কল্যাণ দিয়ে যেমন , তেমনি অকল্যাণ দিয়েও পরীক্ষা করা হবে


 এই দুনিয়াতে আল্লাহ কার উপর সন্তুষ্ট আর কার উপর অসন্তুষ্ট তা বুঝতে চেষ্টা করার ক্ষেত্রে সরল হবেন না। ব্যাপারটা আসলে কিছুটা জটিল। কখনো কখনো আল্লাহ আপনাকে এই দুনিয়াতে ধন-সম্পদ বা প্রভাব-প্রতিপত্তি দান করবেন, আর তা আসলে আপনার জন্য ভালো। আবার অনেক সময় তিনি আপনাকে এসব দান করবেন কিন্তু এসব আসলে আপনার জন্য একটি অভিশাপ।

তাই, আপনার পক্ষে এভাবে বলা সম্ভব নয় যে, আমার যেহেতু অনেক ধন-সম্পদ রয়েছে তার মানে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন অথবা আমার ধন-সম্পদ এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই তার মানে আল্লাহ আমাকে ঘৃণা করেন। এটা এতো সহজ কোনো সমীকরণ নয়। কুরআনেও নয়, এই ধর্মেও নয়। ইতিহাসে এমন অনেক মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা জীবনে প্রচুর প্রভাব-প্রতিপত্তি উপভোগ করেছিল কিন্তু তারা ছিল অভিশপ্ত। যেমন, ফেরাউন। আবার কারো কারো কিছুই ছিল না। আর তারা ছিলেন সবচেয়ে অভিজাত। যেমন, ইব্রাহিম (আ)। তাই, কে আল্লাহর কাছ থেকে আশীর্বাদপ্রাপ্ত আর কে আশীর্বাদপ্রাপ্ত নয় তা বুঝার জন্য এটা একক কোনো ফর্মুলা নয়। আমাদের দ্বীন বলে— দুনিয়ার এই জীবনে সর্বাবস্থায় আমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হবো। কল্যাণ দিয়ে যেমন আমাদের পরীক্ষা করা হবে তেমনি অকল্যাণ দিয়েও পরীক্ষা করা হবে। শুধু দেখার জন্য আমরা কী করি, কিভাবে আমরা আচরণ করি। ভোগ বিলাসের পার্থিব এই উপকরণগুলো সফলতাও নয়, ব্যর্থতাও নয়। এগুলো শুধুই পরীক্ষা। যেমন, আপনার গ্রাজুয়েট হওয়া আল্লাহর নিকট সফলতা নয়। এটা একটা পরীক্ষা। আপনি এখন এই বিদ্যা দিয়ে কী করবেন এটাই দেখার বিষয়। আপনার একটি চাকরি পাওয়া সফলতা নয়। এটাও একটা পরীক্ষা। আপনি কি কৃতজ্ঞ হবেন? আপনি কি উপার্জিত অর্থ দিয়ে ভালো কিছু করবেন? এই ধারণা ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের নিকট— গড যদি এ দুনিয়াতে তোমাকে অনেক কিছু দিয়ে থাকেন তার মানে তিনি তোমার উপর সন্তুষ্ট। আর তিনি তোমার উপর অসন্তুষ্ট যদি তিনি তোমাকে না দিয়ে থাকেন। এটা আমাদের ধর্মের ধারণা নয়।

নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন— وَ الَّذِیۡنَ جَاهَدُوۡا فِیۡنَا لَنَهۡدِیَنَّهُمۡ سُبُلَنَا - "আর যারা আমার পথে প্রচেষ্টা চালায় তাদেরকে আমি অবশ্য অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব।" (২৯:৬৯) তাদের সামনে হেদায়েতের অনেকগুলো রাস্তা খুলে দিবো। সুবহানাল্লাহ! কেউ একজন আল্লাহর পথে চলার জন্য পথের সন্ধান করছে। তারা আল্লাহর দিকে কিছুটা প্রচেষ্টা দেখালো। আল্লাহ বলছেন আমি অবশ্য অবশ্যই তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবো, অনেকগুলো রাস্তা তাদের সামনে খুলে দেওয়ার মাধ্যমে। আল্লাহর পথে চলার জন্য তাদের সামনে একাধিক পথ খোলা থাকবে। সবগুলো রাস্তাই তাদেরকে আল্লাহর দিকে নিয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! যারা আল্লাহর পথে চলার জন্য, তাঁর হেদায়েতের জন্য এমনকি কিছুটা হলেও আগ্রহ দেখায় তাদের অন্য এটাই আল্লাহর পুরস্কার। আল্লাহর একটি নাম হলো আল-মু'মিন। এর দুইটি অর্থ— যিনি বিশ্বাস করেন এবং যিনি নিরাপত্তা দান করেন। আমরা জানি, মু'মিন হলো তিনি যিনি "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এর ঘোষণা দেন। কুরআন কী বলছে ? شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ - "আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই।" (৩:১৮) অতএব, আল্লাহ যেহেতু "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর" সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাই তিনি মু'মিন। আল্লাহ ছাড়া আর কে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর" সবচেয়ে বড় সাক্ষী হতে পারে? সুতরাং আল্লাহ শুধু "মু'মিন" নন, তিনি হলেন "আল-মু'মিন।" যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ তাদের ঈমানকে সত্যায়ন করবেন। যে কেউ ঈমান চায় সে আল-মু'মিনের কাছ থেকে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে। আমরা আমাদের হৃদয়ের গহীন থেকে জানি— ইসলাম সত্য, আল্লাহ সত্য, কুরআন সত্য, রাসূল (স) সত্য। কারণ, 'আল মু'মিন' আমাদের ঈমানকে আমাদের অন্তরে শক্তিশালী করে দিয়েছেন। তিনি বলেন— سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ - "আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কুরআন সত্য।" (৪১:৫৩) মুসলিম হিসেবে, মু'মিন হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি—এটি আমাদের ধর্মের নিয়ম—যে কেউ হেদায়েত চাইবে হেদায়েত পাবে। যে কেউ হেদায়েত পাওয়ার জন্য আন্তরিক তাকে পথ দেখানো হবে। কারণ, আল্লাহ হলেন ' আল-মু'মিন।' তাই, যে কেউ ঈমান চাইবে 'আল-মু'মিন' তাকে সে ঈমান দানে ধন্য করবেন। হেদায়েতের জন্য আন্তরিক কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন না। এটি আমাদের ধর্মের বিধান। — নোমান আলী খান ও শায়েখ ইয়াসির কাদির আলোচনা অবলম্বনে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে