লক্ষ্মী, কুফা, শনির দশা

 


লক্ষ্মী, কুফা, শনির দশা বলা অর্থাৎ কোনকিছুকে সুলক্ষণ বা কুলক্ষণ বলে মনে করা শিরক। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীসে বলেছেনঃ

وَلا طِيَرَةَ وَلا هَامَةَ অর্থঃ পাখি উঁড়িয়ে কল্যাণ-অকল্যাণ নির্ধারণ করারও কোনো ভিত্তি নেই। ‘হামাহ’ তথা হুতুম পেচাঁর ডাক শুনে অশুভ নির্ধারণ করা ভিত্তিহীন। সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ কুষ্ঠরোগ। ইকরিমা রহি’মাহুল্লাহ বলেনঃ আমরা একদা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমার নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় একটি পাখি ডাকাডাকি করতে করতে অতিক্রম করছিল। তখন এক লোক বললঃ ভাল হোক! ভাল হোক! আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহু তখন বললেনঃ ভাল বা খারাপ কোনটাই না হোক। ইবনে আব্বাস তাদের কথার দ্রুত প্রতিবাদ করলেন। যাতে করে কল্যাণ ও অকল্যাণের ব্যাপারে ঐ পাখির কোনো প্রভাব আছে বলে বিশ্বাস না করা হয়। একদা তাউস রহি’মাহুল্লাহ একজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে কোনো এক সফরে বের হলেন। তখন একটি কাক চিৎকার করে ডাকছিল। তখন তাউসের সাথী বলতে লাগলঃ ভালো হোক। এ কথা শুনে তাউস বললেনঃ এই কাকের নিকট কোনো ভালো আছে কী? এখন থেকে তুমি আমার সাথে আর চলবেনা। ولا هامة হামাহ ( হুতুম পেচাঁর ) ডাক শুনে অশুভ নির্ধারণ করারও কোনো ভিত্তি নেইঃ ইমাম ফার্রা বলেনঃ হামাহ রাতের পাখিসমূহের অন্যতম। সম্ভবতঃ তিনি হুতুম পেঁচা উদ্দেশ্য করেছেন। ইবনুল আরাবী রহি’মাহুল্লাহ বলেনঃ লোকেরা হুতুম পেঁচা (পেঁচার ডাককে) কুলক্ষণ বলে মনে করত। কারো ঘরের উপর (ছাদে) এটি বসলে সে বলতঃ এটি আমার অথবা আমার পরিবারের অন্য কারো মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে এসেছে। উপরোক্ত হাদীস এ খারাপ আকীদার প্রতিবাদ করেছে এবং তাকে বাতিল করে দিয়েছে। কুফা মানে হচ্ছে কোনো মানুষ, দিন, সময়, জায়গা, বস্তু ইত্যাদিকে খারাপ মনে করা - এবং এইগুলোকে ভাগ্যের খারাপ কোনো কিছুর কারণ মনে করা। যেমন বলে অমুক “কুফা” - সে আসছে বলে আমার ব্যবসার এই ক্ষতি হয়েছে। অথচ ব্যবসার ক্ষতি, রিযিক, সম্পদ - সবকিছুই নিয়ন্ত্রন করেন একমাত্র আল্লাহ তাআ’লা। সবকিছুই আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখেন আল্লাহ। এখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে অথবা (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস থাকা অবস্থায়) অন্য কাউকে বা কোনো কিছুকে ভাগ্য নিয়ন্ত্রন করতে পারে এমন ধারণা রাখা - এক কথায় যাকে কুফা বলা হয় - এটা শিরক। কারণ এর দ্বারা সে যাকে কুফা বলছে - তাকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করছে - ভাগ্য নিয়ন্ত্রনকারী হিসেবে - আল্লাহর ক্ষমতার সাথে তাকেও শরীক করছে। যদিও এখানে মন্ধ ভাগ্য - কিন্তু মূল বিষয়টা এখানেই। ঈমানের ৬ নাম্বার পিলার “ওয়াল ক্বাদরী খাইরিহি ওয়া শাররিহি” - ভাগ্যের ভালো ও মন্দের নিয়ন্ত্রনকারী হচ্ছেন মহান আল্লাহ। আমাদের দেশে সুলক্ষণ ও কুলক্ষণ নিয়ে বহু প্রচলিত কয়েকটি শিরকের উদাহরণঃ শনি বারে যাত্রা করলে অশুভ... রাতের বেলা পেঁচা ডাকলে অমংগল হবে... অসময়ে কুকুর ডাকলে বাড়ির কেউ মারা যাবে... দুই শালিক মংগল, এক শালিক কুফা... অমুক জিনিসটা কুফা অমুক জিনিসটা লক্ষী (ভালো)... হাতের অমুক জায়গায় তিল থাকলে টাকা পয়সা হবে, অমুক জায়গায় থাকলে বউ মারা যাবে... সাবধান !! এই রকম যতগুলো ভালো বা মন্দ / শুভ-অশুভ / মংগল অমংগল বিশ্বাস আছে এই সবগুলো ভ্রান্ত শিরকি বিশ্বাস। তাকদীরের ভালো বা মন্দের একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআ’লা। অন্য কোনো কিছু তাকদীরের জন্য ভালো বা মন্দের কারণ মনে করা ঈমান বিরোধী কুসংস্কার। অনেকে বলে, আমরা এইগুলো বিশ্বাস করিনা, আমিতো এইগুলো মজা করে বলছি। আপনার জানা থাকা উচিত, সব কিছু নিয়ে মজা করা চলেনা। কেউ যদি ঠাট্টা করে দুর্গাকে সেজদা করে তবুও সেটা শিরক। অনুরূপ কেউ যদি মজা করেও শিরকি কুফুরী কথা বলে সেটা শিরকি কুফুরী বলেই গণ্য হবে। আল্লাহ আমাদের শিরকি কুফুরী থেকে হেফাজত করুন, আমিন।collected

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট