ইতিকাফকারী ব্যক্তির জন্য যা করা বৈধঃ


 ইতিকাফকারী ব্যক্তির জন্য যা করা বৈধঃ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি ঋতুবতী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথা চিরুনি করতাম”। (বুখারি: ১৯৪১, মুসলিম: ২৯৭)

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা‎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: “যখন তিনি ইতিকাফ করতেন, প্রাকৃতিক জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না”। (বুখারি: ১৯৪১ ও মুসলিমে: ২৯৭) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: “ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হচ্ছে রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাজায় হাজির না হওয়া, স্ত্রীকে স্পর্শ বা তার সাথে সহবাস না করা, খুব জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত বের না হওয়া, সওম ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়, অনুরূপ জামে মসজিদ ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়”। (আবু দাউদ: ২৪৭৩) শিক্ষা ও মাসায়েলঃ (১) ঋতুবতী নারী পাক, তার ঋতুর স্থান ব্যতীত। (২) ইতিকাফকারী শরীরের কিছু অংশ মসজিদ থেকে বের করলে বাইরে গণ্য হবে না, ইতিকাফ নষ্ট হবে না, যেমন মসজিদের জানালা অথবা দরজা থেকে যদি কিছু নেয়া অথবা গ্রহণ করার ইচ্ছা করে, তাহলে এতে সমস্যা নেই। (৩) ইতিকাফকারীর মাথা ধৌত করা, চুল আঁচড়ানো, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মাথা ন্যাড়া করা ও সৌন্দর্য গ্রহণ করা বৈধ। (৪) স্ত্রীর জন্য স্বামীর খিদমত করা বৈধ, যেমন তার মাথা ধৌত করা, চুল আঁচড়ে দেয়া, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি। (৫) মানুষিক প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন পেশাব-পায়খানা, অথবা পানাহার, যদি তা মসজিদে পৌঁছে দেয়ার কেউ না থাকে, অনুরূপ প্রয়োজনীয় প্রত্যেক বস্তু, যা মসজিদে সম্পাদন করা সম্ভব নয়, তার জন্য বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হবে না”। (৬) ইতিকাফকারী জরুরী প্রয়োজনে বের হলে দ্রুত হাঁটা জরুরী নয়, বরং অভ্যাস অনুযায়ী হাঁটা, তবে প্রয়োজন শেষে দ্রুত ফিরে আসা ওয়াজিব। (৭) হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, নারী তার স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করবে, স্বামীর বাড়িতে যদিও কোন প্রয়োজন না থাকে, অথবা কোন শরয়ী কারণে সে বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে, যেমন সফর ও ইতিকাফ। স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ঘর থেকে বের হবে না।

(৮) ইতিকাফকারী প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফের স্থান থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

****************************************************************************


ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েই ভালকাজগুলো করতে হয়। এই নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হয়, ভালো কাজগুলোর উপকার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়, তারপর দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েই কাজগুলো করতে হয়। জান্নাত লাভের জন্য যে কাজগুলো করতে হয়, সেগুলো ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েই করতে হয়। আরাম নষ্ট করে উঠতে হয়। ভালকাজে গড়িমসি করলে শেষে আর করা হয় না। আর অন্যদিকে, যে কাজগুলো জাহান্নামে নিয়ে যাবে, সেগুলো করার জন্য নিজের উপর জোর খাটাতে হয় না। শুধু নিজের মনের কথা শুনলেই হবে।

এক হাদিসে জান্নাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে- "জান্নাত বাধা বিপত্তি দিয়ে ঘেরা।" আর অনেকের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা আসে মন থেকে। "আর জাহান্নাম কামনা বাসনা এবং প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা দিয়ে ঘেরা।" সবসময় মনের কথা শুনলে জাহান্নাম আপনাকে টেনে ধরবে। আর যদি মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিবেকের কথা শুনেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ্‌, আল্লাহর ক্ষমা পাবেন। নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে এই কষ্ট করার জন্য আল্লাহ্‌ আপনাকে চির সুখের জান্নাত দিবেন। আর যদি এই কষ্ট না করেন তাহলে মহা শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের জন্য প্রকৃত উপকারী জিনিসগুলো মানুষের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার জায়গায় রাখেননি বা এমন ক্ষেত্রেও রাখেননি যেগুলো মানুষকে দিয়ে জোর করে করানো হয়। মানুষকে নিজের জন্য প্রকৃত উপকারী জিনিসগুলো পেতে হলে নিজের বুদ্ধি খাটাতে হয়, চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। ইসলামী জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তারপর এই জ্ঞান অর্জন করার পর পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে তা মানতে হয়। কোনো ব্যক্তির জন্য বা কোনো সমাজের জন্য যা ভালো, তারা সেগুলো প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে করে না। ঐ কাজগুলো কোনোদিনও প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে করা সম্ভব নয়। যেসব আমলের উপর জান্নাত পাওয়া নির্ভর করে সেগুলো কোনোদিনও মানুষ প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে করবে না। এই কাজগুলো কেবল তখনই করা সম্ভব যখন মানুষ এ সম্পর্কে জানবে, বুঝবে এবং নিজে নিজে করার সিদ্ধান্ত নিবে তারপর এগুলো করবে। ধার্মিকতা প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে আসে না। এমনটি হওয়া অসম্ভব। ধার্মিকতা কেবল তখনি আসতে পারে যখন আপনি চিন্তা-ভাবনা করবেন, বুদ্ধি খাটাবেন, জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি করবেন, তারপর নিজের মাঝে আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন করার ইচ্ছা জাগ্রত করবেন এবং তারপর সেটা কর্মে বাস্তবায়ন করবেন। অতএব, এটা হল আপনার চিন্তা-ভাবনা, আপনার উপলব্ধি, আপনার ইচ্ছা এবং আপনার কর্ম। -- আকরাম নদভীর আলোচনা থেকে অনুপ্রাণিত।

********************************************************************


Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট