“লাইলাতুল কদর”

 


❖ “লাইলাতুল কদর” কত সংখ্যক মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ এক হাজার মাস। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন: “লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চাইতে সেরা।” (সূরা কদর, আয়াত : ০৩)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের নিয়তে ইবাদতের জন্য রাত জেগে থাকবে তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৭২)


❖ “লাইলাতুল কদর” কত তম রমাদানের মাঝে রয়েছে বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ ৩। রমযানের শেষ সাতের মাঝখানে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় লাইলাতুল কদর হচ্ছে রমযানের শেষ সাতের মাঝখানে, সেদিন সকালে শুভ্রতা নিয়ে সূর্য উদিত হবে, তার মধ্যে কোন কিরণ থাকবে না। ইব্‌ন মাসউদ বলেন: আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে সেরূপ দেখেছি, যেরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন”। (আহমদ: ১/৪০৬)

লাইলাতুল কদরের আলামতঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “‎সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের ‎রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ ‎করে।‎ শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত”। (সূরা বাকারা: ৪-৫) লাইলাতুল কদরের “তার আলামত হচ্ছে সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে সাদা, তার কোন কিরণ থাকবে না, যেন তার আলো মুছে দেয়া হয়েছে। (মুসলিম: ৭৬২, ইব্‌ন হিব্বান: ৩৬৯০) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় লাইলাতুল কদর হচ্ছে রমযানের শেষ সাতের মাঝখানে, সেদিন সকালে শুভ্রতা নিয়ে সূর্য উদিত হবে, তার মধ্যে কোন কিরণ থাকবে না। ইব্‌ন মাসউদ বলেন: আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে সেরূপ দেখেছি, যেরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন”। (আহমদ: ১/৪০৬), আহমদ শাকির হাদিসটি সহিহ বলেছেন) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেছেন: “এটা হচ্ছে সাতাশ অথবা ঊনত্রিশের রাত, সে রাতে কঙ্করের চেয়ে অধিক সংখ্যায় ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবস্থান করেন”। (আহমদ: ২/৫১৯) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় লাইলাতুল কদরের আলামত, তা হবে সাদা ও উজ্জ্বল, যেন তাতে আলোকিত চাঁদ রয়েছে, সে রাত হবে স্থির, তাতে ঠাণ্ডা বা গরম থাকবে না, তাতে সকাল পর্যন্ত কোন তারকা দ্বারা ঢিল ছোঁড়া হবে না। তার আরো আলামত, সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে সমানভাবে, চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়, তার কোন কিরণ থাকবে না, সেদিন শয়তানের পক্ষে এর সাথে বের হওয়া সম্ভব নয়”। (আহমদ: ৫/৩২৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে, আর তা হচ্ছে শেষ দশকে। সে রাত হবে সাদা-উজ্জ্বল, না-গরম, না-ঠাণ্ডা, যেন আলোকিত চাঁদ নক্ষত্রগুলোকে আড়াল করে আছে, ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সে রাতের শয়তান বের হতে পারে না”। (ইব্‌ন খুযাইমাহ: ২১৯০, ইব্‌ন হিব্বান: ৩৬৮৮, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন) সুবহানাল্লাহ।

❖ “আল্লাহুম্মা! ইন্নাকা আফুউন, কারীমুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নী’’ এই দুয়াটি কিসের দুয়া হিসাবে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ লাইলাতুল কদরে দুয়া। এ বিষয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বলবেঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, কারীমুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’য়ফু আন্নি” অর্থঃ ‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ (সুনান আত-তিরমিযীঃ ৩৫১৩; ইব্‌ন মাজাহঃ ৩৮৫০) সকলেই এই ব্যাপক অর্থবোধক দুয়াটি মুখুস্ত করে নিয়ে বেশী বেশী করে আল্লাহর কাছে দুয়া করতে থাকুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে লাইলাতুল কদরের ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুক এবং আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দিক আর মৃত্যুর সময় ঈমান এবং আমালের সাথে মৃত্যু দান করুক। আমীন...।

এক নজরে লাইলাতুল কদরের ফযিলতঃ (১) এ রাত আল্লাহর নিকট খুব মর্যাদাপূর্ণ। (২) এ রাত এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, যেখানে লাইলাতুল কদর নেই; যা প্রায় তিরাশি বছর চার মাসের সমপরিমাণ। (৩) এ রাতে অগণিত ফেরেশতাদের অবতরণ হয়, যাদের সংখ্যা কঙ্করের চেয়ে বেশী। (৪) এ রাতে কুরআনুল কারিম নাযিল করা হয়েছে। (৫) এ রাতে অধিক পরিমাণ আযাব থেকে নিরাপত্তা নাযিল হয়, কারণ এতে বান্দাগণ অধিক পরিমাণ ইবাদত করে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ দান করেন। (৬) এ রাত বরকতময়, কারণ এ রাতের ফযিলত অনেক। (৭) এ রাতে যে বিশ্বাস, আল্লাহর ওয়াদার ওপর আস্থা ও সওয়াবের আশায় কিয়াম করবে, তার পূর্বের পাপ মোচন করা হবে। (৮) এ রাতে পূর্ণ বছরের তাকদির লেখা হয়। (৯) এ রাতে যে কিয়াম করল ও জাগ্রত থাকল, সে অবশ্যই আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের উপযুক্ত হল। (১০) এ উম্মতের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি তাদেরকে প্রতি বছর এ রাত দান করেন। (১১) লাইলাতুল কদর অন্য সকল রাত থেকে উত্তম, জুমার রাত লাইলাতুল কদর থেকে উত্তম এ কথা শুদ্ধ নয়। হ্যাঁ যদি জুমার রাতে লাইলাতুল কদর হয়, তাহলে তার ফযিলত বৃদ্ধি হয় সন্দেহ নেই। মুসলিমদের উচিত লাইলাতুল কদর তালাশ করা। এ জন্য শেষ দশকে কিয়াম, সালাত, দো‘আ ও যিকরে অধিক মশগুল থাকা। মাহরুম ও বঞ্চিত ব্যতীত কেউ ফযিলতপূর্ণ এ রাত থেকে গাফেল থাকে না। লাইলাতুল কদরের বরকতের অর্থ তাতে সম্পাদিত আমলের বরকত, কারণ এ রাতে যে যত্নসহ আমল করবে, তার আমল হাজার মাসের আমলের চেয়ে উত্তম। এটা আল্লাহর মহান অনুগ্রহ। আল্লাহর নিকট দো‘আ করছি, তিনি আমাদেরকে এ ফযিলত অর্জনের তওফিক দান করুন। আমিন।

❖ “লাইলাতুল কদরে” যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করবে, তার ফজিলত কি হবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন: “লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চাইতে সেরা।” (সূরা কদর, আয়াত : ০৩)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের নিয়তে ইবাদতের জন্য রাত জেগে থাকবে তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৭২)

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট