রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টি না হলে

 


❖ "রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টি না হলে, পৃথিবীর কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না"— কথাটি কি ধরনের? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ এটা কুরআন-হাদিসের কোন কথা নয়, এটা একটা ডাহা মিথ্যা-বানোয়াট কথা, এটা একটা জালিয়াতি কথা, এটা একটা ভিত্তিহীন কথা। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা যদি রাসূল (সা.)-কে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে এই সৃষ্টিজগৎ বা মাখলুকাত কিছুই সৃষ্টি করতেন না, এটি একেবারেই ডাহা মিথ্যা-বানোয়াট কথা। এ কথা যদি হাদিসের নামে বলা হয়, তাহলে এটি সবচেয়ে বড় জালিয়াতি। আর এ কথার সত্যিকার অর্থে কোনো ভিত্তিই নেয়। এটি শুধু আবেগের কথা, যা মানুষের কাছে প্রচারিত হয়েছে।

আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা মানুষ সৃষ্টির বিষয়ে সূরা আজ-জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, জিন ও ইনসানকে আমি সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য। আল্লাহু রাব্বুল আলামিন আরো স্পষ্ট করেছেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করব। আদম (আ.)-কে যখন সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহু রাব্বুল আলামিন সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন এটা প্রকাশ করলেন ফেরেশতাদের কাছে যে, আমি আদমকে সৃষ্টি করছি। আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করছি।এভাবে আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা সৃষ্টির বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই যে, আল্লাহু রাব্বুল আলামিন যে মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন, বেহুদা-অনর্থক সৃষ্টি করেছেন ব্যাপারটা এমন নয়। এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, যা তিনি বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং তা নিজেদের আবিষ্কার করার কোনো দরকার নেই। নিজেদের গবেষণা থেকে বের করার কোনো প্রয়োজন নেই। আল্লাহ এই পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা মানুষের কল্যাণের জন্য। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর তৌহিদকে বাস্তবায়ন করার জন্য। সেটি আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন কোথাও এ কথা বলেন নাই যে, এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছি মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য, অথবা মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এগুলো আমরা নিজেরাই আবেগ দিয়ে তৈরি করে নিয়ে কিছু সংখ্যক লোক পথভ্রষ্ট হওয়ার জন্য রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসাকে পুঁজি করে ভালোবাসার মধ্যে সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন। কোনো সন্দেহ নেই, রাসূলুল্লাহ (সা.) এই ভালোবাসা ইমানের দলিল, রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা আমাদের থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তির অন্তরের মধ্যে যদি রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তাহলে সে ইমানদার হতে পারবে না। কিন্তু ভালোবাসাকে পুঁজি করে পথভ্রষ্ট বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই অথবা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হওয়ার কোনো দরকার নেই। এ ধরনের বক্তব্য সত্যিকার অর্থে হেদায়েত থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত একটি বক্তব্য। আর এ ধরনের কথা রাসূল নিজেও বলেননি বা সাহাবারাও তাঁদের বক্তব্যে কোথাও বলেননি।

**********************************************************

❖ ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ব্যক্তি কে হবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ যে নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাসের বিবরণ মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর গোপন কথা অন্যের কাছে ফাঁস করা হারামঃ এটি সমাজের একটি ভয়ানক ব্যধি। জ্ঞানের স্বল্পতা ও লজ্জহীনতার কারণে অনেক নারী, অনেক পুরুষ পরস্পর সহবাসের বিবরণ অন্যের কাছে বর্ণনা করে থাকে। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সম্ভবতঃ স্বামী নিজের স্ত্রীর সাথে কিছু করে উহা অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেয়। সম্ভবতঃ স্ত্রী নিজ স্বামীর সাথে যা কিছু করে তা অন্যের কাছে বর্ণনা করে দেয়! একথা শুনে লোকেরা চুপ থাকল, কেউ জবাব দিল না। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ হে আল্লাহর রাসূল! নারীরা এরূপ করে থাকে এবং পুরুষরাও এরূপ করে থাকে। তিনি বললেন, তোমরা এরূপ করো না। কারণ এটা শয়তানী ব্যবহার। এদের উদাহরণ হচ্ছে সেই শয়তানের মত যে রাস্তার ধারে নিজ শয়তানী স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে অতঃপর সেখানেই তার সথে সহবাসে লিপ্ত হয়। আর লোকেরা তাদেরকে দেখতে থাকে। [আহমাদঃ ২৬৩০১] অপর বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক নিকৃষ্ট হচ্ছে সেই লোক, যে নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয় অতঃপর তার গোপন কর্মের বিবরণ মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়।” [মুসলিমঃ ২৫৯৭] -নাউজুবিল্লাহ!! আল্লাহ সকল মুসলিম নারীকে এমন ঘৃণিত কাজ থেকে হেফাজত করুক এবং পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট