মুসলমান ভাই কিংবা বোনকে সাহায্য করার পুরষ্কার

 


কোন মুসলমান ভাই কিংবা বোনকে সাহায্য করার পুরষ্কার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি হাদীস: (১) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন মিটাবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মিটাবেন। একইভাবে যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ব্যক্তির বিপদ দূর করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেন।” সহীহ বুখারী, মুসলিম, সুনানে আবু দাউদঃ ৪৮৯৩।

(২) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুনিয়াবী বিপদাপদের মধ্যে একটি বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ তাআ’লা তার পরকালের বিপদাপদের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অন্য কারো অভাব দূর করে দেয়, তার দুনিয়া ও আখিরাতের অসুবিধাগুলোকে আল্লাহ তাআ’লা সহজ করে দেবেন। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন মুসলমানের দোষ-ক্রটিকে গোপন রাখে, আল্লাহ তাআ’লা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। যে পর্যন্ত বান্দাহ তার কোন ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে, সে পর্যন্ত আল্লাহ তাআ’লাও তার সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকেন।” সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযীঃ ১৯৩০, ইবনু মা-জাহঃ ১২২৫। (৩) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকীন (নিঃস্ব লোকদেরকে) সাহায্য করার জন্য চেষ্টা করে সে আল্লাহর পথে জিহাদরত মুজাহিদের সমতুল্য এবং যারা রাত জেগে নফল নামায পড়ে ও দিনে রোযা রাখে তাদেরও সমতুল্য।” সহীহুল বুখারী ৫৩৫৩, মুসলিম ২৯৮২। (৪) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচাইতে বেশি প্রিয় হচ্ছে তারা, যারা মানুষের জন্যে সবচাইতে বেশি উপকারী ব্যক্তি। আর আল্লাহর কাছে সবচাইতে বেশি প্রিয় আমল হচ্ছেঃ একজন মুসলমানকে খুশি করা, অথবা তার কোন একটা দুঃখ দূর করা, অথবা তার ঋণ মাফ করে দেওয়া অথবা ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাকে খাদ্য দেওয়া। মদীনার এই মসজিদে (মসজিদে নববীতে) এক মাস ইতিকাফ করার চাইতে কোন এক মুসলমান ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করার জন্যে তার সাথে হাঁটা আমার কাছে বেশি প্রিয়। যে ব্যক্তি নিজের রাগ দমন করে আল্লাহ তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।” হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আসবাহানী এবং ইবনে আবি দুনিয়া। শায়খ সাঈদ রাসলান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “হাদীসটি হাসান লি গায়রি।” সুতরাং প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আসুন পবিত্র রমদান মাসের জন্য হলেও সমাজের ঐ সকল গুরাবাদের জন্য আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। যারা আজ সঠিকভাবে বিদাত মুক্ত ইসলাম পালন করার জন্য, সঠিক দ্বীন বুঝে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার জন্য, আর্থিকভাবে চরম কষ্টের মাঝে দিন অতিবাহিত করছে। এত কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করার পরেও তারা মানুষের কাছে সাহায্যের হাত পাতে না। তবে তারা চাইলেই পারে হারাম পন্থায় প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে। এমনকি সঠিকভাবে দ্বীন পালন করার জন্য তারা অনেক সময় সমাজের লোকদের থেকে বিভিন্ন বিড়ম্বনারও শিকার হন। ইসলামের পরিভাষায় গুরাবা তাদেরকেই বলা হয়, যারা দ্বীনের রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার দরুন নিজের পরিবার-পরিজন, সমাজ-রাষ্ট্রসহ সবার কাছে অপাঙক্তেয় হয়ে যায়। দ্বীনের জন্য যিনি সমাজের লোকদের থেকে বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হন, তিনি তাদের থেকে দূরে সরে যান বা তারাই তার থেকে দূরে সরে যায়। ফলে ওই দ্বীনদার ব্যক্তি তাদের কাছে বহিরাগত কোনো অপরিচিত আগন্তুকের মতোই হয়ে যান। আসলে বিপদ-আপদ মুমিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ। পরীক্ষা ছাড়া পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা মুমিন ব্যক্তির কাছ থেকে পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। নতুবা মুমিন এবং গোনাহগারের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। বিপদ-আপদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা মুমিন ব্যক্তির ভালোবাসা যাচাই করেন। এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা কাকে কিভাবে নেয়ামত দান করবেন, তা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ কলেমার ওপর যারা ইমান এনেছে তাদের পরোপকার করতেই হবে। কারণ ইসলাম আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায়ের ক্ষেত্রে পৃথকভাবে তাগিদ দিয়েছেন। অন্যের বিপদ-আপদে এগিয়ে যাওয়া মুসলমানের নৈতিক এবং ইমানি দায়িত্ব। কোরানে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি! মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব করা হয়েছে ।’ (সূরা আলে-ইমরান: ১১০)।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট