কোনো নবী ও রাসুল আসবেন না।
কোরআন হলো কালামুল্লাহ, কালাম অর্থ শব্দ, বাক্য, কথা; কালামুল্লাহ হলো আল্লাহর বাণী। কোরআন পাঠ করা মানে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা। কিতাব অর্থ লিপি বা লেখা; গ্রন্থ বা গ্রন্থিত বই। রিসালা অর্থ চিঠি, পত্রপত্রিকা, পুস্তিকা বা ছোট বই। সহিফা অর্থ পাতা, পৃষ্ঠা, মুদ্রিত বা খোদাইকৃত। কোরআন অর্থ পাঠ, পঠিত, পাঠযোগ্য ও যা বারবার পাঠ করা হয় এবং যা নিকটে নিয়ে যায়। কোরআন স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগসূত্র।
কোরআন সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তির জন্য কোরআনের দর্শন ও নির্দেশনা এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অনুপম আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হবে। কিতাব অনুসরণের জন্য চাই নিঃশর্ত বিশ্বাস। হিদায়াত লাভের শর্ত হলো তাকওয়াবান বা মুত্তাকি হওয়া। মুত্তাকি হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে যে পাঁচটি বিষয় মানতে হবে তার অন্যতম হলো কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন করা। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা বিশ্বাস করে আপনার প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে, তাতে এবং আপনার পূর্বে যা নাজিল করা হয়েছে তাতে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৪)।
কোরআনের বিষয়বস্তু হলো মানুষ ও মানুষের জীবনের যাবতীয় বিষয়। কোরআনের বিধানগুলো মানবিক ও কল্যাণকর; সহজ, সুন্দর ও যৌক্তিক। ইসলামের বিধানকে শরিয়াহ বলা হয়। শরিয়াহ বিধানের দর্শন হলো ‘মাকাসিদে শরিয়াহ’ বা শরিয়াহর উদ্দেশ্য। যথা: জীবন সুরক্ষা, সম্পদ সুরক্ষা, জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক সুরক্ষা, বংশগতি সুরক্ষা। ইসলামি শরিয়তের ব্যবহারিক বিধানকে ‘ইলমুল ফিকহ’ বা ‘প্রজ্ঞাশাস্ত্র’ বলা হয়, যার উদ্দেশ্য হলো মানবসত্তা সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং তার জন্য কল্যাণ–অকল্যাণ অনুধাবন ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সর্বোপরি মানবসভ্যতার সুরক্ষাই আসমানি কিতাবসমূহের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, যার পূর্ণতা প্রদান করা হয়েছে কোরআন নাজিলের মাধ্যমে।
কোরআনচর্চা বিদ্যাকে ‘ইলমে তাফসির’ বলা হয়। ইলমে তাফসিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো: মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্য অনুধাবন ও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ। কোরআন কারিমের অবতীর্ণ প্রথম বাণীটি ছিল ‘ইকরা’ অর্থাৎ ‘পড়ো’। ‘পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃজন করেছেন ঝুলন্ত জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, তোমার রব মহাসম্মানিত। যিনি শিখিয়েছেন কলমের মাধ্যমে। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন তা, যা তারা জানত না।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১-৫)।
ইমান বা বিশ্বাসের প্রাথমিক সাতটি বিষয়ের তৃতীয়টি হলো কিতাবে বিশ্বাস করা। কোরআন মাজিদ যেহেতু সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ, সুতরাং এর সুরক্ষাও অপরিহার্য। তাই আল্লাহ তাআলা নিজে স্বয়ং এই ঐশী গ্রন্থ সংরক্ষণের জিম্মাদারি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আমি (আল্লাহ) এই জিকির (কোরআন) নাজিল করেছি, আর অবশ্যই আমিই তার হেফাজতকারী।’ (সুরা-১৫ হিজর, আয়াত: ৯)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক 

Comments

  1. If you're looking to lose fat then you absolutely need to try this brand new custom keto plan.

    To produce this keto diet service, licensed nutritionists, personal trainers, and chefs united to develop keto meal plans that are efficient, decent, cost-efficient, and fun.

    From their first launch in 2019, 100's of people have already transformed their body and health with the benefits a professional keto plan can provide.

    Speaking of benefits: in this link, you'll discover 8 scientifically-certified ones offered by the keto plan.

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট