আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাঃ) - সপ্তম অংশ


একদিন রাসুল (সাঃ) দোয়া করছিলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে নিঃস্বদের সঙ্গে থাকতে দিন, নিঃস্ব হিসেবে আমার মৃত্যু দিন এবং কিয়ামতের

দিন আমি যেন নিঃস্ব হয়েই আপনার সামনে দাঁড়াতে পারি। আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর এমন দোয়া শুনে জিজ্ঞেস করলেন,‘এমন কেন বলছেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)? ' রাসুল (সাঃ) জবাব দিলেন, কারণ হলাে, নিঃস্বরা ধনীদের চেয়ে ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে আয়েশা (রাঃ) ! গরিব ও অসহায়দের ভালােবাসাে, তাদের নিজের আগলে রাখো, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহও তােমার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন।' এক রাতে রাসুল (সাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) ঘুমিয়ে ছিলেন। রাসুল (সাঃ) যখন বুঝতে পারলেন আয়েশা (রাঃ) ঘুমিয়ে গেছেন, এবং সাবধানে একা বাইরে বেরিয়ে এলেন। আয়েশা (রাঃ) ঘুমাননি ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিলেন এতক্ষণ। তিনি ভাবলেন তাঁর অগোচরে রাসুল (রাঃ) অন্য স্ত্রীদের সাথে সময় কাটাচ্ছেন তাই পিছু নিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে চলেছেন। চলতে চলতে তিনি মসজিদে নববি থেকে একটু দূরে অসংখ্য সাহাবির কবরগাহ জান্নাতুল বাকিতে এসে পৌঁছালেন। জান্নাতুল বাকিতে পৌছে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বেশ কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর আকাশের দিকে দুই হাত তুলে দোয়া করলেন। রাসুল (সাঃ) যেন বুঝতে না পারে তাই আয়েশা (রাঃ) জলদি এসে কাঁথা মুরি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও ঘরে এসে শুয়ে পড়লেন। শুয়েই বুঝতে পারলেন আয়েশা (রাঃ) এর শ্বাসপ্রশ্বাস অস্বাভাবিক, তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে, বুক দ্রুতবেগে ওঠানামা। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে আয়েশা (রাঃ)! তিনি বললেন কিছু না। রাসুল (সাঃ) বললেন তুমি বলবে না সর্বোজ্ঞ আল্লাহর কাছে থেকে জেনে নিবো! আয়েশা (রাঃ) তখন পুরো ঘটনা বললেন এবং লজ্জিত হলেন। রাসুল (সাঃ) খুনসুটি করে আয়েশা (রাঃ) কে চিমটি কাটলেন। আয়েশা (রাঃ) মৃদু ব্যথায় হেসে উঠলেন। এরপর রাসুল (সাঃ) বললেন, কখনাে এমন ধারণা করাে না যে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তােমার সঙ্গে বেইনসাফি করবেন।' এমন আরেক রাতেই হয়েছে, আয়েশা (রাঃ) দেখলেন রাসুল (সাঃ) পাশে নেই কিন্তু হাত বাড়াতেই দেখতে পেলেন তিনি রব্বের সামনে সেজদারত। রাসুল (সাঃ) স্বর্নের গহনা অপছন্দ করতেন। আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর চোখে নিজে সাজানোর জন্য স্বর্নের চুড়ি পড়েছিলেন। কিন্তু রাসুল (সাঃ) নিষেধ করায় কোনো অজুহাত না দেখিয়ে তার থেকে কম দামী চুড়ি পরিধান করতেন। আয়েশা (রাঃ) অন্যান্য স্ত্রীদের থেকে একটু রাগী ছিলেন কম বয়স তো! একবার রাসুল (সাঃ) স্ত্রী সাফিয়্যাহ (রাঃ) ভালো খাবার রান্না করায় আয়েশা (রাঃ) ঘরে রাসুল (সাঃ) এর জন্য দাসির হাত দিয়ে খাবার পাঠিয়েছিলেন। সেইদিন আয়েশা (রাঃ) ঘরে থাকার দিন ছিল। সেহেতু খাবার পাঠানোতে তাঁর আত্মসম্মানে লাগে এবং তিনি খাবারসহ মাটির পাত্র ছুড়ে ফেলে দেন। আর রাসুল (সাঃ) শান্ত ভাবে সেই ভাঙ্গা অংশ কুড়াতে কুড়াতে বললেন দাসীকে, তোমার আম্মাজানের রাগ দেখেছো! পরে রাসুল (সাঃ) বললেন, একসময় এমন বাটি আর খাবার সাফিয়্যাহ (রাঃ) কে দিয়ে এসো। পরবর্তিতে আয়েশা (রাঃ) অনুতপ্ত হয়ে দিয়েন আসেন। আয়েশা (রাঃ) যেমন রাগী ছিলেন তেমন প্রেমময়ী ও ছিলেন। রাসুল (সাঃ) এর সাথে খুনখুটি করতেন। একদিন আয়েশা (রাঃ) অযু করছিলেন এবং রাসুল (সাঃ) মসজিদে নববীর দিকে যাচ্ছিলেন। তখনি আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলেন এবং রাসুল (সাঃ) ও পানি দিয়ে বদলা নিয়ে নিলেন। দেখো আয়েশা (রাঃ) আমি কিন্তু বদলা নিয়েছি। কোরআনে কিন্তু বদলার কথা বলা হয়েছে। এই বলে দুজনে হাসিতে মেতে উঠলেন। আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর অপমান মোটেও সহ্য করতে পারতেন না। এক ইহুদির সাথে রাসুল (সাঃ) এর সাথে দেখা করতে আসলেন এবং অভিশাপ দিলেন, আল্লাহ আপনার মৃত্যু দান করুক। তখন সেখানে আয়েশা (রাঃ) ছিলেন। তিনি তো রেগেমেগে আগুন! অনেক কথা বললেন সেই ইহুদি কে। রাসুল (সাঃ) বললেন আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন, তুমি শান্ত হও আয়েশা (রাঃ)। আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাঃ) - সপ্তম অংশ || উম্মুম মুমিনিন || জান্নাতুন নেসা তারিন
Source-md rehad sarker/youtube

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট