আদল এবং ইহসানের আদেশ

 


সূরা আন-নাহলের ৯০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন - اِنَّ اللّٰہَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ - "নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।"

এখন, লক্ষ্য করুন। আয়াতের শুরুতে বলা হয়েছে - "ইন্নাল্লাহা ইয়া'মুরু বিল আদলি ওয়াল ইহসান।" অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ আদল ও ইহসানের আদেশ দেন। প্রথমে এসেছে আদল তারপর ইহসান। আদল মানে - ইনসাফ করা, ন্যায়বিচার করা। সর্বনিম্ন যতটুকু করতে পারেন। আল্লাহ তোমাদের ন্যায়বিচার করার আদেশ করছেন। ইনসাফ করার পর সর্বোচ্চ যে পর্যায়ে তোমরা পৌঁছতে পার তা হল, ইহসান তথা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সদাচার। ইনসাফ করার পর শুধু এতটুকুতে সন্তুষ্ট থেকো না, ইহসানের পর্যায়ে পৌঁছার চেষ্টা করো। আয়াতের পরবর্তী অংশের দিকে লক্ষ্য করুন। এই আদল এবং ইহসানের প্রথম ক্ষেত্র হল, নিকট আত্মীয়দের দান করা। হ্যাঁ, আপনার নিকট আত্মীয়দের আপনার সম্পত্তির উপর অধিকার রয়েছে। আপনাকে আপনার সম্পত্তি থেকে কিছু তাদেরকে দান করতে হবে। যেমন, আপনার খালা। রাসূলুল্লাহ (স) যেমন বলেছেন - খালা হলো মায়ের মতো। যদি খালা বিধবা হোন, অর্থনৈতিক ভাবে খারাপ অবস্থায় থাকেন তাহলে আপনার উচিত তাঁর দেখাশোনা করা। আপনার উপর তার সে অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইহসান কী? শরিয়া আপনাকে মিনিমাম যা করতে বলে তার নাম ইহসান নয়। আপনি তো এমনিতেই পরিবারের দেখা শোনা করেন। বরং অতিরিক্ত যা কিছু করেন আপনার বাবা-মায়ের জন্য, ভাই-বোনের জন্য, চাচা-চাচীর জন্য, এমনকি সেই চাচাতো ভাইয়ের জন্য যে আপনার সাথে মন্দ আচরণ করে - সেটাই ইহসান। তারপর আল্লাহ বলেন - "এবং তিনি অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন।" এখানে তিনটি শব্দের দিকে লক্ষ্য করুন, ফাহশা, মুনকার এবং বাগ। 'ফাহশা' অর্থ অশ্লীলতা, 'মুনকার' অর্থ মন্দ কাজ। মুনকার ব্যাপক অর্থবোধক। মুনকারের মাঝে ফাহশাও (অশ্লীলতা) অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ফাহ্শার মাঝে মুনকার অন্তর্ভুক্ত নয়। তাহলে, আল্লাহ যদি শুধু মুনকার বলতেন যে তিনি তোমাদেরকে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন, তাহলে মুনকার অশ্লীলতাকেও অন্তর্ভুক্ত করতো। কিন্তু আল্লাহ সকল মন্দ কাজের ক্যাটাগরি থেকে প্রথমে অশ্লীলতাকে পৃথকভাবে উল্লেখ করলেন, তারপর সকল মন্দ কাজের কথা বললেন। কত রকমের মন্দ কাজ রয়েছে - সুদ, খুন, রাহাজানি, হারাম খাওয়া আরো কত কি। কিন্তু আল্লাহ শুধু স্পেশাল একটি মন্দ কাজকে আলাদাভাবে উল্লেখ করলেন। কেন তিনি এমনটি করলেন? কেন তিনি অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতাকে পৃথকভাবে উল্লেখ করলেন? কারণ, আপনি যদি লজ্জা হারিয়ে ফেলেন তখন অন্যসব খারাপ কাজ আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। যদি লজ্জাশীলতা হারিয়ে ফেলেন এর মানে হলো, আল্লাহর ব্যাপারে আপনি আর লজ্জিত নন। যদি আল্লাহ দেখে ফেলবে এই লজ্জা না পান তখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। তাই আল্লাহ এটাকে আলাদা করে উল্লেখ করলেন। আর এইসব কিছুর শেষে 'আল বাগ' অর্থাৎ বিদ্রোহীতা থেকে বিরত থাকার আদেশ করেন। -- নোমান আলী খান -- shame series part 5 থেকে।
source-NAKinbangla/youtube

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট