আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাঃ)
নবুওয়াতের পর থেকেই কুরাইশরা অত্যাচার করে আসছে। নাবুওয়াতের ১২ টা বছর কেটে গেছে এখনো নির্যাতন চালিয়েই যাচ্ছে। কুরাইশদের অত্যাচারে মুসলিমদের জীবন এখন হুমকিরমুখে। হঠাৎ আশার আলো ফুটলো। ইয়াসরিবের (মদিনা) থেকে রাসুল (সাঃ) আহ্বান করলেন ওখানে বসবাস করার জন্য। তারা সেখানে পূর্ণ নিরাপত্তা দেবেন এবং তাঁরাও ইসলামের দীক্ষায় দীক্ষিত হবেন। ইয়াসরিববাসীর সঙ্গে গােপনে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন, দু-একজন করে মদিনায় চলে যেতে। যেতে হবে গােপনে, যাতে করে মক্কার কাফেররা জানতে না পারে। তবুও তারা জানতে পেরে গেলেন। তবু গােপনে গোপনে অনেক সাহাবি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে চলে গেলেন। রাসুল (সাঃ) মদিনায় চলে যাওয়ার মনস্থির করে ফেলেছেন। শুধু আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা। যেদিন নির্দেশ আসবে, সেদিনই রওনা হয়ে যাবেন মদিনার পথে। একদিন দুপুরবেলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আবু বকরের (রাঃ) বাড়িতে এলেন। আজ আবার কী কারণে যেন রাসুল(সাঃ) তার মুখটা চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। আবু বকরের (রাঃ) দুই কন্যা আয়েশা (রাঃ) ও আসমা বাবার কাছে বসে ছিলেন। বাড়িতে আবু বকর ও তাঁর দুই কন্যা ছাড়া আর কেউ ছিল না। রাসুলকে (সাঃ) এমন সময় তাঁর বাড়ির দিকে আসতে দেখে আবু বকর সচকিত হয়ে বলে উঠলেন,“নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু ঘটেছে। নয়তাে অসময়ে রাসুল (সাঃ) আসার কথা নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঘরের বাইরে থেকে সালাম দিয়ে। ঘরে ঢােকার অনুমতি চাইলেন। আবু বকর (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে ভেতরে আসতে বলে খাটের একদিকে সরে বসলেন যাতে রাসুল (সাঃ) বসতে পারেন। আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে ভেতরে আসতে দেখে ঘরের একদিকে সরে গেলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ঘরে ঢুকে বসলেন কিন্তু ঢোকার সময় খেয়াল ই করেন নি যে ঘরে আয়েশা রাঃ ও আসমা আছেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) শান্ত হয়ে বললেন, 'আমাকে মক্কা থেকে হিজরত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আবু বকর এ কথা শােনার পর জানতে চাইলেন, 'আমি কি আপনার সঙ্গী হতে পারব, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যা, তুমিও আমার সঙ্গী। আবু বকর (রাঃ) সঙ্গী হবার খুশিতে কান্না ভরা ছলছল চোখ নিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ), আপনার জন্য আমার মা-বাবা উৎসর্গিত হােক! আপনি যেদিন মদিনায় হিজরতের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, সেদিন থেকে আমি দুটো উট কিনে প্রতিপালন করছি।' রাসুল (সাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর বাড়িতেই বসে থাকলেন আঁধার নামার অপেক্ষায়। আর আবু বকর (রাঃ) শুরু করে দিলেন সফরের প্রস্তুতি। সর্বোপরি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম গােপনসূত্রে জানতে পেরেছেন, আজ রাতে তাকে হত্যা করার জন্য আবু জেহেলসহ অন্য কুরাইশনেতারা মিলিত হয়েছে। রাতের আঁধারে তারা মুহাম্মদ (সাঃ) কে দুনিয়ার বুক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। রাসুল সাঃ তাঁর চাচাতো ভাই আলী (রাঃ) কে আবু বকর (রাঃ) এর বাড়িতে তে ডেকে এনে দায়িত্ব দিলেন, মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে যেই আমানত রাখা হয়েছিল সেগুলো যেন তাদের সযত্নে ফিরিয়ে দিতে পারেন। আবদুল্লাহ ইবনে উরাইকিকে ডেকে পাঠানাে হলাে। আবু বকর দুটো উট কিনে তাঁর কাছে পরিচর্যার জন্য রেখেছিলেন। তাকে জানিয়ে দিলেন, তিনি যেন উট দুটোকে আগামী দুই দিন সফরের জন্য প্রস্তুত করেন। তিন দিন পর নির্দিষ্ট সময়ে উট দুটো নিয়ে মক্কার পেছনে নিম্নভূমির নির্দিষ্ট স্থান সাওর’ পর্বতের পাদদেশে চলে আসেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে সেখান থেকেই তাঁরা মদিনার পথে রওনা হবেন। তিনি একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শক ছিলেন। মদিনার পথ সম্পর্কে তার ভালাে ধারণা ছিল। তিনিই রাসুল (সাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) কে পথ দেখিয়ে মদিনায় নিয়ে যাবেন। পরিকল্পনাঅনুযায়ী আবু বকরে (রাঃ) ছেলে আবদুল্লাহকে ডাকা হলাে। তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হলাে-তারা মক্কা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর সে সারা মক্কাতে ঘুরে রাসুল (সাঃ) কে বিষয়ে কি বলে না বলে সব খবরাখবর রাখতে এবং সন্ধ্যার সময় এসে খোঁজ খবর এসে জানাতে এবং পরিবারের খেয়াল রাখতে। এরপর ডাকা হলাে আবু বকরের মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস আমের ইবনে ফুহাইরাকে। তাকে মেষ চড়ানোর, তাদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য দুধ সরবরাহ এবং কুরাইশদের এই পর্বতের দিকে আসতে দেখলে সংকেত দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন। আর আসমা কে সন্ধ্যায় খাবার দেওয়ার দায়িত্ব অর্পন করলেন। তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বাহওয়া সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করছেন সাহসের সাথে। আয়েশা রাঃ কে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি কেননা সে তখন ছোট্ট কিশোরী। রাত ঘনিয়ে এল মক্কা পল্লিতে। রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম চোখের জলে সিক্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন। এবার আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) যাত্রার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম শেষ একবার তাকালেন আয়েশা (রাঃ) এর দিকে এবং একটু মুচকি হেসে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলন হিজরতের উদ্দেশ্যে। আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাঃ) || উম্মুল মুমিনিন || ~জান্নাতুন নেসা তারিন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন