শেষ বিচারের দিন

 


শেষ বিচারের দিন মানুষের গ্রূপিং করা হবে তাদের কৃত আমলের উপর ভিত্তি করে। প্রতিটি জাতি থেকে, প্রতিটি বর্ণ থেকে, প্রতিটি পরিবার থেকে ভালো এবং খারাপদের আলাদা করে ফেলা হবে। সেদিন আল্লাহ অপরাধীদের উদ্দেশ্য করে বলবেন- وَ امۡتَازُوا الۡیَوۡمَ اَیُّهَا الۡمُجۡرِمُوۡنَ - ‘হে অপরাধীরা, আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও’। পৃথিবীতে তোমরা ভালো মানুষদের সাথে একত্রে থাকতে। আজ আর থাকতে পারবে না।

শুধু চিন্তা করে দেখুন, যিনি আমাদের আসল অবস্থা জানেন তিনি বলবেন আমি জানি তুমি আসলে কে। আজকে আলাদা হয়ে যাও। আমরা নিজেদেরকে লুকাতে পারি না। অনেক অপরাধী ধার্মিক পরিবারে বসবাস করে আসছে, তাদেরকে সেদিন আলাদা হয়ে যেতে হবে। অনেক অপরাধী মসজিদের পাশেই বসবাস করে আসছে, তাদেরকে সেদিন পৃথক হয়ে যেতে হবে। একবার ইমাম আবু হানিফা (র) এশার নামাজের পর নফল নামাজে দাঁড়িয়ে এই আয়াত পাঠ করছিলেন, লোকজন সকাল বেলা ফজর পড়তে মসজিদে এসে দেখেন তিনি তখনও একই আয়াত পাঠ করে যাচ্ছেন আর কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- "হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, ‘তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’?" (৩৬: ৬০) শয়তান কখনোই তোমাদের সঠিক রাস্তা দেখায় না। সে সর্বদা তোমাদের ক্ষতি করে। তবু তোমরা তার কথা শোনো। আর আমরা সবাই জানি শয়তান কিসের নির্দেশ দেয়। বিষয়টা কারো কাছেই গোপন নয়। শয়তান সবসময় মন্দ কাজের আদেশ দেয়। যখনই আপনার নিকট দুইটি পথের যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ আসে, বুঝবেন, মন্দ পথটাই শয়তানের। সর্বদা। ফজরের সময় হলে আমাদের সামনে দুইটি পথ এসে হাজির হয়, নামাজ পড়তে মসজিদে যাবো নাকি শুয়ে থাকবো। সালাত আদায় করতে মসজিদে যাওয়া আল্লাহর আদেশ। আর বিছানায় শুয়ে থাকা শয়তানের আদেশ। যখন আল্লাহর রাস্তায় টাকা খরচ করার কথা আসে তখনো মনের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এসে হাজির হয়। এই দ্বিধা আসে শয়তানের কাছ থেকে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি আসলে বলতে পারবেন কোনটা আল্লাহর নির্দেশ আর কোনটা শয়তানের নির্দেশ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পদ্ধতি হলো তিনি শুধু আপনাকে শিক্ষা দিবেন, জানিয়ে দিবেন। শয়তানও আপনার উপর জোর খাটাতে পারে না। সে শুধু আপনাকে আহ্বান জানাতে পারে। ক্বিয়ামতের দিন শয়তান আল্লাহকে বলবে, আমি তাদের উপর জোর খাটাইনি। আমি শুধু তাদের আহ্বান জানিয়েছি আর তারা আমার কথা শুনেছে। আমি যদি নামাজ পড়তে যাই শয়তান কি আমাকে জোর করে ধরে রাখতে পারবে? না। সে শুধু আমার মনের মধ্যে মন্ত্রণা দিবে- যেও না, অলস হও, ঘুমাও। কিন্তু আমি যদি যেতে চাই তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। একদিন আমি খুবই ক্লান্ত ছিলাম। ক্লাস শেষে খুব দেরি করে বাসায় ফিরলাম। রাতে সামান্য কয়েক ঘন্টা ঘুমানের সুযোগ পেলাম। সম্ভবতঃ দুই ঘন্টা। ফজরের সময় হয়ে গেলো। মসজিদে যেতে ইচ্ছে করছিল না। শয়তান এসে বুঝ দিলো, "তুমি তো এখন ক্লান্ত। বাসায় নামাজ পড়ো।" এরপর আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাহায্য করেছিলেন। আমি তখন শয়তানকে বললাম- আচ্ছা, ভালো। আমাকে এখন ওযু করতে দাও। যদি ওযু করার পর ভালো লাগে আমি মসজিদে যাবো। অন্যথায় বাসায় পড়বো। এরপর ওযু করলাম। ওযু করার পর ফ্রেশ ফিল করলাম। এরপর মসজিদে চলে গেলাম। যদি তার কথা শুনে বিছানায় শুয়ে থাকতাম তাহলে আমি এটা করতে পারতাম না। শয়তানের বিরুদ্ধে একটি কৌশল আমার খুব কাজে লাগে। আর তা হলো দেরি করানো। শয়তান আমাকে যদি কিছু করতে বলে আমি তখন বলি, হ্যাঁ, এটা করলে খুব ভালো হয়। কিন্তু আমি এটা এখন করবো না। সম্ভবত আগামী কাল করবো। তো, আমি শয়তানের কাছ থেকে কিছুটা সময় নিই। আর আগামী কালের মধ্যে আমি হয়তো কুরআন পড়ি তখন মন পরিবর্তিত হয়ে যায়। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে সাহায্য করেন। কখনো শয়তানের কথা শুনবেন না। যদি কখনো এমন মনে হয় যে, তার কথা শোনা ছাড়া থাকতে পারছেন না। তখন দেরি করান। কারণ, সময় পেলে আপনার মন হয়তো পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। - ড. আকরাম নদভী - SurahYasinPart4 - deepdeen tv

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট