মৃত্যুই সুনিশ্চিত আর জীবনটাই অনিশ্চিত।

মৃত্যুই সুনিশ্চিত আর জীবনটাই অনিশ্চিত। .


[১] . "মৃত্যু" এক নির্মম, কঠিন বাস্তবতার নাম। মৃত্যু এমন এক মেহমান, যে দরজায় এসে দাড়িয়ে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দুনিয়ার কারো নেই! মৃত্যু যেকোন বয়সের, যেকোন মানুষের সামনে, যেকোন সময়ে উপস্থিত হতে পারে! এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই! এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।” --- [১] তিনি আরও বলেন - "আপনি বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে। --- [২] . বিগত কয়েকবছর ধরে পরিচিত বহু মুরুব্বি, আত্নীয়, সমবয়সীর মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি। চোখের সামনে মরতে দেখেছি কয়েকজনকে। যখন কারো মৃত্যু সংবাদ শুনি, প্রথম কয়টা দিন খুব অশান্তিতে কাটে, ছটফট করে ভেতরটায়! ঘুরেফিরে একই চিন্তা মাথায় আসে, যে মাত্রই দুনিয়া ছেড়ে গেল, সে এখন কি অবস্থায় আছে! আমি যখন হাসছি, খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি... সে তখন কি করছে আকাশের ওপারে? তার কবরের সওয়াল - জওয়াব কি শেষ! এখন কি সে ইল্লিনে নাকি সিজ্জিনে? . ভাবতে ভাবতে নিজেকে নিয়েও চিন্তাটা চলে আসে। আমার কি হবে এখন মারা গেলে! ভোঁতা হয়ে যাওয়া অনুভূতি যেন পুনরায় শাণিত হয়। খুব বেশী বেশী দোয়া শুরু করি। ঘুমাতে গেলে মনে হয় এটাই শেষ ঘুম নয়তো! খেতে গেলে মনে হয় শেষ খাওয়া নয় তো! বাইরে গেলে মনে হয় আর বাসায় ফেরা হবে কি! দুনিয়াটা তখন অর্থহীন লাগে, সব ধোঁকাবাজি, সব ছলনা। কিন্তু একদিন.. দুদিন...তারপর সব আগের মত হয়ে যায়। আবার গাফিলতি, আবার দুনিয়ার মোহ। তারপর আবারও কারো মৃত্যু সংবাদ...তারপর আবার সেই সচেতনতা.. সেই অস্থিরতা.. সেই ভয়! আবার দুদিন পরেই সব শেষ! অনুভূতি গুলোর ঐ একই প্রবলেম। বেশীদিন স্থায়ী হয়না..........! . [২] . এই দুনিয়াতে আমি, আপনি, আমরা সবাই মুসাফির। এইতো অল্প কিছুদিনের জন্য দুনিয়াতে আসা, হয়ত ফেসবুক আইডিটা লগ-আউট করার মত সুযোগটুকুও পাবো না, অথচ আমরা এক্কেবারেই বেখবর। জানিনা কার কাফনের কাপড় রেডি হয়ে আছে। আজ, এখন, এইমুহূর্তে মরে গেলে দুনিয়ার কোন কিছুই আমার, আপনার কাজে আসবে না! কাজে আসবে কেবল ঈমান ও আমল! এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয়ই মৃত ব্যক্তিকে তিনটি জিনিস অনুসরণ করে! ক.তার পরিবার। খ. তার সম্পদ ও গ. তার আমল। দাফনের পরে দুইটি বস্তু ফিরে আসে এবং শুধুমাত্র একটি বস্তু তার সাথে থেকে যায়। পরিবার ও সম্পদ ফিরে আসে এবং আমল শুধু তার সাথে বাকী থাকে। আমরা বড়ই বোকা! যে সত্যটা আমাদের সবার মাথার উপর ঝুলে রয়েছে সেটা হেলায় এড়িয়ে, যত মিথ্যা আছে তার পিছনে ছুটে বেড়াই। আফসোস! পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিনতম সত্যের নাম হচ্ছে মৃত্যু ! আবার পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্যতম সত্যেটাও হচ্ছে, নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনেও তদ্বানুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহন না করা। নারী, গাড়ী, বাড়ী, দুনিয়াদারী আমাদেরকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলেছে, যেভাবে প্রবল বর্ষনের ফলে বন্যার পানি নিচু অঞ্চলগুলোকে গ্রাস করে ফেলে! তাইতো রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "আদম সন্তান বলে : আমার মাল! আমার সম্পদ! আমার অর্থ! হে আদম সন্তান! তোমার জন্য এই তিনটা ছাড়া আর কিছু কি আছে? যা খাও তা নষ্ট হয়ে যায়, যা পরিধান কর তা শেষ হয়ে যায়, আর যা দান কর তা কি বাকী থাকে? --- [৩] . [৩] . এই দুনিয়া একদিন ছেড়ে যেতেই হবে 'এই বিশ্বাসটুকু আমাদের অন্তরে থাকলেও তার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নেই বললেই চলে। মৃত্যু নিয়ে আমরা তেমন ভাবতে চাইনা, কারণ মৃত্যু নিয়ে ভাবলে যে দুনিয়া নিয়ে ভাবনা কমিয়ে দিতে হবে। অথচ এটাই চিরসত্য যে, মৃত্যুই সুনিশ্চিত আর জীবনটাই অনিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ) বলতেন "লোকমুখে শোনা যায়, উমুক মারা গেছে, তমুক মারা গেছে! এমন একদিন আসবে, যখন লোকেরা বলাবলি করবে যে উমারও মারা গেছে।" . সত্যিই কবর অনেক কষ্টের জায়গা ভাই! আসুন অন্তত রাতে ঘুমানোর আগে একটু মৃত্যু পরবর্তী জীবনের কথা চিন্তা করি এবং নেক আমল করার চেস্টা করি! তবেই কেবল আমাদের কবরটা আলোকিত হবে। প্রখ্যাত তাবেঈ ইমাম হাসান আল বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলতেন, ​”হে আদমের সন্তানেরা! পৃথিবীর মাটির উপরে যতক্ষণ ইচ্ছা করে হেঁটে নাও কেননা খুব শীঘ্রই সেটা তোমার কবরে পরিণত হয়ে যাবে। মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে তো তোমার জীবনের আয়ু কমে যাওয়াকে তুমি ঠেকিয়ে রাখতে পারোনি।” --- [৪] . হে আমাদের রব, আপনার কাছে উত্তম ও বরকতপূর্ণ মৃত্যু এবং কবরের ফিতনা থেকে মুক্তি চাই - আ-মীন। . তথ্যসূত্র: . ১. --- [ সূরা নিসা , আয়াত ৭৮ ] ২. --- [ সূরা আল-জুমু'আহ, আয়াতঃ ০৮ ] ৩. --- [ স্বহীহ বুখারী দ্রঃ ] ৪. --- [ আল-হিলইয়াহ: ২/১৫৫ ]

collected

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট