বাবরি মসজিদের ইতিহাস

 বাবরি মসজিদের ইতিহাস


সত‍্য-সত‍্য-সত্য """"""""""""""""""""""" রাজপুত রাজা রানা সিংহের আমন্ত্রণে জহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবর ১৫২৬ খ্রিঃ পানিপথ আক্রমন করে দিল্লির মুসলিম শাসক ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে ভারতে মুঘল শাসনের সূত্রপাত ঘটান। অযোধ‍্যার শাসক মীর বাকী কে দিয়ে ১৫২৮ খ্রিঃ একটি মসজিদ তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন-যা 'বাবরি মসজিদ' নামে পরিচিত। -----একথা সত্য। 👇 একথা সত‍্য যে, সম্রাট বাবর পরধর্ম বিদ্বেষী ছিলেন না। ইতিহাস সেকথাই বলে। ঐতিহাসিক ডঃ ত্রিপাঠী মহাশয়ের মন্তব্য---"সম্রাট বাবর অমুসলিমদের প্রতি ধর্ম সহিষ্ণু ছিলেন।তাঁর শাসন ব‍্যবস্থায় ধর্মের কোনো প্রভাব ছিলো না। ইতিহাসবিদ ডঃ অমলেন্দু দে তাঁর "ধর্মীয় মৌলবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা" পুস্তকের ১৫৩-৫৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন---" আব্দুল কুদ্দুস গাঙ্গোহি নামে একজন মুসলিম ধর্মগুরু সম্রাট বাবরকে পত্র লিখে শরিয়তী শাসন পরিচালনার পরামর্শ দেন। কিন্তু বাবর তা অমান্য করেন।তিনি হিন্দু প্রজাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা দেন এবং সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে নিযুক্ত করেন। 👇 বাবর কর্তৃক বাবরি মসজিদ নির্মাণের (১৫২৮) মাত্র ৪৪ বছর পর তুলসী দাস মহাশয় ১৫৭২ খ্রিঃ "রামচরিত মানস" রচনা করেন। তুলসী দাস ছিলেন সেই সময়ের একজন একনিষ্ঠ রামভক্ত । তাঁর "রামচরিত মানসে" মন্দির ভেঙে বাবরি মসজিদ নির্মাণের কোনো উল্লেখ নেই।যদি সত‍্যিকার অর্থে তাই হতো,তাহলে এতোবড়ো রামসাধক তা উল্লেখ করে ভুলে যেতেন না। ফলে কোনো মন্দির ভেঙে বাবরি মসজিদ হয়নি এটাই সত্য। 👇 আসলে রাম কোনো রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন না।ভগবানও নয়। তিনি ছিলেন বাল্মিকী রচিত "রামায়ণ" মহাকাব‍্যের এক কল্পিত নায়ক চরিত্র।এটা শুধু আমার কথা নয়। বহু জ্ঞানের রথী মহারথীদের কথা।যেমন--আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ‍্যায় গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন --রাম কোনো ঐতিহাসিক চরিত্র নয়।এবং বর্তমান থাইল‍্যান্ডে(অতীতে শ‍্যামদেশ নামে পরিচিত) আইয়ূথিয়া নামে এক নগরী ছিলো।থাই ভাষায় 'আইয়ূথিয়ার' সংস্কৃত অর্থ হলো-অযোধ‍্যা।অর্থাৎ বোঝা গেলো শ‍্যামদেশের অযোধ‍্যা উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার সরযূ নদীর তীরের অযোধ‍্যা নয়। মাননীয় শ্রীযুক্ত সুশীল শ্রীবাস্তব তাঁর-"দা ডিসপিউটেড মস্ক" পুস্তকের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন---"প্রত্নতত্ত্ববিদ শ্রী বি বি লালের নেতৃত্বে ১৯৭৫-৭৬ সালে আর্কোলজিক‍্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পক্ষে বাবরি মসজিদের পিছনে প্রচুর খননকার্য করা হয়।এবং রিপোর্টে প্রমাণিত হয় যে,খ্রিষ্টের জন্মের ৭০০ বছর পূর্বে অযোধ‍্যায় কোনো জনবসতিই ছিলোনা। তাহলে কি করে উক্ত স্থানে মন্দির থাকার বল ঠোকা হচ্ছে। এটাই সত‍্য। 👇 শতবর্ষধরে অযোধ‍্যার হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশে বসবাস করেছে।তারা ব্রিটিশ দের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করেছে।এই একতাই ইংরেজ শাসনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। তাই 'ডিভাইড এ্যন্ড রুলস' পলিসির খেলায় মেতে উঠে বর্বর ইংরেজ দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পূর্বে হিন্দু মুসলমানের সম্প্রীতিতে ঘুণ ধরিয়ে দাঙ্গার দাবানল জ্বালিয়ে দিয়েছে সারা ভারতবর্ষে।ব্রিটিশ প্রতিনিধি লর্ড ডাফরিন(১৮৮৪-৮৮) হিন্দুদেরকে মুসলিম বিরোধী করে তোলার জন্য একজন বৌদ্ধ জ‍্যোতিষীকে দিয়ে রামজন্মভূমির গল্প ফাঁদিয়েছিল।মহন্ত রঘুবীর দাসকে দিয়ে মামলাও করিয়েছিলো। এ থেকেই বিতর্কের প্রথম সূত্রপাত। এটাই সত‍্য। 👇 একথাও সত‍্য যে,১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ৪২০ বছর ধরে মুসলমানরা মসজিদে নামাজ পড়েছে। ১৯৪৯ সালে রামায়ণ মহাসভার নেতৃত্বে অযোধ‍্যায় সাত দিন ধরে রামায়ণ আবৃত্তি চলেছিলো।২২ শে ডিসেম্বর পূজারী অভয় রামদাসের নেতৃত্বে একদল হিন্দু মধ‍্যরাতে লুকিয়ে মসজিদে ঢুকে মসজিদের মিম্বারে একটি রামের মূর্তি রেখে দেয়। এই কাজের মূল পান্ডা ছিলেন তৎকালীন ফৈজাবাদের জেলাশাসক কে.ডি.নায়ার। এই নায়ার পরবর্তীকালে জনসংঘের লোকসভার সদস‍্যপদ পেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।২৩ শে ডিসেম্বর১৯৪৯ সাল থেকে মসজিদ তালাবদ্ধ হয়ে যায়। চিরতরে নামাজ বন্ধ হয়ে যায়।এরপর চলতে থাকে বিচারের প্রহসন। 👇 ১৯৮৬ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি জেলা বিচারক কে.এম.পান্ডে সংঘ পরিবারের ইচ্ছাতেই মসজিদটি খুলে দেওয়া হয় পূজাপাঠের জন্য। আর পূজাপাঠ শুরু করার জন্য জয় শ্রী রাম ধ্বনি দিয়ে তালা ভাঙেন কংগ্রেসের তাবড় মুখ রাজীব গান্ধী। এটাই সত‍্য। 👇 এরপর উর্বর মাটি পেলো উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি। বিভিন্ন মিছিল ,রথযাত্রা শুরু হলো। সবচেয়ে জঘন্য রথযাত্রা হয়েছিলো এল কে আডবানির নেতৃত্বে। "আমরা বাবরের উত্তরসূরীদের রক্ত দিয়ে হোলি খেলবো"--এই স্লোগানে উন্মত্ত জনতা মেতে উঠেছিলো। এটাই সত‍্য। 👇 এরপর এলো গণতন্ত্রের সেই কালো দিন। ১৯৯২ র ৬ ডিসেম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ঐতিহাসিক সৌধ বাবরি মসজিদ। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় ক্ষত সৃষ্টি হলো। একটি জাতির আস্থা,ভরসা কে চূরমার করে দেওয়া হলো। বড়ো বড়ো নামজাদা নেতারা নিরব থাকলেন। মৌন সমর্থন থেকেই এই নিরবতা।দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার সাথে চললো মুসলিম নিধন। কোনো দল একে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেনি। এটাই বাস্তব। 👇 তারপর প্রায় তিনদশক ধরে চললো মন্দির মসজিদ রাজনীতি।সংখ‍্যালঘু সম্প্রদায়কে কেউ ন‍্যায়বিচার দিতে পারলোনা। আদালতও সংখ‍্যার রক্তচক্ষুকে ভয় পেলো। সংঘীদের প্রভাবিত হয়ে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিলো অন‍্যায় রায়ের মাধ‍্যমে। 👇 ৫ অগাস্ট ২০২০ ,মহা আড়ম্বরে মসজিদের দখলকৃত জায়গায় রামমন্দিরের ভূমি পূজার আরতি বেজে উঠলো। এতে কি হিন্দু ধর্ম গর্বিত হলো? নাকি ইট,কাঠ,কংক্রিট,রত্ন ,উপচার উপকরণগুলি ভেতরে ভেতরে লজ্জিত হলো?নাকি সময়ের প্রবাহ পথে ন‍্যায় বিচারের জন্য অপেক্ষায়মান থাকলো? আর যিনি দেশের সংবিধান ও বৃহত্তম গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষার্থে শপথ নিয়েছিলেন (যিনি হিন্দুরাস্ট্র বা মনুসংহিতার উপর শপথ নেন নি) তিনি এই কাজের প্রধান পরিচালক হিসাবে গর্ববোধ করলেন।এযেন সারাবিশ্বে গণতন্ত্রের এক কলঙ্কিত অপমানিত ইতিহাস রচিত হলো। : " আমি চিরতরে দূরে সরে চলে যাবো তবু আমারে দেব না ভুলিতে" ---- মুসলমানদের হৃদয় থেকে এই ক্ষত মুছে যাবেনা।শুধু মুসলমান নয়, নিরপেক্ষ শান্তিকামী মানুষও এই কালো স্মৃতি বহন করে বেড়াবে।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট