কিয়ামতের দিন

 


কিয়ামতের দিন আপনি একা একা আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবেন। তখন কিছু যোগ্যতা নিয়ে আপনাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। এই পৃথিবীতে থাকাবস্থায় আপনাকে সেগুলো অর্জন করতে হবে। কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে তা আল কুরআন আপনাকে শেখাবে। আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে, সৎ হতে হবে, আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে, আপনাকে দয়ালু হতে হবে, মানুষকে সাহায্য করতে হবে, আপনাকে আপনার রবের ইবাদাত করতে হবে, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, বিনয়ী হতে হবে... এই পৃথিবীতে অবস্থানকালীন সময়ে আপনাকে এই যোগ্যতাগুলো অর্জন করতে হবে। আপনার হয়তো এই যোগ্যতাগুলো এখন নেই, কিন্তু আপনাকে এগুলো নিজের মাঝে তৈরি করতে হবে এবং এগুলোকে ক্ৰমান্বয়ে উন্নত করে যেতে হবে। আর মৃত্যুপর্যন্ত আপনাকে এই কাজ করে যেতে হবে। এই কিতাব আপনাকে এটাই শেখাবে। সহজ কথায়, এই বই আপনাকে শেখাবে কিভাবে ভালো মানুষ হতে হয়।

যখন জন্ম গ্রহণ করেন তখন আপনি ভালো বা খারাপ কোনোটাই নন। আপনাকে ভালো হওয়ার সামর্থ্য দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর যখন মারা যাবেন আপনাকে অবশ্যই ভালো মানুষ হিসেবে মারা যেতে হবে। যদি খারাপ মানুষ হিসেবে মারা যান কোনো কিছুই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না। আপনি খারাপ মানুষ তখন এটাই হবে আপনার পরিচয়। আর যদি ভালো মানুষ হিসেবে মারা যান তাহলে 'ভালো মানুষ' হবে আপনার পরিচয়। তখন আপনার ভালো চরিত্র, ভালো আচার-ব্যবহার, ভালো যোগ্যতাসমূহ আপনাকে সাহায্য করবে। চারপাশে যত বস্তুগত জিনিস রয়েছে আপনার বেঁচে থাকার জন্য সেগুলো প্রয়োজন। কিন্তু সেগুলো আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না, আপনার পরিচয় বহন করে না। আপনার কর্ম আপনার পরিচয় বহন করে। আপনার টাকা আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না, আপনার বাড়ি আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না, আপনার খাবার-দাবার আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না, আপনার বংশ পরিচয় আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না, আপনাকে যা সংজ্ঞায়িত করে তা হল আপনার কর্ম। আমরা খাই এবং পান করি বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু কোন উদ্দেশ্যে আমাদের এই বেঁচে থাকা? এই বেঁচে থাকার তো একটি উদ্দেশ্য থাকা উচিত। আল কুরআন আপনাকে সেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষা দিবে। ভালো মানুষের যোগ্যতাগুলো অর্জন করার জন্যই আমরা এই পৃথিবীতে বেঁচে আছি। এখন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য আপনাকে অনেক পরীক্ষা দিতে হবে। ঐ পরীক্ষাগুলো ছাড়া আপনি কখনো ভালো মানুষ হতে পারবেন না। অর্থাৎ, আপনার জীবনে কঠিন সময় আসবেই। কারণ ঐ কঠিন সময়গুলো ছাড়া আপনার ভালো চরিত্রের কথা কোনোদিন জানা যাবে না। আপনাকে অবশ্যই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, তবেই আপনি ধৈর্য ধারণ করার যোগ্যতা অর্জন করবেন। আপনার আশেপাশের লোকজন আপনার কাছে টাকা চাইবে, কারণ আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষা করতে চান আপনি দয়ালু কিনা। আপনার দয়াশীলতা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। শুধু পরীক্ষা নয় আসলে, বরং এই দয়া দেখানোর মাধ্যমে আপনি দিন দিন দানশীল মানুষে পরিণত হবেন এবং ক্রমান্বয়ে এই দানশীলতার বিকাশ ঘটবে। আর এই দানশীলতার উন্নতির জন্যই আপনাকে এমন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। মানুষ আপনার কাছে টাকার জন্য, খাবারের জন্য, সাহায্যের জন্য আসবে। এটা সবসময় ঘটবে। আপনি যখন এভাবে ভালোর যোগ্যতাগুলো অর্জনে সচেষ্ট হবেন তখন এমন অনেক মানুষ থাকবে যারা আপনার এই পরিবর্তন পছন্দ করবে না। তারা চাইবে আপনি যেন তাদের মতো ভ্রষ্টতার জিন্দেগী যাপন করেন। তখন আপনি কী করবেন? আপনি কি তাদের শেষ করে দিবেন? না, কুরআন কখনো এই শিক্ষা দেয় না। কারণ এটা আপনার এবং তাদের জন্য একটি পরীক্ষা। কখনো কখনো তারা শুধু আপনাকে অপছন্দ করার মাঝে সন্তুষ্ট থাকবে না, তারা আপনার বিরোধিতা করবে। তখন কী করবেন? আল কুরআন আপনাকে শিক্ষা দিবে কিভাবে এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করবেন। এই বই আপনাকে বলবে ভালো মানুষ হতে আর ভালো মানুষ হওয়ার এই ভ্রমণে আপনি কঠিন পরিস্থিতি এবং সমস্যার মুখোমুখি হবেন। এই কঠিন পরিস্থিতি এবং সমস্যাগুলো আপনাকে আরো উন্নত মানুষ হতে সাহায্য করবে। এগুলো আসবে আপনাকে উন্নত করার জন্য, সাহায্য করার জন্য। মানুষ যখন চাইবে আপনি যেন সঠিক পথ অনুসরণ না করেন, তখনো আপনার একটি বিষয় শেখার আছে। এটা আপনাকে আরো ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ: আপনি যখন বিয়ে করবেন তখন আপনি যেমনটা আশা করেছিলেন আপনার স্বামী বা স্ত্রী তেমনটা হবে না। আর আল্লাহ চান এমনটি যেন না হয়। কেন? কারণ স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বিবাহ একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া। আপনি এখানে শিখবেন কিভাবে একত্রে বসবাস করতে হয়। কখনো কখনো আপনার পার্টনার সমস্যায় পড়তে পারে, আপনার তখন তাকে সাহায্য করতে হবে। কখনো কখনো সে হয়তো আপনাকে সাহায্য করবে না, আপনার সমালোচনা করবে, ঝগড়া হবে, বিভিন্নরকম সমস্যা দেখা দিবে। প্রতিটি সমস্যা আসবে আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য, আপনাকে উন্নত করার জন্য। আপনি শিখবেন কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কিভাবে দয়া দেখাতে হয়, কিভাবে প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হয়, কিভাবে খোঁটা দেয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। আপনার পার্টনারকে আপনার অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে যাবেন না। কখনো কখনো আপনার পার্টনার হয়তো আপনাকে সাহায্য করবে না, কিন্তু তবু আপনার উচিত তাকে সাহায্য করা। এভাবে আপনি যখন সাহায্য করবেন তখন আপনি আল্লাহর সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে একজন দয়ালু মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। আর আমলনামায় যখন দয়ালু মানুষ হিসেবে আপনার নাম লেখা হবে, ক্বিয়ামতের দিন এই লেখা আপনাকে সাহায্য করবে। —ড. আকরাম নদভী
source-nak in bangla/youtube

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট