মাযহাব মানা - না মানা!

 ▌মাযহাব মানা - না মানা!


________________________ মাযহাব মানা যাবে কি যাবে না, সে বিষয়ে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে কেউ কেউ অসত্য তথ্য প্রচার করে থাকেন। তাদের কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি, চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাব অনুসরণ করাকে সৌদি আরবের আলেমগণ দোষণীয় মনে করেন না। জী, আমি তাদের সাথে একমত পোষণ করছি। সৌদি আরবের ওলামায়ে কেরাম এমনটিই মনে করেন। তবে কথা এখানেই শেষ নয়। কারণ, এটুকু বলে থেমে গেলে স্বার্থের জন্য তাঁদের আংশিক বক্তব্য প্রচার করা হবে। . সঠিক কথা হলো, তাঁরা নির্দিষ্ট একটি মাযহাবের অনুসরণ জায়েয মনে করেন এ শর্তে যে, মাযহাবের প্রতিটি ফৎওয়া সর্বাবস্থায়, সর্বযুগে চোখ বন্ধ করে মেনে নেওয়া যাবে না। কারণ, তাদের ভুল হওয়া স্বাভাবিক। সেকারণে শুধুমাত্র তাদের দলীল ভিত্তিক ফৎওয়া অনুসরণ করতে হবে। . (ফাতাওয়াহ আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ৫/২৮) . . আসলে মাযহাব বিষয়ে সৌদি আরবের ওলামায়ে কেরাম এবং বাংলাদেশের আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। . ১- বাংলাদেশের হানাফী আলেমগণ যে কোন এক মাযহাব মানাকে ফরয মনে করেন এবং নিজেরাও মাযহাবী গোঁড়ামির কারাগারে আবদ্ধ। পক্ষান্তরে সৌদি আরবের আলেমগণ নির্দিষ্ট এক মাযহাব অনুসরণ করাকে ফরয মনে করেন না, এমনকি এক মাযহাবের সকল ফৎওয়া চোখ বন্ধ করে মেনে নেওয়াকে বৈধই মনে করেন না। . (ফাতাওয়াহ আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ৫/৫৬) . . ২- বাংলাদেশের হানাফী আলেমগণ সারা বিশ্বের মুসলিমদেরকে শুধুমাত্র চার মাযহাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে, এমনটিই মনে করেন। পক্ষান্তরে সৌদি আরবের আলেমগণ প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামদের পাশাপাশি অন্যান্য ইমামদের ফৎওয়া অনুসরণ করাকে বৈধ মনে করেন। যেমনঃ সুফিয়ান আস-সাওরী, আওযাঈ প্রমুখ ফকীহগণ। এমনকি দলীল ভিত্তিক ফৎওয়া অনুসরণের ক্ষেত্রে চার ইমামের সাথে অন্যান্য ইমামদের কোন পার্থক্য করেন না। . (ফাতাওয়াহ আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ৫/৪১) . . ৩- বাংলাদেশের হানাফী আলেমদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, হানাফী মাযহাবের ফৎওয়া ছাড়া অন্যান্য সব মাযহাবের ফৎওয়া ভুল। সেকারণে কেউ অন্য মাযহাবের কোন ফৎওয়া অনুসরণ করলে তাকে মসজিদ থেকে বের করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এমনকি কাউকে কাউকে এলাকা ছাড়াও করে। সেগুলো নিয়ে বক্তৃতায় ঠাট্টা-তামাশা পর্যন্ত করে। রাফউল ইয়াদাইন, বুকে হাত বাধার স্পষ্ট সহীহ হাদীস থাকার পরও শুধুমাত্র মাযহাবে না থাকার কারণে সেগুলো নিয়ে ব্যঙ্গ করার একাধিক প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। অথচ উনারাই আবার চার মাযহাবকে হক্ব বলে থাকেন। . চার মাযহাব যদি হক্ব হয়, তাহলে অন্য মাযহাবের ফৎওয়াকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার অর্থ কি? আসলে এখানে অন্য মাযহাবকে হেয় করা হয়নি; বরং হেয় করা হয়েছে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাঁটি সুন্নাতকে। পক্ষান্তরে সৌদি আরবের আলেমগণ হাম্বালী মাযহাবের অনুসারী হলেও শুধুমাত্র হাম্বালী মাযহাবকে হক্বের মানদন্ড মনে করেন না; বরং অন্য মাযহাবের দলীল শক্তিশালী হলে সেটাকেই তাঁরা গ্রহণ করেন। যেমনঃ হাম্বালী মাযহাবে নারীদের ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত নেই। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার নিকট ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত আছে। . শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল উসায়মিন সহ সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামায়ে কেরাম ইমাম আবু হানিফার এ ফৎওয়া গ্রহণ করেছেন, এমনকি শাইখ উসায়মিন এর স্বপক্ষে একটি পুস্তিকাও রচনা করেছেন। এরকম শত শত উদাহরণ তাঁদের গ্রন্থগুলোতে পাবেন। . ৪- সৌদি আরবের আলেমদের আলোচনায় কমপক্ষে ৬০% বা ৭০% কুরআনের আয়াত বা হাদীস থাকে। আর বাংলাদেশের বেশীরভাগ হানাফী আলেমদের আলোচনার হাল-হাকিকত আপনাদের সবার জানা। . পৃথিবীতে এমন কোন শিরক-বিদআত নেই, যা আমাদের দেশে হয় না। মৃত্যু কেন্দ্রিক কমপক্ষে ৫০টি বিদআত আমাদের সমাজে চালু আছে। . আপনাদের মত শিরক-বিদআত, মাতুরিদি-আশ'আরী সহ যাবতীয় ভ্রান্ত আক্বীদা মিশ্রিত হানাফী মাযহাব অনুসরণ করাকে তারা কখনই জায়েয মনে করেন না। তাঁরা ফিকহে হাম্বালী অনুসরণ করলেও আপনাদের মত নিজ মাযহাবকে হক্বের মানদন্ড মনে করেন না; বরং অন্য মাযহাবের ফৎওয়া দলীল সহ অকপটে প্রচার করেন। . ৬- সৌদি আরবের সব মানুষ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও ইসলামের ফরয বিধানগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদি বিষয়েও মোটামুটি ধারণা রাখেন। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের অনেক মানুষ এমন কিছু সুন্নাত রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান রাখে না বা জানেই না যে, এটা সুন্নাত যেমনঃ সলাতুল কুসূফ-খুসূফ, সলাতুল ইসতিসক্বা ইত্যাদি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ সলাতুল কুসুফ-খুসূফ অনেক ওলামায়ে কেরামের নিকট ওয়াজিব। এর জন্য দায়ী কি সাধারণ মানুষ? অবশ্যই না। কারণ, আলেমরা সমাজে এসমস্ত বিধিবিধানগুলো বাস্তবে পালন করলে সাধারণ মানুষ এগুলো সম্পর্কে অবশ্যই জানতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত বহু সুন্নাতী আমল বইয়ের পাতায় রয়ে গেছে। আর যত জাল-যঈফ হাদীস আছে সবগুলো মানুষের মাঝে এমন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তাদেরকে এগুলো থেকে সতর্ক করলে ফিৎনা সৃষ্টি করছে বলে অপবাদ দেয়। . . আমি এ লিখার মাধ্যমে কাউকে ছোট করতে চাচ্ছি না। আমার বলার উদ্দেশ্য হল, মাযহাবের নামে আমাদের দেশের শরীআত বিরোধী বহু কার্যকলাপকে বৈধ প্রমাণ করতে সৌদি আরবের ওলামায়ে কেরামের মতামতকে অনেকে ব্যবহার করে থাকেন। তাদের সেই অপব্যবহার এবং অপব্যাখ্যার জবাব দেওয়াই ছিল আমার উদ্দেশ্য। আমি বলতে চাইনি, ইসলাম প্রচারে আমাদের দেশের হানাফী আলেমদের অবদান শূন্য। অনেকে বুঝার পরও হিকমতের দোহাই দিয়ে যুগের পর যুগ ধরে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। . সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাবো, আসুন! গোঁড়ামি, জেদ- অহংকার পরিহার করে জাতিকে ইসলামের সঠিক নির্দেশনা দিতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করি। . . লেখক: উস্তায ডক্টর আব্দুল্লাহিল কাফী লুতফর রহমান হাফিয্বাহুল্লাহ

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট