আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?

 


আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন? আপনি হয়তো আমাকে বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার গুনাহর পরিমাণ অনেক বেশী, যত রকমের গুনাহ আছে, আমি তা সবই করেছি। পাপ কামাই করেছি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিগত এত বছরের সব পাপ কি আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন?

হে সম্মানিত ভাই! আপনাকে আমি বলছি, এটি বিশেষ কোন সমস্যা নয় বরং এটা অনেকেরই সমস্যা, যারা তোওবা করতে চায়। একজন যুবকের কথা উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করতে চাই যে একবার প্রশ্ন করেছিল, খুব অল্প বয়স থেকেই সে পাপ কাজ করতে শুরু করে। এখন তার বয়স মাত্র সতের বছর। এই বয়সেই তার পাপের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। ছোট-বড় সব ধরণের পাপই সে করেছে। সে ছোট-বড় বিভিন্ন মানুষের সাথে পাপ কর্ম করেছে। এমনকি সে ছোট মেয়েদেরকে ধর্ষণও করেছে। সে অনেক চুরিও করেছে। এরপর সে বলে, আমি আল্লাহর নিকট তোওবা করেছি। মাঝে মধ্যে রাত জেগে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করি। প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখি এবং ফজর সালাতের পর ক্বুরআন মজীদ পড়ি, আমার তোওবা কি কবুল হবে? আমরা ইসলামের অনুসারী। আমাদের মূলনীতি হলো ক্বুরআন ও সুন্নাহ থেকে ফয়সালা ও প্রতিকার গ্রহণ করা। তাতে পেলাম মহান আল্লাহর এই বাণী, “(হে নবী!) আপনি বলে দিন যে, (আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন), “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। আর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তার নিকট আত্মসমর্পণ কর, (তোমাদের নিকট) আযাব আসার পূর্বেই। (আযাব আসার পর) অতঃপর আর তোমাদেরকে কোন সাহায্য করা হবেনা।” যুমারঃ ৫৩-৫৪। এটিই হচ্ছে উল্লিখিত সমস্যার সূক্ষ্ম জবাব এবং এটি অত্যন্ত স্পষ্ট, যার ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাপের পরিমাণ বেশি হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন কিনা, এই অনুভূতির কারণ হচ্ছে, প্রথমতঃ আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার ব্যাপকতা সম্পর্কে বান্দার দৃঢ় বিশ্বাস না থাকা। এর ব্যাখ্যা হিসেবে মহান আল্লাহর এই বাণীই যথেষ্ট হবে, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।” সুরা আয-যুমারঃ ৫৩। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর রহমত যে কত ব্যাপক, সে সম্পর্কে ঈমানে ঘাটতি থাকা। এক্ষেত্রে হাদীসে কুদসীই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি জানলো যে, আমি গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা রাখি, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেব, এ ব্যাপারে কোন কিছুতেই পরওয়া করবো না। যদি সে আমার সাথে কোন কিছু শরীক করে না থাকে।” তাবারানী, হাকেম, সহীহ আল জামেঃ ৪৩৩০। এটি হবে, যখন বান্দা আল্লাহর সাথে পরকালে সাক্ষাৎ করবে। তৃতীয়তঃ তোওবার কার্যকর ক্ষমতা সম্পর্কে এ ধারনা না থাকা যে, তা সব গুনাহকেই ক্ষমা করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে রাসুলের এই হাদীসই যথেষ্ট, “যে ব্যক্তি তাওবা করবে, তার যেন কোন গুনাহ থাকবে না।” তোওবাকারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফতোয়াঃ আপনি হয়তো বলতে পারেন, আমি তোওবা করতে চাই কিন্তু আমি তাওবার হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। আমার মনে কতিপয় গুনাহর ব্যাপারে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয় এর সঠিক তোওবার ব্যাপারে, আল্লাহর যে সব হক নষ্ট করেছি তা পূরণ করার ব্যাপারে এবং বান্দাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে যা আমি ইতিপূর্বে অন্যায়ভাবে গ্রহণ করেছি। এসব প্রশ্নের উত্তর কি আছে? আল্লাহর পানে প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তি! আপনার জন্য এসব প্রশ্নের উত্তর উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ। প্রশ্ন নং ১ – আমি পাপ করার পর তোওবা করি। অতঃপর আমার নফস (কু-প্রবৃত্তি) আমার উপর বিজয়ী হয়, যার ফলে আবার পাপের পথে ফিরে আসি, এর ফলে কি আমার পূর্বের তোওবা বাতিল হয়ে যাবে এবং আমার পূর্বের ও পরের গুনাহ বাকী রয়ে যাবে? উত্তরঃ তোওবা সঠিক হওয়ার জন্য শর্ত হলোঃ পাপ থেকে পূর্ণভাবে মুক্ত হওয়া এবং এজন্য অনুতপ্ত হওয়া, পুনরায় আর তা না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া। এরপর যদি আবার কেউ পাপ করে ফেলে, তাহলে সে যেন নতুনভাবে পাপ করল, এরজন্য তাকে নতুনভাবে তোওবা করতে হবে কিন্তু তার পূর্বের তোওবা ঠিক থাকবে। প্রশ্ন নং ৩ – অতীতে আমি আল্লাহর হক নষ্ট করেছি, সালাত পড়িনি, রোজা রাখিনি, যাকাত দেইনি, এখন আমি কি করবো? উত্তরঃ সালাত পরিত্যাগ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মত হলো, এর কাজা আদায় করতে হবে না। কেননা এর সময় পার হয়ে গেছে এবং তা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এর ঘাটতি পূরণ করতে হবে বেশী বেশী তোওবা, ইসতেগফার পাঠ করে, বেশী বেশী নফল সালাত আদায় করে, আশা করা যায় যে মহান আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু রোজা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে কথা হলো, রোজা ভঙ্গের সময় যদি সে মুসলমান থেকে থাকে তাহলে, পূর্বে যত দিনই বাকী আছে সবগুলোরই কাজা রোযা আদায় করতে হবে, যদিও এর সংখ্যা কয়েক মাস গিয়ে পৌঁছে। উদাহরণস্বরূপঃ কোন ব্যক্তি যদি ১৪০০ হিজরীতে তিনটি রোজা ভঙ্গ করলো এবং ১৪০১ হিজরীতে পাচটি রোজা ছেড়ে দিলো এরপর সে যদি তাওবা করে, তাহলে তাকে আটটি রোজার কাজা আদায় করতে হবে। আরেকটি উদাহরণঃ একটি মেয়ে ১৪০০ হিজরীতে বালেগা হলো এবং সে লজ্জা করে তার পরিবারের লোকজনকে জানালো না। সে ঐ আট দিন (বা সাতদিন মাসিকের সময়) রোযা রাখল এবং পরে এর কাযা আদায় করলো না। তাহলে তার উপর ঐ আট দিনের রোজার কাজা আদায় করা কর্তব্য হয়ে গেল। এখানে একটি বিষয় অবশ্যই অবগত থাকতে হবে যে, সালাত ত্যাগ করা ও রোজা ভঙ্গ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যা আহলে ইলমরা উল্লেখ করেছেন। ওলামাদের কেউ কেউ মনে করেন যে, কেউ যদি ইচ্ছা করে রোজা ভঙ্গ করে তবুও কাজা আদায় করতে হবে না। কিন্তু যাকাত না দেয়া থাকলে অবশ্যই যাকাত প্রদান করতে হবে। কেননা যাকাত একদিকে আল্লাহর হক, এবং অন্য দিকে সেটা গরীব মিসকিনের হক। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মাদারেজুস সালেকীনঃ ১/৩৮৩।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট