আল্লাহর রাস্তায় খরচ করলে


 আল্লাহর রাস্তায় এক টাকা খরচ করলে আল্লাহ তাআ’লা সেটাকে ৭x১০০=৭০০ গুণ বা আরো বেশি গুণ বৃদ্ধি করেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ “যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের (দানের) উপমা একটি বীজের মত, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, তার প্রত্যেক শীষে একশ শস্যদানা রয়েছে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ্‌ সর্বব্যাপী- প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।“ সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২৬১।

তাফসীরঃ এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে স্বীয় ধন-সম্পদ খরচ করে, সে বড়ই বরকত ও পুণ্য লাভ করে থাকে। তাকে সাতগুণ প্রতিদান দেওয়া হয়। তাই বলা হচ্ছে যে, যারা আল্লাহর পথে খরচ করে অর্থাৎ আল্লাহর যেকোন আদেশ পালনের জন্য, জিহাদের জন্য ঘোড়ার লালন-পালনে, অস্ত্র-শস্ত্র কেনার জন্য, নিজে হজ্ব করার কাজে কিংবা অপরকে হজ্ব করানো ইত্যাদি কাজে ধন-সম্পদ খরচ করে থাকে তাদের দানের উপমা হচ্ছে যেমন একটি শস্য বীজ। প্রত্যেক বীজে উৎপন্ন হয়ে থাকে সাতটি শীষ, আবার প্রত্যেক শীষে উৎপন্ন হয় একশো শস্যদানা। (সুবহা’নাল্লাহ), কি মনোমুগ্ধকর উপমা! একের বিনিময়ে সাতশো পাবে, মহান আল্লাহর সরাসরি এই কথা বলার চাইতে উপরোক্ত কথা ও উপমার মধ্যে খুব বেশী সূক্ষ্মতা ও পরিচ্ছন্নতা রয়েছে এবং ঐদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, সৎ কার্যাবলী আল্লাহ তাআ’লার নিকট বৃদ্ধি পেতে থাকে, যেমন বপনকৃত বীজ জমিতে বাড়তে থাকে। মুসনাদে আহমাদের মধ্যে হাদীস রয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিজের উদ্বৃত্ত জিনিস আল্লাহর পথে দান করে, সে সাতশো পুণ্যের অধিকারী হয়। আর যে ব্যক্তি নিজের জীবনের উপর ও পরিবারবর্গের উপর খরচ করে সে দশগুণ পুণ্য লাভ করে। যে রোগগ্রস্ত ব্যক্তিকে পরিদর্শন করতে যায় তারও দশগুণ পুণ্য লাভ হয়। রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ যে পর্যন্ত না তা নষ্ট করা হয়। যে ব্যক্তি শারীরিক বিপদ আপদ, দুঃখ কষ্ট, ব্যথা ও রোগে আক্রান্ত হয়, ঐগুলো তার পাপসমূহ ঝেড়ে ফেলে।” এই হাদীসটি হযরত আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু সেই সময় বর্ণনা করেন, যখন তিনি কঠিন রোগে ভুগছিলেন এবং লোকেরা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী শিয়রে উপবিষ্টা ছিলেন। তাঁরা আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, “রাত কিরূপ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে।” তিনি বলেন, “রাত্রি অত্যন্ত কঠিন অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে।” সেই সময় আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর মুখমণ্ডল দেয়ালের দিকে ছিল। এই কথা শোনা মাত্রই তিনি জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, “আমার আজকের এই রাত্রি মোটেও কঠিন অবস্থায় কাটেনি। কেননা, আমি এই কথা (উপরের হাদীসটি) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট শুনেছি।” দুই. আপনারা ১০০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০ বা ২০ টাকা...যতই কম পরিমাণে হোক, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে কখনো সংকোচ করবেন না। অল্প পরিমাণ টাকা দিতে আমাদের লজ্জা বোধ হলেও কিংবা আমাদের দুনিয়ার মানুষের দৃষ্টিতে সেটা কম মনে হলেও, মহান আল্লাহর কাছে সামান্য একটা খেজুর দান করাও কম না। বান্দার ইখলাসের কারণে আল্লাহ তাঁর রহমতকে উসীলা করে সামান্য দানকেও পাহাড়ের সমান বিশাল বানিয়ে দেন। সুবহা’নাল্লাহি ওয়া বিহা’মদিহী! আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন ব্যক্তি তার হালাল ও পবিত্র উপার্জিত একটি খেজুর দান করলে আল্লাহ তাআ’লা ডান হাতে তা গ্রহণ করেন এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেইভাবে একটি উট বা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন করে বড় করে থাকে, আল্লাহ তাআ’লাও সেইভাবে (তোমাদের এই সামান্য পরিমাণ দানকে) বাড়াতে থাকেন। অবশেষে বাড়তে বাড়তে তা পাহাড় বা পাহাড়ের চাইতেও অনেক বড় হয়ে যায়।” সহীহ মুসলিমঃ ২২৩৩।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট