জান্নাত

 


মানুষ আমার কাছে এসে বলে:

- আচ্ছা, জান্নাত কি চিরকালের জন্য? - হ্যাঁ। - যা চান সব পাবেন? - হ্যাঁ। - এক সময় কি এতে বিরক্তি এসে যাবে না? আমি কি জান্নাত ছাড়া আর কোথাও যেতে পারবো না? আমি কি একটু...এখানে তো বহুকাল থাকলাম। এখন কি একটু অন্য কোথাও যাওয়া যায় না? এর উত্তর সূরা কাহাফের ৩ নাম্বার আয়াতে 'মা-কিসিনা' শব্দের মধ্যেই দেওয়া আছে। আল্লাহ এখানে বলছেন, তোমরা সবসময় সেখানে নতুন কিছু একটা পাওয়ার আশায় থাকবে। সর্বদা অভিনব আরো কিছু পাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকবে। আর এটা আসলে সুখের মনস্তত্ত্বের (psychology of happiness) গহীনে লুকায়িত একটি ব্যাপার। পুরস্কারের মনস্তত্বের সাথে জড়িত একটি ব্যাপার। কোনো পুরস্কারের আসল আনন্দ পাওয়া যায় আসলে পুরস্কার পাওয়ার ঠিক আগে মুহূর্তে। একজন ছাত্র সবচে সুখী থাকে তার হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে। বিয়ে হওয়ার ঠিক আগের দিন ছেলেটা খুব খুশি থাকে। বিশেষ করে মেয়েটি। সে অবশ্যই বিয়ের ঠিক আগের দিন সবচেয়ে সুখী থাকে। ভালো কিছু পাওয়ার প্রতীক্ষার মাঝে কি যেন এক অদ্ভুদ আনন্দ লুকিয়ে আছে। বাচ্চার জন্ম হবে! অমুক তারিখে বিয়ে হবে! অমুক দিন বোনাস পাওয়া যাবে! ঈদ উপলক্ষে অনেক দিন ছুটি পাওয়া যাবে! ভ্রমণের দিন এগিয়ে আসছে! বহুদিন পর আমার প্রিয় বন্ধুর সাথে দেখা হবে! এই যে অপেক্ষা, এই অপেক্ষার মাঝেই আসলে এক ধরনের আনন্দ। বস্তুত: আপনি যদি অপেক্ষার সময়টা দূর করে তাৎক্ষণিক জিনিসটা পেয়ে যান, তখন আনন্দটা হয় খুবই ক্ষণস্থায়ী। আর পেয়ে যাওয়ার পর আশ্চৰ্য্যজনকভাবে অল্প সময় পর কী ঘটে? হুম... এটা আর তেমন কি। আমি আমার বাচ্চাদের উপর এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাই। কারণ, আমার বাসায় experimental subject আছে :) একবার নিউইয়র্কে 'মুসলিম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের' (MSA) এক প্রোগ্রাম শেষ করার পর তারা আমাকে কিছু সম্মানী দিতে চাইল। বললাম, MSA থেকে আমি সম্মানী নিই না। সরি। তারা বলল- আপনাকে কিছু একটা নিতেই হবে। তখন বললাম- ঠিকাছে, তাহলে আমার বাচ্চাদের জন্য বিশাল এক বক্স লেগো নিয়ে আসেন। তো, তারা আমাকে বিশাল দুই বক্স লেগো দিলো। বাসায় এনে আমি সেগুলো শেলফে রাখলাম। তারপর আমার দুই ছেলেকে বললাম- ৩০ দিন পর তোমরা এগুলো খুলতে পারবে। তারা দুইজন পুরো অস্থির হয়ে গেলো। পাগল হওয়ার মত অবস্থা। - আব্বা, আমরা কি এখন খুলতে পারবো? আব্বা, আমরা কি এখন খুলতে পারবো? প্লিজ প্লিজ প্লিজ। - না। ত্রিশ দিন পর। এরপর তারা দিন গণনা করা শুরু করল। "একটু ধরতে পারবো?" আমি দুই দিন যাবৎ বললাম, না, ধরতে পারবে না। তৃতীয় দিন বললাম, আচ্ছা, ঠিকাছে। তোমরা এখন ধরতে পারবে। তারা খুশিতে চকমক করে বক্সগুলো স্পর্শ করতে লাগল। - খুলতে পারবো? - না। খুলতে পারবে না। আরো ২৮ দিন। এভাবে এক মাস পার হয়ে গেলো। এ সময়টাতে তারা সবচেয়ে বেশি সুখী ছিল। দিন গণনার মাঝেই একটা আনন্দ। টেনশন এবং আনন্দ। এরপর আমরা বক্সগুলো খুললাম। প্রায় ছয় ঘন্টা যাবত আমার ছেলেদের আর কোনো হুঁশ ছিল না। লেগোগুলো দিয়ে তারা বিভিন্ন ধরণের জিনিস বানাতে লাগলো। "ওয়াও! এটা কি বড়! হু হা হা।" এভাবে তিন দিন যাবৎ তারা এগুলো নিয়ে পুরোপুরি আচ্ছন্ন হয়ে থাকলো। এখন, সেই একই খেলনাগুলো আমার রুমে সেলফের মধ্যে রাখা আছে। তারা কখনো এগুলোর কথা আর জিজ্ঞেসও করে না। তাদের আনন্দের সবচে সেরা অংশ কোনটা ছিল? অপেক্ষার মুহূর্তটা। প্রত্যাশার সময়টা। সেই ছোটকাল থেকে এখন পর্যন্ত। আমরা সবাই এরকম। এটা হলো দুনিয়ার প্রতীক্ষা। আর আল্লাহ বলছেন পরকালের প্রতীক্ষাটা যে আরো কত আনন্দের তোমরা তা কল্পনাও করতে পারবে না। জান্নাতের প্রতিটি আনন্দ টেকসই। দিন দিন আনন্দের মাত্রা শুধু বাড়তেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে আর বাড়তেই থাকবে। জান্নাতের ফল-ফলাদি খেতে খেতে কখনো একঘেয়েমি এসে যাবে না। জান্নাতের পানীয় পানেও কখনো বিরক্তি এসে যাবে না। কারণ, এগুলো কখনো একরকম থাকবে না। সবসময় আগেরবারের চেয়ে উত্তম হবে। আবার খেলে আগের চেয়ে সুস্বাদু লাগবে। দুনিয়াতে সবকিছুর একটা সীমা আছে। একটা পর্যায়ে আসার পর আর ভাল্লাগে না। কিন্তু, জান্নাতে প্রতিটি আনন্দ সবসময় বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এটাই হলো মা-কিসিন। - নোমান আলী খান

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট