আল্লাহর গুণাবলীর আয়াত

 প্রশ্ন: আল্লাহর গুণাবলীর আয়াত অধ্যায় যেমন, ‘ইস্তেওয়া আলাল আরশ’ (আরশের উপর উঠেছেন), ইয়াদুল্লাহ (আল্লাহর হাত) ইত্যাদিতে ব্যাখ্যা নীতি সত্য নাকি আর কোনো নীতি গ্রহণ করা হবে?


. . উত্তর: এ অধ্যায়ে আলেমগণের কয়েকটি নীতি রয়েছে, প্রথম (অপ)ব্যাখ্যা নীতি, আর সেটা হচ্ছে এখানে ‘ইস্তেওয়া’ বলে ‘ইস্তাওলা’ বা অধিকার করা, আর হাত অর্থ ক্ষমতা বা শক্তি করা, চেহারা অর্থ সত্তা করা, এভাবেই অন্যগুলোর অর্থ কিয়াস করা হবে। এ নীতিটি অধিকাংশ কালামশাস্ত্রবিদদের পছন্দনীয় নীতি। . দ্বিতীয় নীতি হচ্ছে, অর্থ ও ধরণ উভয়টিকেই অস্পষ্ট ধরে নেওয়া। (অর্থ করলেও সাদৃশ্য দেওয়া হবে, ধরণ নির্ধারণ করলেও সাদৃশ্য দেওয়া হবে; সুতরাং অর্থ ও ধরণ কোনোটিই নির্ধারণ না করা) তৃতীয় নীতি হচ্ছে, অর্থ জানা আছে কিন্তু ধরণের ক্ষেত্র অস্পষ্ট ধরে নেওয়া। . তন্মধ্যে হক্ব বা সত্য নীতি হচ্ছে তৃতীয়টি। এটিই সাহাবায়ে কিরাম, তাবে‘ঈনে ইযাম, মুজতাহিদ ইমামগণ, মুহাদ্দেসীণ, ফুকাহা, উসূলীসহ সকল সত্যনিষ্ঠ আলেমের মত। . শাইখুল ইসলাম ইমাম যাহাবী তার সিয়ারু আ’লামিন নুবালা গ্রন্থে ইমাম ক্বুতাইবাহ ইবন সা‘ঈদ এর জীবন চরিতে বর্ণনা করেন, আমাদেরকে একাধিক ব্যক্তি আবুল আব্বাস আস-সাররাজ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি ক্বুতাইবাহকে বলতে শুনেছি, “এটিই হচ্ছে ইসলামের ইমাম, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্য।” (শেষ) আবার তিনি ইমাম আলী ইবনুল মাদীনীর জীবন-চরিতে বলেন, তিনি বলেছেন, “অধিকাংশ আলেমেরই মত হচ্ছে, নিশ্চয় আল্লাহ আরশের উপর।” (শেষ) অনুরূপভাবে তিনি ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহওয়াইহ এর জীবন-চরিতে উল্লেখ করেন, হারব আল-কিরমানী বর্ণনা করেন, আমি ইসহাক্ব ইবন রাহওয়াইহকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আল্লাহর বাণী, “যে কোনো শলা-পরামর্শ তিন জনে করুক না কেন, তাতে তিনি তাদের চতুর্থ” এ ব্যাপারে আপনার মত কী? তখন তিনি বললেন, “তুমি যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমার থেকে নিকটে, তবে তিনি সৃষ্টিকুল থেকে আলাদা”। (শেষ)....” [মাজমু‘আতুল ফাতাওয়া পৃ. ৩৯] . . অন্যত্র তিনি ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, وقال أبو المطيع البلخي: سألت أبا حنيفة فيمن قال: لا أدري أين الله؟ فقال أبو حنيفة أنه يكفر لأنه خالف النص، والله يقول: ﴿الرحمن على العرش استوى﴾ اقرؤوها وآمنوا به فقال أبو مطيع كيف استوى؟ فقال: آمنوا به كما جاء. “আবু মুতী‘ আল-বালাখী বলেন, আমি আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছি, সে ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি বলে, আমি জানি না আল্লাহ কোথায়? তখন আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বললেন, সে তো কাফের হয়ে যাবে, কারণ সে কুরআনের ভাষ্যের বিরোধিতা করেছে, আল্লাহ বলেন, “রহমান আরশের উপর উঠেছে”। . তোমরা এ আয়াত পড়বে এবং এর উপর ঈমান আনবে, তখন আবু মুতী‘ বললেন, কীভাবে তিনি উপরে উঠলেন, তখন আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বললেন, “তোমরা এর উপর ঈমান আন যেমনটি এসেছে।” (অর্থাৎ ধরণ নির্ধারণ করবে না) [মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া পৃ. ৪০] . অন্যত্র বলেন, أور سراج الدين علي حنفي قصيده بدء الأمالي مين كهتى هين: ورب العرش فوق العرش لكن بلا وصف التمكن واتصال... ملا علي قاري حنفي اسكي شرح مين لكهتي هين: سئل الشافعي عن الاستواء فقال: آمنت به بلا تشبيه واتهمت نفسي في الإدراك أمسكت عن الخوض وأجمع السلف على أن استواءه على العرش صفة له بلا كيف، نؤمن به... . “অনুরূপভাবে সিরাজুদ্দীন আলী হানাফী ‘বাদউল আমালী’ কবিতায় বলেন, আরশের রব আরশের উপর, তবে সেটাকে আঁকড়ে আছে বলবে না, লেগে আছেও বলবে না। . . আল্লামা মোল্লা আলী আল-কারী আল-হানাফী সেটার ব্যাখ্যায় বলেন, ইমাম শাফে‘ঈ রাহিমাহুল্লাহকে ‘ইস্তেওয়া’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমি কোনো প্রকার সাদৃশ্য স্থাপন ব্যতীতই সেটার উপর ঈমান এনেছি, আমি সেটার ধরণ পাওয়ার বিষয়ে নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি, আমি সেটার আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া থেকে বিরত থাকলাম। আর সালাফগণের ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে যে, তাঁর আরশের উপর উঠা তাঁর একটি গুণ যার কোনো ধরণ নির্ধারণ করা যাবে না, আমরা সেটার উপর ঈমান আনি।” [মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া পৃ. ৪০] . . অন্যত্র তিনি আব্দুল আযীয বুখারীর বক্তব্য বর্ণনা করেন, যিনি সিফাতের ব্যাপারে আশ‘আরী- মাতুরিদীদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন, . أور عبد العزيز بخاري حنفي كشف الأسرار شرح أصول البزدوي مين لكهتى هين: إثبات الرؤية وإثبات الوجه واليد لله حق عندنا، خلافاً لقول من قال: لا يوصف الله بالوجه واليد، بل المراد بالوجه الرضا، والذات، ومن اليد القدرة، أو القوة أو النعمة، فقال المصنف: بل الله يوصف بصفة الوجه واليد مع تنزيهه عن الجارحة؛ لأن الوجه واليد من صفات الكمال في المشاهدة؛ لأن من لا وجه له ولا يد له يعدُّ ناقصاً، وهو موصوف بصفات الكمال، فيوصف بهما أيضاً إلا أن إثبات الكيفية مستحيل؛ فيتشابه وصفه فيجب تسليمه على اعتقاد حقيته من غير اشتغال بالتأويل. انتهى. . “আর আব্দুল আযীয বুখারী হানাফী তার কাশফুল আসরার শারহু উসুলুল বাযদাওয়ীতে লিখেন, আল্লাহ তা‘আলার দেখা সাব্যস্ত করা, তাঁর জন্য চেহারা সাব্যস্ত করা, হাত সাব্যস্ত করা আমাদের নিকট হক্ব বা সত্য। এটি তাদের বিপরীত যারা বলে, আল্লাহর জন্য চেহারা ও হাত সাব্যস্ত করা যাবে না। . তারা বলে এখানে চেহরা বলে সন্তুষ্টি, সত্তা, আর হাত বলে শক্তি, ক্ষমা কিংবা নেয়ামত বুঝানো হয়েছে। তাই গ্রন্থকার এর প্রতিবাদ করে বলেন, “বরং আল্লাহকে চেহারা, হাত গুণে গুণান্বিত করা হবে, তবে সেটাকে অঙ্গ বলা যাবে না, কারণ চেহরা ও হাত থাকা দৃশ্যমান জগতে পূর্ণ গুণ হিসেবে বিবেচিত। . কারণ যার চেহারা নাই, হাত নেই সে তো ত্রুটিপূর্ণ। আর আল্লাহ তা‘আলাকে তো পূর্ণ গুণ দিয়েই গুণান্বিত করা হবে। সুতরাং তাকে এ দু’টি গুণ দিয়ে ভূষিত করা হবে, তবে ধরণ নির্ধারণ করা অসম্ভব বিষয়; সুতরাং সে ধরণ সাব্যস্ত করার বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যাবে। কর্তব্য হচ্ছে সেটার অর্থ সত্য বলে সেটার অপব্যাখ্যা করা থেকে বিরত থাকা। (শেষ)” [মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া পৃ. ৪১] . অন্যত্র বলেন, أور أبو شكور تمهيد مين لكهتى هين: قال بعضهم: إن الله موجود في كل مكان، وهم صنف من الجهمية، واحتجوا بقوله تعالى: ﴿هو الذي في السماء إله وفي الأرض إله﴾ وقوله: ﴿وهو الله في السموات وفي الأرض﴾ وقوله: ﴿إن الله مع الذين اتقوا﴾ وقوله: ﴿ما يكون من نجوى ثلاثة إلا هو رابعهم﴾ والجواب: أن معنى الآية الأولى: إنه إله أهل السماء وأهل الأرض، والآية الثانية: تدبيره في السموات والأرض، ومعنى الآية الثالثة: إنه معهم بالنصرة، ومعنى الرابعة: إنه سميع بمقالتهم بصير بأفعالهم، ونحن نقول: إن الله لو كان في كل مكان، يؤدي أن يكون في أفواه الدواب وأفراج النساء والإماء، وهذا كفرٌ قبيح. انتهى . “আর আবু শাকূর তামহীদ গ্রন্থে বলেন, “তাদের (অর্থাৎ জাহমিয়া ও মু‘তাযিলাদের) কেউ কেউ বলে, আল্লাহ সব জায়গায়, তারা হচ্ছে জাহমিয়াদের একটি সম্প্রদায়। তারা আল্লাহর বাণী “তিনি আসমানে ইলাহ ও যমীনে ইলাহ” অনুরূপ আল্লাহর বাণী, “তিনি আল্লাহ আসমানে এবং যমীনে..” অনুরূপ আল্লাহর বাণী নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন” অনুরূপ আল্লাহর বাণী, যখনই তিনজনের শলা-পরামর্শ হয় তখনি চতুর্থজন হন আল্লাহ” উত্তর: প্রথম আয়াতের অর্থ তিনি আসমানবাসীর ইলাহ এবং যমীনবাসীর ইলাহ। আর দ্বিতীয় আয়াতের অর্থ, তাঁরই পরিচালনায় চলছে আসমান ও যমীন। তৃতীয় আয়াতের অর্থ, তিনি তাদের সাথে আছেন, সাহায্যের মাধ্যমে। চতুর্থ আয়াতের অর্থ, তিনি তাদের কথা শুনেন, তাদের কার্য দেখেন। . আর আমরা বলি, যদি তিনি সব জায়গায় হন, তাহলে তো তাকে জীব-জন্তুর মুখের ভিতর, নারী-দাসীদের লজ্জাস্থানেও বলতে হয়, [নাউযুবিল্লাহ] এ তো নিকৃষ্টতম কুফরী। (শেষ)” [মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া পৃ. ৪২] . তারপর তিনি বলেন, إن عبارات سى معلوم هوا كه صحابة، أئمة، وغير، أئمة حنفية وغير أئمة حنفية سب كان مذهب هي كه الله كي فوقيت عرش بر هي، أور يد ووجه وغيره صفات بلا كيف هي، أور ان سب كي تأويل صحيح نهين هي... الحاصل: آيات فوقيت واستواء ويد وجه سب معاني ظاهر بر محمول هين، أور كيفيات ان سب كي مجهول هين، اور اس مين تجسيم بهي لازم نهين آتا، كيونكه جب كيفيت مجهول هو كئي أور خيال ﴿ليس كمثله شيء﴾ كا بهي رها، أور تنزيه تام كي كئي تجسيم كسي طرح لازم نهي آئى كا. والله أعلم. . “উপরোক্ত বাক্য থেকে এটা জানা গেল যে, সাহাবায়ে কিরাম, ইমামগণ, হানাফী ইমামগণ, হানাফী ছাড়া অন্যান্য ইমামগণ সকলেরই মাযহাব হচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা আরশে উপর, হাত, চেহারা ইত্যাদি আল্লাহর গুণ তবে সেটার ধরণ নির্ধারণ করা যাবে না। আর এসবের তা’ওয়ীল কখনও শুদ্ধ নয়। মোটকথা: উপর থাকা, উপরে উঠা, হাত ও চেহারা এসব প্রকাশ্য অর্থের উপর গ্রহণ করা হবে। আর এগুলোর ধরণ অজানা, এর দ্বারা দেহবাদও আবশ্যক হয় না; কেননা যখন ধরণ অজানা হয়ে গেল এবং “তাঁর মতো কোনো কিছু নয়” এটাও খেয়াল রাখা হলো আর পূর্ণরূপে পবিত্র করা হলো তখন কোনোভাবেই দেহবাদ আবশ্যক হয় না। আল্লাহই ভালো জানেন।” [মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া পৃ. ৪২] . অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, . بغير بيان كيفيت استواء كى الله كي ذات كو عرش بر سمجهنا أور اسكى علم كو محيط تمام عالم اعتقاد ركهتا هو اسكى بيجهى نماز بلا كراهت جائز هي، يه حكمت نبويه مين هي، نعتقد أنه على العرش مستو عليه استواءً منزها عن التمكن والاستقرار وأنه فوق العرش، ومع ذلك هو قريب من كل وجود، وهو أقرب من حبل الوريد ولا يماثل قربه قرب الأجسام انتهى. . “ইস্তেওয়া তথা উপরে উঠার কোনো ধরণ নির্ধারণ ব্যতীত আল্লাহর সত্তাকে আরশের উপর বুঝা, আর তাঁর জ্ঞান জগতের সকল কিছুকে বেষ্টন করে আছে এ আকীদা পোষণ করলে তার পিছনে কোনো প্রকার মাকরূহ হওয়া ব্যতীত তার পিছনে সালাত বিশুদ্ধ। কারণ এটাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা। . আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের উপর উঠেছেন এমন উঠা যা সেটাকে ধরে রাখা কিংবা স্থির হয়ে থেকে মুক্ত। আর তিনি তাঁর আরশের উপর রয়েছেন। তারপরও তিনি সকল সৃষ্টিকুলের নিকটে, তিনি তাদের ঘাড়ের শিরা হতেও অধিক নিকটে, তবে তার এ নিকটে থাকা অন্যান্য দেহের নিকটে থাকার মতো নয়।” [মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া পৃ. ৪৩] . অন্যত্র তিনি বলেন, اعتقاد ركهنا اسطرح بر كه خدائ تعالى ابني ذات سى عرش كى أوبر هي تنزيه كى ساته صحيح وحق هي، كيونكه يه بات قرآن وحديث وإجماع سلف سى ثابت هي اور عقائد كي كتابون مين أهل سنت وجماعت كي موجود هي أور سلف صالحين يعني صحابة وتابعين وتبع تابعين وأئمه مجتهدين رضوان الله عليهم أجمعين وغيره كا بهي يهي اعتقاد تها.. .. . “এ বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সত্তাগতভাবে আরশের উপর সর্বপ্রকার পবিত্রতাসহ এটা বিশুদ্ধ ও হক্ক আকীদা। কেননা এ কথা কুরআন, হাদীস, সালাফে সালেহীনের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত। আর আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদার কিতাবে অবস্থিত। সালাফে সালেহীন, অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরাম, তাবে‘ঈন, তাবে তাবে‘ঈন ও মুজতাহিদ ঈমামগণের সবাই এ আকীদাই পোষণ করতেন।” [ . মাজমু‘আতুল ফাতাওয়া পৃ. ৪৭] . __________________________________________ লেখক: শাইখ ড: আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া হাফিয্বাহুল্লাহ


Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট