আমাদের আগের যুগের এক ধার্মিক ব্যক্তি

 আমাদের আগের যুগের এক ধার্মিক ব্যক্তি যেভাবে নিজেকে শয়তানের চতুর্মুখী আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেন।


— নোমান আলী খান। ------------------ * ----------------- * ------------- আমি আপনাদের সামনে খুব সুন্দর একটি লেখা পড়তে চাই। শাকিক (র) এর মন্তব্য। শয়তানের চতুর্মুখী আক্রমণ সম্পর্কে তিনি এই মন্তব্যটি করেন। আমি আপনাদের সামনে সেটা পড়তে চাই। "প্রতিদিন সকালে শয়তান চতুর্দিক থেকে আমাকে আক্রমণ করে। সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। সামনের দিক থেকে এসে সে আমাকে বলে, "ভয় পেয়ো না। যা করতে চাও করে ফেলো। যে তাড়নাই অনুভব করো, যে প্ররোচনাই মনের মধ্যে আসে করে ফেলো। কেন তুমি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে যাচ্ছ? জানো না আল্লাহ্‌ হলেন পরম করুণাময়? যা উপভোগ করতে চাও, করো। কোনো সমস্যা নেই।" আমি তখন সূরা ত্বহার একটি অংশ তিলাওয়াত করে তাকে জবাব দিই। যেখানে আল্লাহ্‌ বলেছেন: "আমি অবশ্যই বার বার ক্ষমা করি। কিন্তু, আমি তাকে ক্ষমা করি যে তাওবা করে বা অনুতাপ করে। যে সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে।" (২০:৮২) অর্থাৎ, এমন মানুষদের মত হবে না, যারা মন যা চায় তাই করে এবং তারপর বলে, আল্লাহ্‌ ক্ষমা করেন। আল্লাহ্‌ বলছেন, আমি তাকে ক্ষমা করি যে সঠিক কাজ করে। তাকে নয়— যে ইচ্ছেমত কাজ করে এবং তারপর বলে, আল্লাহ্‌ ক্ষমা করেন। তাই, তিনি এই উত্তর দিলেন। কারণ, শয়তান তাকে কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়েছিল। শয়তান তাকে বলতো, আল্লাহ তো বলেছেন তিনি ক্ষমা করেন। তিনি তাকে বললেন, না। তুমি আল্লাহর কথার উদ্ধৃতি দিচ্ছ কিন্তু তোমার নিয়ত ভালো নয়। তো, তিনি বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ কী বোঝাতে চেয়েছেন। আর তাই, তিনি শয়তানকে সঠিক আয়াত দিয়ে জবাব দিলেন। অতঃপর তিনি বলেন— এরপর সে পেছন দিক থেকে আমাকে আক্রমণ করে। সে আমাকে ভয় দেখায়— "আমার মৃত্যুর পর আমার সন্তানেরা আর্থিক দুর্দশায় পতিত হবে। আমার সন্তানদের জন্য তো আমার কাছে যথেষ্ট টাকা নেই। আমার মৃত্যুর পর তাদের কী হবে। কিভাবে তাদের স্কুলের খরচ চলবে, কিভাবে তাদের জীবন চলবে, ইত্যাদি।” তখন আমি তেলাওয়াত করি, " জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর।" (১১:৬) তাই, আল্লাহ্‌ যদি পিঁপড়ার কথা, পাখির কথা, পোকামাকড়ের কথা, মাছের কথা না ভুলেন— কিভাবে তিনি আমার সন্তানদের কথা ভুলে যাবেন। সুতরাং, এভাবে আমি তাকে আল্লাহর কথা দিয়ে জবাব প্রদান করি। আর ডান পাশ থেকে সে এভাবে আসে— সে আমার কাছে এসে আমার প্রশংসা করার চেষ্টা করে। "আজকে তুমি কতগুলো ভালো কাজ করে ফেলেছ! কি চমৎকার এক নামাজ আদায় করেছো! বাহ! কুরআন তিলাওয়াতও দারুণ হয়েছে! এটা করেছো, ঐটা করেছো। ওহ! তুমি দানও করেছো! দেখো, তুমি মানুষকে কতভাবে সাহায্য করো। দেখেছ, তুমি কত ভালো!!" ইত্যাদি ইত্যাদ। সে চায়, আপনি যেন আপনার ভালো ভালো কাজগুলো নিয়ে বেশ গর্ব অনুভব করেন। তার ডান দিকের আক্রমণের আলোচনায় আমরা এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। তখন আমি তিলাওয়াত করি— وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ — "শুভ পরিণাম শুধু তাদের জন্য যারা নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয়।" (২৮:৮৩) অর্থাৎ, যারা নিজেদেরকে নিজেদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়। আল্লাহ্‌ আমাদের এটা থেকে রক্ষা করুন। আর যখন সে বামদিক থেকে আসে, সে আমাকে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার দিকে প্ররোচিত করে। তখন আমি তিলাওয়াত করি— وَحِيلَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُونَ — “তাদের এবং তাদের কামনা-বাসনার মাঝে রেখে দেয়া হবে এক প্রাচীর।” (34:54) আর এভাবেই তিনি আল্লাহর বাণীর সাহায্যে নিজেকে শয়তানের চতুর্মুখী আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট