আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাঃ) - নবম অংশ

 


একবার ঈদের দিন কিছু হাবশী লোক পালোয়ানীর কসরত দেখাচ্ছিল। আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর নিকট খেলা দেখার আবদার করলেন। রাসুল (সাঃ) তাঁকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং আয়েশা (রাঃ) সেই খেলা উপভোগ করলেন। যতক্ষন আয়েশা (রাঃ) ক্লান্ত হয়ে নিজেই সরে না গেলেন। রাসুল (সাঃ) ততক্ষন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আয়েশা (রাঃ) এর একদিন মাথা ব্যাথা হলো। রাসুল (সাঃ) তখন রাসুল (সাঃ) এর তখন অন্তিম রোগ লক্ষন শুরু হতে চলেছে। তিনি আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, তুমি যদি আমার সামনে মারা যেতে, আমি নিজ হাতে তোমাকে গোসল দিয়ে কাফন করাতাম এবং তোমার জন্য দুআ করতাম। আয়েশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমার মরন কামনা করছেন। যদি এমন হয় তাহলে আপনি তো এই ঘরে নতুন একজন স্ত্রীকে এনে উঠাবেন। রাসুল (সাঃ) এই কথা শুনে মৃদু হেসে দেন। তারপরেই রাসুল (সাঃ) এর মাথা যন্ত্রনা শুরু হলো। নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট স্ত্রীর ঘরে থাকতেন কিন্তু অসুস্থতায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। প্রত্যাক দিনেই রাসুল (সাঃ) জানতে চাইতেন, আগামীকাল তিনি কোথায় থাকবেন! স্ত্রীগন বুঝতে পারলেন তিনি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে থাকতে চাচ্ছেন। তাই তাঁরা সবাই অনুমতি দিলেন। সেই দিন থেকে পার্থিব জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি আয়েশা (রাঃ) ঘরে অবস্থান করেন। রাসুল (সাঃ) শেষ সময়। আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর মাথার কাছে বসা এবং তিনি আয়েশা (রাঃ) এর সিনার সাথে ঠেস দিয়ে বসে আছেন। আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর সুস্থতার জন্য দোয়া করে চলেছেন। রাসুল (সাঃ) হাত তার হাতের মধ্যেই হঠাৎ তিনি টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলেন, আল্লাহ! আমি সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধুকে গ্রহন করেছি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সুস্থ অবস্থায় তিনি বলতেন, প্রত্যেক নবীর মরনকালে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনের যে কোন একটি বেছে নেওয়ার ইখতিয়ার দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই শব্দগুলো উচ্চারণের পর আমি বুঝে নিলাম যে, তিনি আমাদের থেকে দূরে থাকাকেই কবুল করেছেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনার তো বড় কষ্ট হচ্ছে। তিনি বললেন, কষ্ট অনুপাতে প্রতিদান ও আছে। আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে আগলে নিয়ে বসে আছেন। হঠাৎ তাঁর দেহের ভার অনুভব করলেন। চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন তিনি আর নেই। আস্তে করে পবিত্র মাথাটা বালিশের উপর রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। পরবর্তীকালে আয়েশা (রাঃ) বলতেন, রাসুল (সাঃ) আমার ঘরে আমার বারের দিনে এবং আমারই বুকে ইন্তিকাল করেন। জীবনের একেবারে অন্তিম মুহুর্তে আবদুর রহমান ইবন আবী বকর (রাঃ) একটি কাঁচা মিসওয়াক হাতে করে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখতে আসেন। রাসুল (সাঃ) সেই মিসওয়াকটির দিকে বার বার তাকাতে লাগলেন। বুঝলাম তিনি সেটা চাচ্ছেন। আমি সেটা নিয়ে নিজে চিবিয়ে নরম করে রাসুল (সাঃ) কে দিলাম। তিনি সেটা দিয়ে সুন্দর করে মিসওয়াক করলেন। তারপর আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালেন কিন্তু হাতটা পরে গেল। তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। সেই মহান আল্লাহর প্রশংসা যিনি তাঁর রাসুলের পার্থিব জীবনের শেষ মুহুর্তটিকে তাঁর ও আমার থুথু মিলিত করেছেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) এর সবচেয়ে বড় সম্মান ও মর্যাদা এই যে, তারই ঘরের মধ্যে এক পাশে রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র দেহ সমাহিত করা হয়। আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাঃ) - নবম অংশ || উম্মুল মুমিনিন || জান্নাতুন নেসা তারিন

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট