ইসলামের সৌন্দর্য (ষষ্ঠ পর্ব)


ইবাদাত সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া কতোগুলো রিচ্যুয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, আমরা মনে করি শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রামাদ্বানের রোজা রাখা, মসজিদে সাদকা করার মধ্যেই বুঝি ইসলাম সীমাবদ্ধ। এরকম পাঁচ-সাতটি রিচ্যুয়াল কেউ ভালো মতো করলেই সে ‘ভালো মুসলিম’ বলে স্বীকৃতি পায়, পরহেজগার বলে পরিচিতি লাভ করে।

কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেখলে বুঝা যায় যে, ‘ভালো মুসলিম’ হতে হলে শুধুমাত্র রিচ্যুয়ালই যথেষ্ট নয়। ভালো মুসলিম হবার জন্য আল্লাহর সাথে যেমন সম্পর্ক স্থাপন করতে হয় (নামাজ, রোজা, হজ্ব পালনের মাধ্যমে), তেমনি মানুষের কাছেও ভালো হতে হয়। অর্থাৎ, মানুষের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। মানুষের প্রতি কর্তব্য যথাযথ পালন করতে না পারলে কেউ ভালো মুসলিম হতে পারে না। নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন হাদীস থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করা, মানুষকে কষ্ট না দেওয়াও ‘ভালো মুসলিম’ –এর পরিচয়। যেমন: “সেই প্রকৃত মুসলিম, যার জিহ্বা এবং হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ।” [সহীহ বুখারী ১০] “যে ব্যক্তি আমাদের ছোটোদের স্নেহ করে না এবং বড়োদেরকে সম্মান করে না, সে আমাদের (মুসলিম) অন্তর্ভুক্ত নয়।” [সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪৩] “যে ব্যক্তি জ্ঞাতসারে তার প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে তৃপ্তিভরে খেয়ে রাত যাপন করে, সে আমার প্রতি ঈমান আনেনি।” [তাবরানি ৭৫১] এছাড়াও আরো অসংখ্য হাদীসে দেখা যায় যে, মানুষের সাথে সম্পর্ককে ঈমানের সাথে লিংক করা হয়েছে। অর্থাৎ, ভালো মুসলিম হতে হলে অবশ্যই ভালো মানুষ হতে হবে। অনেকেই বলে থাকেন যে, ‘মুসলিম/হিন্দু/খ্রিস্টান না হয়ে আগে মানুষ হোন’। অর্থাৎ, ধার্মিক হলে মানবতা থাকবে না, মানবতা থাকার জন্য ধার্মিক না হয়ে মানুষ হতে হবে। অথচ ইসলাম আমাদেরকে যেমন আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে বলে, তেমনি মানুষের অধিকারের ব্যাপারে, মানুষের প্রতি তার দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হতে বলে। এটাকে শুধু ‘ঐচ্ছিক’ দায়িত্ব হিশেবে না রেখে ইসলাম একে ঈমানের সাথে যুক্ত করেছে। আপনাকে ‘ভালো মুসলিম’ হতে হলে অবশ্যই মা-বাবাকে সম্মান করতে হবে, সেবা করতে হবে, বড়োকে সম্মান করতে হবে, ছোটোকে স্নেহ করতে হবে, ক্ষুধার্তকে খাবার দিতে হবে, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দিতে হবে, কাউকে কষ্ট দিতে পারবেন না, কাউকে ব্যঙ্গ করতে পারবেন না, মন্দ নামে ডাকতে পারবেন না, গালাগালি করতে পারবেন না, কারো প্রাইভেসি রক্ষায় হুমকি হতে পারবেন না। একজন ব্যক্তি, যিনি অনেক নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, নিয়মিত দান করেন আবার মানুষকে কষ্ট দেন, ধোঁকা দেন, অন্যের হক্ব নষ্ট করেন, তিনি হয়তোবা ইবাদাতের রিচ্যুয়াল পালন করা সত্ত্বেও আল্লাহর কাছে ‘ভালো মুসলিম’ নন। অন্যদিকে, একজন কম নামাজ পড়েন, কম রোজা রাখেন, কম দান করেন, কিন্তু মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করেন, তিনি হয়তোবা আল্লাহর কাছে ‘ভালো মুসলিম’ বলে স্বীকৃত। ‘ভালো মুসলিম’ হবার মাপকাঠি শুধুমাত্র রিচ্যুয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং আপনি মানুষের সাথে ‘কেমন’ সেটাও আপনার ‘ভালো মুসলিম’ হবার একটি মাপকাঠি। একবার একজন সাহাবী নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! এক নারী অত্যধিক নামাজ, রোজা ও দানের জন্য সুপরিচিত। কিন্তু সে কথার মাধ্যমে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। তার ব্যাপারে আপনি কী বলেন?” নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “সে জাহান্নামী।” সাহাবী আবার জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আরেকজন নারী কম রোজা রাখে, দানও কম করে এবং নামাজও কম পড়ার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ। বলতে গেলে সে এক টুকরো পনিরই দান করে। কিন্তু প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। তার ব্যাপারে আপনি কী বলেন?” নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “সে জান্নাতি।” [মুসনাদে আহমাদ: ৯২৯৮] রিচ্যুয়াল-কেন্দ্রীক ইবাদাতের পাশাপাশি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত ইবাদাতের ব্যাপারেও আমাদের সচেতন থাকা উচিত। মানুষের সাথে সদ্ব্যবহারকে তুচ্ছ ভাবার কিছু নাই। ঈমানদার হতে হলে মানুষের সাথে যেভাবে সম্পর্ক রাখার কথা ইসলাম বলেছে, সেভাবে রাখতে হবে। ইসলামের সৌন্দর্য (ষষ্ঠ পর্ব) আরিফুল ইসলাম

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট