ইব্রাহিম (আ)

 


আল-কুরআনে ইব্রাহিম (আ) এর বর্ণনা থেকে যদি কিছু কথা আমাদের মনে গেঁথে নিতে চাই, তবে এ আয়াতটি হবে সেরকম একটি কথা। সূরাতুস সাফফাত, আয়াত ৯৯। وَ قَالَ اِنِّیۡ ذَاهِبٌ اِلٰی رَبِّیۡ سَیَهۡدِیۡنِ - “তিনি (ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম) বললেন, ‘আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম, উনি আমাকে অবশ্যই সঠিক পথ দেখাবেন।” (৩৭:৯৯)

এর অর্থ কী জানেন? এর অর্থ হলো- এটা কোনো ব্যাপার না আমি কী পেছনে রেখে আসলাম। পেছনে কী রেখে আসলাম এটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই। সামনে কোনদিকে আমি এগুচ্ছি সেটা নিয়েই আমি চিন্তিত। "তিনি বললেন- আমি আমার রবের দিকে এগিয়ে চললাম।" বাকিটা তাঁর উপর। 'সাইয়াহদিইন'-অবশ্যই তিনি আমাকে পথ দেখাবেন। আমি যদি তাঁর কথামত চলি... এমন কিছু কঠিন প্রশ্ন আছে যা একজন মানুষ নিজের গহীনে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। এটা হলো আত্মসমালোচনার দারস। আজকের আলোচনা নিজেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা নিয়ে। আমি নোমান আপনাদের উদ্দেশ্যে এ কথাগুলো বলতে পারি। এ বক্তব্যের শেষে বা বক্তব্য চলাকালীন সময়ে অথবা বক্তব্য শুরু করার পূর্বে আমাকে আমার নিজের দিকে লক্ষ্য করে দেখতে হবে, আপনাকে আপনার নিজের দিকে লক্ষ্য করে দেখতে হবে। নিজের জন্য এ প্রশ্নটার উত্তর কেবল আপনি নিজেই বের করতে পারবেন। প্রশ্নটি হলো: আমার নিজের মাঝে এমন কিছু বিষয় আছে, আপনার নিজের মাঝে এমন কিছু ব্যাপার আছে যা আমাদেরকে আল্লাহর দিকে এগিয়ে চলতে বাধা দিচ্ছে। এমন কিছু বিষয় আছে আপনি জানেন যেগুলো আপনার করা উচিত না। আবার এমন কিছু ব্যাপারও আছে যা আপনার করা উচিত। আরও কিছু ব্যাপার আছে যেগুলোতে আপনার পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু আপনি তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এ বিষয়ে নিজেও নিজের সাথে কথা বলতে চান না। যখন মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবেন- আমি আমার রবের দিকে এগিয়ে চললাম। আমি আমার অনিচ্ছাকে জয় করবো। আমি আমার ভেতরগত দ্বিধাদ্বন্দ্বকে জয় করবো। আমি আমার ভয়কে জয় করবো। আর কেউ যদি কোনো আসক্তিতে ভোগেন, আমি আমার আসক্তিকে জয় করবো। আল্লাহর পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের ভেতর থেকে যত বাধা আসে আমি সবগুলোকে জয় করবো। এবং আমি বলবো- اِنِّیۡ ذَاهِبٌ اِلٰی رَبِّیۡ (ইন্নি জা-হিবুন ইলা- রাব্বি) "আমি আমার রবের দিকে এগিয়ে চললাম।" আমার অন্তরের যত কিছু আমাকে আল্লাহর অনুগত হতে বাধা দিচ্ছে আমি তার সবকিছুকে পদপিষ্ট করে এগিয়ে যাবো। এখন এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর..."আচ্ছা এখন তাহলে কী করবো? এখন কী হবে? মনে হয় আমি পারবো না। আমি মনের দিক থেকে এতোটা শক্তিশালী নই।" হতে পারে আপনি মনের দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী নন। হতে পারে আপনার এমন কাউকে দরকার যে আপনার হাত ধরে আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ঠিক এ জন্য আয়াতে উল্লেখিত পরবর্তী শব্দটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। 'সাইয়াহদিইন'- "তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।" আল্লাহ আমাকে মঞ্জিলে পৌঁছে দিবেন। আমাকে শুধু তাঁর দিকে এগিয়ে চলতে হবে, বাকিটা তিনি করবেন। এর পরের সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী? প্রথমে, আমরা আল্লাহর দিকে ফিরলাম এবং তাঁর হেদায়েতের জন্য আশা করলাম। এরপর আমরা কী করবো? আমরা তাই করবো যা ইব্রাহিম (আ) করেছিলেন। তিনি দোআ করলেন- " رَبِّ هَبۡ لِیۡ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ" - "আমাকে সৎকর্মশীলদের থেকে উপহার দান করুন।" অর্থাৎ, আমাকে ধার্মিক সৎ মানুষদের সঙ্গ দান করুন। আমার জীবনে ভালো মানুষ দান করুন। এর দ্বারা আসলে অন্তর্নিহিতভাবে বলা হয়- আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন। কিন্তু অর্থটা শুধু সৎকর্মশীল সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কারণ, সন্তান শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন- "রাব্বি হাবলিই মিনাস সলিহিন।" আমাকে সৎকর্মশীলদের থেকে উপহার দান করুন। তিনি এভাবে বলেননি- "রাব্বি হাবলিই জুররিইয়াতান মিনাস সলিহিন।" আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন। 'জুররিইয়াতান' (সন্তান) শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি। তো, আমরা এখানে আল্লাহর কাছে কী চাচ্ছি? যখন আমি আপনি আল্লাহর দিকে এগিয়ে চলি, তখন আমরা আল্লাহর কাছে দোআ করি আমাদের জীবনে এমন মানুষদের দান করার জন্য যারা আমাদেরকে সঠিক লক্ষ্য পানে এগিয়ে চলতে সাহায্য করবে। কারণ, আমি আপনি ভালো করেই জানি, ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষ পাওয়া খুব সহজ। এমন বন্ধুদের অংশ হওয়া খুবই সহজ যারা আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। আমাদের মনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমরা যেন এমন মানুষদের সঙ্গ পাই যারা আমাদের আল্লাহর পথে চলতে সাহায্য করবে। আর এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার। এখন আমরা এ আয়াত থেকে শিখছি ইব্রাহিম (আ) বুঝতে পেরেছিলেন, সৎ মানুষদের সঙ্গ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার। আর আল্লাহ কিভাবে এর জবাব দিলেন। সূরা আনকাবুতে আল্লাহ বলেন- وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَنُدۡخِلَنَّهُمۡ فِی الصّٰلِحِیۡنَ - "আর যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মশীলদের ভেতরে প্রবেশ করাবো।" (২৯:৯) আল্লাহর কাছ থেকে একেবারে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, আল্লাহ গ্যারান্টি দিয়েছেন তিনি আপনার জীবনে ভালো মানুষদের নিয়ে আসবেন। প্রসঙ্গতঃ এর মানে এটা নয় যে, আপনার জীবনে কোনো খারাপ মানুষ আসবে না। আমাদের নিজেদের বুদ্ধি খাঁটিয়ে বুঝতে হবে কোন মানুষগুলো আমার জন্য ভালো কিছুর উৎস। কোন মানুষগুলো আমার জন্য তাকওয়ার উৎস। কোন মানুষগুলো আমাকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমার ভেতরে চলতে সাহায্য করছে। কোন মানুষগুলো আমাকে আল্লাহর আনুগত্যের ভেতরে থাকতে সাহায্য করছে। পক্ষান্তরে, কোন মানুষগুলোর সঙ্গ আমার জন্য আল্লাহর অবাধ্যতা সহজ করে দেয়। কোন মানুষগুলোর কারণে আমি সহজেই আল্লাহর অবাধ্য হতে প্ররোচিত হই। এই চিন্তাটা আমার মাথায় থাকতে হবে। আমার নিজের ভালোর জন্যই। - নোমান আলী খান - The Religion of Your Father Ep 28

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট