মুসতাজাবুদ দাওয়াহ
চারদিকে নিকষ কালো আঁধার। কনকনে শীতের রাত। পথ চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একে তো বয়সের ভারে ন্যুব্জ তিনি, তার ওপর অচেনা শহর। দূরে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথ ফুরোবার আগেই রাত্রি এসে হাজির! কী আর করা, এখানেই কারও বাসায় আশ্রয় নিতে হবে। কিন্তু এত রাতে কে তাকে আশ্রয় দেবে? কে তাকে থাকতে দেবে? চিন্তার ছাপ তার সমগ্র বদনে। রবের নাম জপে তিনি আবারও হাঁটতে শুরু করেন। . হাঁটতে হাঁটতে ভীষণ ক্লান্ত। হঠাৎ চোখে পড়ে, অল্পকিছু দূরে ক্ষীণ আলোর ঝলকানি। সুবহানাল্লাহ, এ যে একটা মসজিদ! ভেতরে প্রবেশ করতে যাবেন, আচমকা পথ রুখে দাঁড়াল মসজিদের খাদেম। ‘রাতে মসজিদে থাকা যাবে না।’ সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন তাকে। ‘বাবা, আমাকে একটু থাকতে দাও। ভোরের আগেই আমি চলে যাব। কেউ দেখবে না আমাকে।’ ‘না, সম্ভব না। আপনি বের হোন মসজিদ থেকে।’ ‘বাবা, একটু দয়া করো আমার প্রতি। এত রাতে আমি কোথায় যাব?’ ‘সে আমি কী জানি! বের হোন বলছি। এক্ষুনি বের হোন।’ . আর কথা বাড়ালেন না তিনি। বিষাদে ভরে গেল তার মন। দয়াময় প্রভু এ কোন পরীক্ষায় ফেললেন তাকে? দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আবারও হাঁটতে শুরু করলেন। হাঁটছেন তো হাঁটছেন। পথ যেন আর ফুরোতে চায় না। চলে এলেন এক বাজারে। দেখলেন, এক যুবক আটার খামির থেকে রুটি বেলছে আর চুলার আগুনে সেঁকে দিচ্ছে। . কিছুটা ভয় আর কিছুটা সংকোচ নিয়ে যুবকের পাশে বসলেন তিনি। শুধালেন, ‘বাবা, শীতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি যদি এখানে বসে একটু আগুন পোহাই, তোমার কাজে কি ব্যাঘাত ঘটবে?’ যুবক মুচকি হেসে উত্তর দিল, ‘ব্যাঘাত ঘটবে কেন? আরাম করে বসেন এখানে। কোনো সমস্যা নেই।’ . সময় গড়িয়ে যায়। যুবক খামির বানায়। রুটি বেলে। আগুনে সেঁকে। ক্রেতা আসে। রুটি নিয়ে যায়। বৃদ্ধ লোকটি রবের নাম জপছেন আর যুবার রুটি বানানো দেখছেন। হঠাৎ তিনি খেয়াল করেন, যুবক সুযোগ পেলেই বলে ওঠে, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ. . . যুবার কাছে প্রবীণের প্রশ্ন, ‘এই যে তুমি এত বেশি ইস্তিগফার পড়ছ, কোনো ফায়দা পেয়েছ এর থেকে?’ ‘জি, পেয়েছি। বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়ার কারণে আল্লাহ আমাকে মুসতাজাবুদ দাওয়াহ বানিয়ে দিয়েছেন!’ . বৃদ্ধের চোখে তখন রাজ্যের বিস্ময়। অপলক নয়নে তাকিয়ে আছেন যুবার দিকে। এতদিন ধরে দ্বীনের এত খিদমত করে যাচ্ছেন, তারপরও তিনি মুসতাজাবুদ দাওয়াহ হতে পারলেন না। অথচ এই রুটিওয়ালা যুবক বলছে সে কিনা মুসতাজাবুদ দাওয়াহ! এ কী করে সম্ভব? . বৃদ্ধ অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘তুমি যে দোয়া করো, সে দোয়াই কবুল হয়ে যায়?’ ‘জি, হ্যাঁ। এ পর্যন্ত আমি যত দোয়া করেছি, আল্লাহ আমার সব দোয়াই কবুল করেছেন। কেবল একটি দোয়া ছাড়া।’ প্রবীণ এবার আরও বেশি কৌতূহলী, ‘তোমার কী এমন চাওয়া রয়েছে, যা আল্লাহ এখনো পূরণ করেননি?’ ‘আমি মৃত্যুর আগে এ যুগের সবচেয়ে বড় আলিম, সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিস ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বালকে একটিবার দেখে যেতে চাই।’ . যুবার উত্তর শুনে বয়স্ক লোকটি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। যুবককে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আল্লাহ তোমার এই দোয়াটিও কবুল করেছেন! আমিই আহমাদ ইবনু হাম্বাল।
collected
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন