ব্যক্তির পূজারি

 




যুগে যুগে যত শিরক হয়েছে সবই অতি আবেগে করেছে। মানুষ যখন কোন ব্যক্তির প্রতি বেশি আসক্তি হয়ে পড়ে তখন তার ভালোমন্দ সবই তাকে আকর্ষণ করে। আসতে আসতে ঐ ব্যক্তির পূজারি হয়ে যায়। এই একদিন তাকে শিরকে নিয়ে পেলে। এটা শয়তানের চূড়ান্ত সাফল্য।

আমরা বারসিসার কাহিনিটি আশা করি সবাই জানি। একজন বুজুর্গ লোককে তার ইবাদাত বন্দেগী থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসে যিনার মতো অপকর্মে লিপ্ত করে শয়তান শান্ত হয়নি তাকে দিয়ে বাচ্চা-মা দুজনকে হত্যা করিয়েছে। এত জঘন্য কাজ করার পরে-ও শয়তান থেমে যায়নি। কারণ শয়তান জানতো সে যদি এখনো অনুতপ্ত হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ক্ষমা করে দিবেন। এজন্য শয়তান তাকে শিরক করতে বাধ্য করে। এবার শয়তানের চূড়ান্ত সফলতা অর্জিত হলো কারণ শিরকের গোনাহ আল্লাহ ক্ষনা করেন না। বর্তমানে সবচেয়ে বড় ফেতনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে Celebrity addicts। প্রতিটি যুবক এই নেশায় আসক্ত। খেলাধুলা হারাম তা কিন্তু নয়, তবে অতিরিক্ত Addiction এই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবার এক লোক নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে জিজ্ঞেস করলো, “কিয়ামত কখন হবে?” তিনি পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন, “কিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুত করেছো?” সে বললো, “আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসি।” এটা শুনে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “যাকে তুমি ভালোবাসো, তাঁর সাথেই তোমার কিয়ামত হবে (অর্থাৎ তোমার সঙ্গী)।” এই হাদীসটি শুনে আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “আমার কাছে এই হাদীসের চেয়ে প্রিয় আর কোনো হাদীস নেই। আমি নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবু বকর, উমরকে (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) ভালোবাসি। আমি আশা করি, তাঁদেরকে ভালোবাসি বলে আমি তাঁদের সাথে জান্নাতে বসবাস করতে পারবো; যদিও তাঁদের আমলের মতো আমি আমল করতে পারিনি।” (১) আজ কি আমিও আনাসের (রা:) মতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারবো, আমি নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসি বলে আমিও তাঁর সাথে জান্নাতে থাকবো? নাকি আমার ভালোবাসা অন্য কারো জন্য, যে আমাকে চিনেই না, নাম পর্যন্ত শুনেনি? এখন আমার ভালোবাসার মানুষ যদি থাকে একজন খেলোয়াড়। তাহলে এবার হাশর কার সাথে হবে আপনি-আমি নিজে চিন্তা করি কি হবে সেই কঠিন দিনে। আল্লাহ বলেন: “অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে আবার শিরকও করে। " (২) এটার মানে হচ্ছে, তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে ঠিকই কিন্তু তাওহীদে রবূবিয়্যাত (প্রতিপালকত্বের তাওহীদ) মানে, কিন্তু তাওহীদে উলূহিয়্যাত (উপাসত্বের তাওহীদ) মানে না। অর্থাৎ আল্লাহকে মুখে স্বীকার করে প্রকৃত পক্ষে বাস্তবায়ন করে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যেভাবে জীবন যাপন করতে বলেছেন, সেভাবে না করে আপাদমস্তক তারা সেলিব্রেটি উপাসনা করে; সেলিব্রেটি যা প্রচার করে, অন্ধভাবে সেটাকে তারা মেনে নেয়। এটা সত্য যে, সেলিব্রেটি নায়ক-নায়িকাকে মানুষ ‘উপাসনা’ করে না। কিন্তু তাদেরকে পছন্দ করে ভালবাসে। এই ভালবাসা স্বল্পতে আবদ্ধ থাকে না, আসতে আসতে এই ভালবাসা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন সেটা হারাম অতিক্রম করে শিরকের পর্যায়ে চলে যায়। “কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে। তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর।” (৩) এক হাদিসে এসেছে, হজরত কিস বিন সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি হিরা নামক স্থানে গিয়েছি। সেখানে দেখলাম, মানুষ তাদের রাষ্ট্রপ্রধানদের সিজদা করছে। আমি (মনে মনে) বললাম, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা পাওয়ার অধিক হকদার। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললাম, হিরা নামক স্থানে আমি দেখেছি, সেখানকার লোকেরা রাষ্ট্রপ্রধানদের সিজদা করে। আপনি তো আল্লাহর রাসুল। আপনি তো এ বিষয়ে অধিক হকদার। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি যদি আমার কবরের পাশ দিয়ে যাও, তাহলে কি তাকে সিজদা করবে? আমি বললাম, না। অতঃপর মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কখনো এমনটি করবে না।আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীদের বলতাম তাদের স্বামীদের সিজদা করতে। কেননা আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের কাছে স্বামীদের বিশেষ হক দিয়েছেন।’ (৪) 'যদি তাঁরা (নবী রাসূলগণ) শিরক করতেন তবে অবশ্যই তাদের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যেত।’ (৫) [সুরা আনআ’ম : আয়াত ৮৮] তথ্য ; (১)[সহীহ বুখারী: ৩৬৮৮] (২) [সূরা ইউসুফ: ১২:১০৬] (৩) [সূরা বাকারা: ২:১৬৫] (৪) (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ২৮১৭, আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪০, দারেমি, হাদিস : ১৪৬৩) (৫) [সুরা আনআ’ম : আয়াত ৮৮] ~ আলী আকবর

collected

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট