পবিত্রতা, ওযু, গোসল এবং তায়াম্মুম

 


পবিত্রতা, ওযু, গোসল এবং তায়াম্মুমঃ (১) ওযুর অংগগুলো একবার, দুই বার বা তিনবার ধৌত করতে হবে। একবার ধৌত করা ফরয, সর্বোচ্চ তিনবার করা উত্তম। তবে মাথা মাসাহ বা পায়ে মোজা থাকলে পা মাসাহ একবারই করতে হবে। ওযুর অংগ তিনবারের বেশি ধৌত করা বাড়াবাড়ি, হাদীসে এই কাজের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত ৩৯৫-৩৯৭।

(২) পানি অপচয় করা যাবেনা। টেপ ছেড়ে ওযু করা পানি অপচয়ের মধ্যে পড়বে। উচিত হচ্ছে মগে বা কোনো পাত্রে পানি নিয়ে ওযু করা। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ওযু করতেন এক মুদ বা ৬২৫ গ্রাম পানি দিয়ে (প্রায় পৌনে এক লিটার)। বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত ৪৩৯। (৩) ওযু শেষে ভেজা অংগগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলা জায়েজ। ইবনে মাজাহঃ ৪৬৫। (৪) এক ওযু দিয়ে দুই ওয়াক্তের সালাত পড়া জায়েজ, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময় নতুন করে ওযু করে নিতেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি একবার এক ওযু দিয়ে দুই ওয়াক্তের সালাত পড়েছিলেন। (৫) কাপড়ের মোজার উপরে মাসাহ করা জায়েজ। তিরমিযীতে এর পক্ষে সহীহ হাদীস রয়েছে। যারা বলে শুধু চামড়ার মোজার উপরে মাসাহ করা যাবে, কাপড়ের মোজ়ার উপরে করা যাবেনা, তাদের ফতোয়া সঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামগণ খুফ (চামড়ার মোজা) ও জাওরাবের (সুতী বা পশমী মোটা মোজার) উপরে মাসাহ করতেন। বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৫৩-৫৪। মুকীম বা গৃহে অবস্থান করলে একদিন একরাত (২৪ঘন্টা) সফরে তিনদিন ও তিনরাত পর্যন্ত একবার মোজা পড়ে মাসাহ করে যাবে, এর পরে ওযু করলে মোজা খুলে ধৌত করতে হবে। এমন জুতা, যা টাখনু ঢাকে সেটা যদি পাক থাকে আর ওযু করা অবস্থায় পড়া হয়, তাহলে তার উপরেও মাসাহ করা জায়েজ। আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাতঃ ৫২৩। জুতার নিচে নাপাকী থাকলে তা মাটিতে ভালোভাবে ঘষে নিলে পাক হয়ে যাবে এবং ঐ জুতার উপরে মাসাহ করা চলবে। আবু দাউদ, মিশকাত ৫০৩। (৬) শরীরে কোনো জখম বা ব্যান্ডেজ থাকলে ঐ অংশটুকুর উপরে ভেজা হাতে একবার মাসাহ করলেই হবে, ধৌত করতে হবেনা। সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ১/১৬১। (৭) ওযুর শুরুতে প্রয়োজনীয় কথা বলতে ও সালাম দিতে বা নিতে হাদীসে কোনো নিষেধ নেই। (৮) প্রত্যেক অংগ ধোঁয়ার সময় আলাদা আলাদ দুয়া বলতে কিছু নেই, এইগুলো বিদআ’ত। এইগুলো না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম পড়েছেন, না সাহাবার করেছেন না চার ইমাম থেকে কোনো বক্তব্য আছে। যাদুল মাআ’দঃ ১/৮৮। (৯) শরীরের যেকোনো স্থান থেকে কম হোক আর বেশি হোক রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হবেনা। সহীহ বুখারীঃ ২৯ পৃষ্ঠা। (১০) কাপড় পরিবর্তন করলে বা হাটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে ওযু ভেঙ্গে যায়না। (১১) বমি হলে, সালাতের ভেতরে বা বাইরে উচ্চস্বরে হাসলে, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলে বা বহন করলে ওযু ভেঙ্গে যায়না। ওযু নষ্ট হওয়ার কারণগুলো কি কি? এ সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ওযু নষ্টের কারণ হিসেবে দলীলের ভিত্তিতে যা প্রমাণিত হবে, আমরা সেটাই এখানে আলোচনা করব। ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ- প্রথমতঃ পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়া। চাই তা পেশাব, পায়খানা, বীর্য, বায়ু বা মযী বা অন্যকিছু হোক, বের হলেই তা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু বীর্য যদি উত্তেজনার সাথে বের হয়, তবে সকলের জানা যে, তখন গোসল ওয়াজিব হবে। কিন্তু মযী বের হলে অন্ডকোষসহ পুরুষাঙ্গ ধৌত করে শুধু ওযু করলেই চলবে। দ্বিতীয়তঃ নিদ্রা যদি এমন অধিক পরিমাণে হয়, যাতে ওযু ভঙ্গ হয়েছে কিনা অনুভুতি না থাকে, তবে তা ওযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু নিদ্রা অল্প পরিমাণে হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। কেননা এ অবস্থায় ওযু ভঙ্গ হলে সাধারণতঃ অনুভব করা যায়। চাই চিৎ হয়ে শুয়ে নিদ্রা যাক বা হেলান ছাড়া বসে বা হেলান দিয়ে বসে নিদ্রা যাক। মোট কথা অন্তরের অনুভুতি উপস্থিত থাকা। কিন্তু যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাতে কোন কিছু বুঝতে পারে না, তবে ওযু করা ওয়াজিব। কারণ হচ্ছে, নিদ্রা মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয়; বরং এ সময় ওযু ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। অতএব অনুভুতি থাকা অবস্থায় যেহেতু ওযু ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই নিদ্রা এলেই ওযু ভঙ্গ হবে না। নিদ্রা যে মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয় তার দলীল হচ্ছে, অল্প নিদ্রাতে ওযু ভঙ্গ হয় না। নিদ্রা গেলেই যদি ওযু ভঙ্গ হত, তবে নিদ্রা অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হওয়ার কথা। যেমনটি পেশাব অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হবে। তৃতীয়তঃ উটের গোশত ভক্ষণ করা। উটের গোসত রান্না করে হোক, কাঁচা হোক খেলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা জাবের বিন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা কি ছাগলের গোশত খেয়ে ওযু করব? তিনি বললেন, যদি ইচ্ছা হয় তাহলে করতে পার (না করলেও চলবে)। বলা হল, আমরা উটের গোশত খেয়ে কি ওযু করব? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ছাগলের গোশত খেয়ে ওযু করার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছাধীন রেখেছেন, তখন বুঝা যায় উটের গোস্ত খেয়ে ওযুর ব্যাপারে মানুষের কোন ইচ্ছা স্বাধীনতা নেই। অবশ্যই ওযু করতে হবে। অতএব উটের গোস্ত কাঁচা হোক বা পাকানো হোক, কোন পার্থক্য নেই, গোস্ত লাল বর্ণ হোক বা অন্য বর্ণ, খেলেই ওযু ভঙ্গ হবে। উটের নাড়ী-ভুঁড়ি, কলিজা, হৃতপিন্ড, চর্বি, মোটকথা উটের যে কোন অংশ ভক্ষণ করলে ওযু ভংগ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে জেনে বুঝে সঠিক আমল করার তৌফিক দাণ করুক। আমিন। collected

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট