দুআ কীভাবে কাজ করে? (২য় পর্ব)

 দুআ কীভাবে কাজ করে? (২য় পর্ব)


-- নোমান আলী খান আমি এ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা আগে শেয়ার করতে চাই, পরে মারিয়াম সালামুন আলাইহা নিয়ে কথা বলবো। কখনো কখনো আপনি এমন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হন যে মনের মাঝে প্রশ্ন আসে এখানে আমার দোষ কোথায়? আমাকে কেন এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে? আমি কী অন্যায় করেছি যে আমার প্রতিই এটা আরোপিত হল? আপনাদের একটি কথা জিজ্ঞেস করি, ইউসুফ (আ) তো আট-নয় বছরের এক বালক ছিলেন মাত্র। শিশু মানেই তো নিষ্পাপ। একজন শিশু এমন কী করতে পারে যার জন্য সে কিডন্যাপ হতে পারে? একজন শিশু এমন কী অন্যায় করতে পারে যার কারণে সে বনের মাঝখানে কুয়ার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে? একজন শিশু কী করতে পারে যার কারণে সে শিশু দাস হিসেবে বিক্রিত হবে? ভিন্ন একটি দেশে? আর তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর কী অন্যায় করেছেন যার কারণে তাঁকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হতে হবে? মিথ্যা একটি অভিযোগে..তিনি বহু বছর জেলে কাটিয়েছেন। তিনি তো নিজের অন্যায়ের কারণে জেল খাটেননি। তিনি নির্দোষ ছিলেন। আর তাঁকে এতগুলো বছর জেলে কাটাতে হয়। তাঁকে জীবনে এমনসব পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয় অন্য কারো এমন হল বলত - ভাই জীবন অন্যায্য, কি-বা করার আছে। জীবন অন্যায্য। কিন্তু, একজন বিশ্বাসীর ক্ষেত্রে কী হয়? সে শুধু বলে না যে জীবন অন্যায্য, সে বলে আল্লাহ অন্যায্য। নাউজুবিল্লাহ। আল্লাহ তাঁকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছেন। আর আল্লাহ সূরা ইউসুফে বলেছেন - (وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ) আল্লাহ তার সকল কাজের তত্ত্বাবধান করছিলেন। তার সকল সিদ্ধান্তের অভিভাবকত্ব করেছিলেন। ইউসুফের জন্য যত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল আল্লাহ তার সবগুলোতে প্রভাব রেখেছিলেন। অভিভাবকত্ব করেছিলেন। কীভাবে? কখনো কখনো আমি আপনি এমন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হব .....কারণ, আল্লাহ জানেন ভালো কিছু সামনে আসছে। কখনো কখনো ভালো যা কিছু আসছে তা আপনার নিজের জন্য, আবার কখনো-বা অন্য কারো জন্য। কখনো কখনো আপনি জীবিত থাকতেই এর উপকার পাবেন আর কখনো কখনো এই উপকার আসবে আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পর। ইউসুফ (আ) এর ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? একজন পিতা তার সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয় পড়েন। এটা একটা ট্রাজেডি। ঠিক কিনা? কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, তাঁকে যদি কিডন্যাপ করা না হত তাহলে তিনি কুয়ায় নিক্ষিপ্ত হতেন না, আর তিনি যদি কুয়ায় না পড়তেন তাহলে কোনোদিন মিশরে গিয়ে পৌঁছতেন না। আর মিশরে কোনোদিন না গেলে তিনি জেলে নিক্ষিপ্ত হতেন না। আর যদি জেলে না যেতেন তাহলে জেলের ঐ দুই লোকের সাথে তাঁর কোনোদিন সাক্ষাৎ হত না। যাদের স্বপ্নের তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ঐ দুই ব্যক্তির সাথে যদি কোনোদিন তাঁর দেখা না হত... তাদের একজন বেঁচে যায় এবং রাজার খেদমতে নিয়োজিত হয়, আর যখন রাজা একটি স্বপ্ন দেখলেন - অদ্ভুত এক স্বপ্ন - ঐ ব্যক্তি তাহলে কোনোদিন বলতেন না যে, হ্যাঁ, আমি এক লোকের কথা জানি, যে আপনার স্বপ্নের ব্যাখ্যায় সাহায্য করতে পারবে। আর এটা যদি কোনোদিন না ঘটতো...জানেন? স্বপ্নটা কী ছিল? দেশে সাত বছর হবে প্রাচুর্যের, আর পরবর্তী সাত বছর দেশে কোন ফসল ফলবে না, কোন উৎপাদন হবে না, কোন ফসল সংগ্রহ করা হবে না, মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যাবে। যদি ইউসুফ (আ) জেলে না যেতেন এবং তাঁকে মুক্তি দেওয়া না হত ঐ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার জন্য সেই সময়, তাহলে দেশ অর্থনৈতিক, ফাইনানসিয়াল এবং সামাজিক এক দুর্যোগে পতিত হত। লক্ষ লক্ষ শিশু দুর্ভিক্ষে মারা যেত। একজন শিশু কষ্ট স্বীকার করল কয়েক বছরের জন্য, আর এই এক শিশুর কষ্ট স্বীকারের ফলে আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল অগণিত পরিবারকে, অগণিত পিতা-মাতাকে অনাহারে সন্তান হারানোর বেদনা থেকে রক্ষা করবেন। এই পরিকল্পনার কারণে যে, ইউসুফ (আ) জেল থেকে ফিরে এসে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলেন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলেন। আমার এক বন্ধুর নাম হয়তো আপনারা শুনে থাকবেন, তার নাম রবার্ট ডেভিলা। আমি ঐ বোনকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে বলল, সে তার কথা শুনেছে। মানুষটা তার শরীরের কোন অঙ্গ নাড়াতে পারে না, শুধু মুখমণ্ডল ছাড়া। সে তার শরীরের কোন অংশ নাড়াতে পারে না। সে কী এমন অন্যায় করেছে যার কারণে এমন অবস্থায় পতিত হল? কিছুই না। কিন্তু কত মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে তার এই অক্ষমতার দরুণ? কত শত মানুষ এই ঘটনার কথা শুনে আল্লাহর পথে ফেরত এসেছে? কত শত মানুষ আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ ছিল - যদিও তারা মুসলিম ছিল কিন্তু নামে মাত্র মুসলিম ছিল - এবং সিদ্ধান্ত নিলো যে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে কারণ ঐ মানুষটি একটি বিছানায় শুয়ে আছে? তার কষ্ট, দুর্ভোগ লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য হেদায়াতের কারণে পরিণত হল। বুঝতে পারছেন? কখনো কখনো আমি আপনি কষ্টকর অবস্থায় পতিত হই, যা আসলে খুবই সামান্য মূল্য এমন অসংখ্য কল্যাণ আর এমন অসংখ্য উপকারের জন্য, যা হয় এখন আমার কাছে আসবে নতুবা আখিরাতে আমার কাছে আসবে। আল্লাহর কাছে ফেরত যাওয়ার পর আমি এর উপকার ভোগ করবো। সুতরাং, আমাদের দুআ কোন কিছু অর্ডার করার মত নয়। এখন, আমি মারিয়াম সালামুন আলাইহা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। যখন ঐ বোন আমাকে তার সমস্যার কথা বলছিল সাথে সাথে আমার মারিয়াম সালামুন আলাইহার কথা মনে পড়লো। কারণ, মারিয়াম সালামুন আলাইহার ক্ষেত্রে...এমনকি ছোট বয়সেও ...... তার জন্ম আশ্চর্যজনক, তার জন্মের কথা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। খুব বেশি সংখ্যক মানুষের জন্মের কথা কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি। মা একটি ছেলে সন্তান আশা করছিলেন। কিন্তু তাঁর একটি মেয়ের জন্ম হল। আর আল্লাহ বলেন - " وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْأُنثَىٰ - ওয়া লাইসাস জাকারু কাল ঊনসা।" (৩:৩৬) যার অনেকগুলো গভীর অর্থ রয়েছে। আমি এখন শুধু একটি অর্থ হাইলাইট করছি। "এই মেয়েটি অন্য কোন ছেলের মত নয়। এই মেয়েটি স্পেশাল।" প্রসঙ্গত, দয়া করে এই কথাগুলো মনে রাখবেন, পরেরবার আপনাদের কেউ যদি সন্তান সম্ভাবা হয়ে থাকেন। আপনি আশা করছেন, আপনার মা আশা করছে, আপনার বাবা আশা করছে, আপনার চাচাতো-খালাতো ভাইবোনেরা আশা করছে একটি ছেলে শিশুর জন্ম হবে। কিন্তু, একটি মেয়ের জন্ম হল। তখন, মনে রাখবেন আল্লাহ মারিয়াম সালামুন আলাইহার জন্মের মত কারো জন্মের কথা এভাবে হাইলাইট করেননি। মেয়ে সন্তান পাওয়া সম্মানের। মেয়ে সন্তান পাওয়া আল্লাহর একটি উপহার। মেয়ের জন্ম হলে অসন্তুষ্ট হওয়া আসলে মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন - وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِالْأُنثَىٰ ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ - “তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখ কালো হয়ে যায় আর সে অন্তর্জ্বালায় পুড়তে থাকে।” (১৬:৫৮) মেয়ে সন্তান পাওয়া আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদ এবং সম্মান। মেয়ের জন্ম হলে যদি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন তাহলে আপনি শুধু আল্লাহর উপহারেরই অসম্মান করছেন না, আপনি কুরআনের আয়াতকেও অসম্মান করছেন। এই কথাগুলো মনে রাখবেন। যাইহউক, এগুলো শুধু প্রাসঙ্গিক কিছু কথা। এই শিশুর জন্ম হল। তাঁকে আসলে বিশেষ একটি জায়গা দেওয়া হল, তখনকার সময়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। যাকারিয়া (আ) তাঁর দেখাশোনা করতেন। আর যখনি তিনি তাঁর খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আসতেন - কারণ, মারিয়াম (আ) আল্লাহর ঘরে থেকে আল্লাহর ইবাদাতে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا - “যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কছে আসতেন তখনই কিছু খাবার দেখতে পেতেন।” (3:37) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কোথায় পেলে তুমি? এই ফলগুলোর তো এখানে উৎপাদনও হয় না। এমনকি এগুলো এই সিজনেরও নয়। এইগুলো শীতকালে হয়, আর ঐগুলো গরমকালে জন্মে। তুমি এসব ফল কোথায় পেলে? তিনি উত্তর দিতেন - قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ - এগুলো আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষভাবে এসেছে। এই ফলগুলো আমার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। ভাবতে পারেন এমন একজনের কথা? যার দুআ এমনভাবে কবুল হয় যে, আকাশ থেকে খাদ্য অবতীর্ণ হয়, এই নারীর জন্য!! তাই, যখন ঐ বোন আমাকে বলছিলেন তাঁর দুআ কবুল হয়ে যায়, আমি সাথে সাথে মারিয়াম সালামুন আলাইহার কথা মনে করলাম। কি অলৌকিকভাবে আল্লাহ তাঁর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতেন, এমনকি খাদ্যের মত বিষয়েও!! যা আমরা নিজেরাই উঠে গিয়ে নিয়ে আসতে পারি। তাঁকে এমনকি সেজন্যেও উঠতে হয়নি!! খুবই স্পেশাল এক কিশোরী। খুবই স্পেশাল এক নারী। --------------------- * ---------------------
source-nakinbangla/youtube

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট