---
ডিপ্রেশনের কারণে কেউ যদি কোনো পাপ করে এ জন্য কি তাকে জবাবদিহি করতে হবে? (যেমন, এমন মনে করা যে তাকে ছাড়া সবাই খুব ভালোই আছে এবং এ প্রক্রিয়ায় অবশেষে পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলা)
ড. আকরাম নদভী:
---------------
অনেক মানুষ মনে করে তাদের কোনো গুরুত্ব নেই। "আমার কোনো গুরুত্ব নেই"—এই চিন্তাটা বড়ো ধরণের একটি রোগ। এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ফরমানের বিরুদ্ধে যায়। তবে, এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।
মানুষকে এ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বার্তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ প্রত্যেকটি মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। কুরআনে এসেছে— "ওয়া লাক্বাদ কাররামনা বাণী আদাম- আমি মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়েছি, আমি তাদেরকে সম্মান মর্যাদা দিয়েছি।"
এ কারণেই এতো বেশি নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে। ফেরেশতারা মানুষের সেবা করছে। বেহেশত দোজখ তৈরী করা হয়েছে। বিচার দিবস তৈরী করা হয়েছে। যদি সুরাতুর রাহমান অধ্যয়ন করেন তাহলে দেখবেন, আল্লাহ মানুষের জন্য জান্নাতে অতি চমৎকার চমৎকার কত কি সৃষ্টি করে রেখেছেন!
কুরআন আরো বলছে আমি মানুষের সেবায় সকল পাহাড় পর্বত, এই পৃথিবী, নক্ষত্রসমূহ, চাঁদ, সূর্য কত শত জিনিস সৃষ্টি করে রেখেছি। মেঘ-বৃষ্টি আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সত্যিই প্রতিটি মানুষ খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু, সমস্যা হলো আমরা আমাদের গুরুত্ব মাপি বাহ্যিক কিছু বিষয়ের মানদন্ডে। আমরা মনে করি, আমরা কেবল তখনই গুরুত্বপূর্ণ যখন অন্য মানুষেরা আমাদের গুরুত্ব প্রদান করে। এটি বড়ো ধরণের একটি ভুল। আপনি অন্য মানুষদের কারণে গুরুত্বপূর্ণ নন। যদি পৃথিবীতে আর কোনো মানুষ না থাকতো, শুধু আপনি থাকতেন তবু আপনার গুরুত্ব থাকতো। আপনি এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ না— কারণ আপনার আত্মীস্বজনেরা আপনাকে সম্মান করে, পিতা-মাতা সম্মান করে, ছেলে-মেয়েরা সম্মান করে। না। আপনি নিজের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার গুরুত্ব আপনার নিজের মাঝে। আপনি যে আল্লাহর দাস, এ ব্যাপারটাই আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। আপনি যে একজন মানুষ, এ কারণেও আপনি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনাকে দেওয়া হয়েছে ফিতরাহ তথা সহজাত প্রকৃতি এবং সুস্থ মস্তিস্ক। আর এটা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। আপনি আল্লাহর আদেশ গ্রহণ করার সামর্থ রাখেন, বুঝতে পারেন। আপনার পক্ষে বেহেশতে যাওয়া সম্ভব। এটা বিশাল এক ব্যাপার!!
পৃথিবীর গাছ-পালা তো আর জান্নাতে যাবে না। চাঁদ, সূর্য জান্নাতে যাবে না। পাহাড়-পর্বত জান্নাতে যাবে না। কিন্তু, আপনার পক্ষে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব। যদি আপনি আল্লাহর দাস হিসেবে জীবন যাপন করেন।
আর যে ব্যাপারটা আপনাকে জান্নাতের জন্য যোগ্য করে তোলবে, তা এমন কিছু নয় যা শুধু অর্থ বৃত্ত বা বড় বড় পদবী ধারীদের পক্ষে করা সম্ভব। জান্নাতে যাওয়ার জন্য যে কাজগুলো করতে হয়, তা যে কারো পক্ষে করা সম্ভব। অন্য মানুষ আপনাকে গুরুত্ব দিক বা না দিক— এটা আপনাকে জান্নাতের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন করবে না। বস্তুতঃ মানুষ যদি আপনাকে গুরুত্ব না দেয়, এটা হয়তো আপনার জান্নাতে যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে। কারণ, আপনি ধৈর্য ধারণ করেন। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনার পুরস্কার বৃদ্ধি করতে থাকবেন।
সুতরাং, আমরা যে জান্নাতে যাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করার সামর্থ রাখি, এটা বিশাল বিশাল এক ব্যাপার। এটা যে মানুষকে কত গুরুত্বপূর্ণ বানায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমি মনে করি এই ধরণের ডিপ্রেশনের সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। মানুষকে বলা উচিত যে তারা গুরুত্বপূর্ণ। আর তাদের গুরুত্ব অন্য মানুষদের হাতে নয়, তাদের গুরুত্ব তাদের নিজেদের হাতে। তারা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আল্লাহ তাদের গুরুত্বপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। আপনার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, কলিগরা আপনাকে গুরুত্ব প্রদান করুক বা না করুক এতে কিছু যায় আসে না। অবশ্য এটা তাদের দায়িত্ব আপনাকে গুরুত্ব প্রদান করা। যদি তারা এটা না করে এটা তাদের ভুল। অন্যকে ছোটো করার কারণে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। আপনাকে নয়।
মানুষ আপনাকে পছন্দ করুক বা না করুক এতে কিছু যায় আসে না। মূল ব্যাপার হলো আল্লাহ আপনাকে পছন্দ করেন কিনা। এটাই মূল বিষয়। এ ধরণের রোগ তৈরী হওয়ার কারণ হলো আমরা জানি না আমরা আসলে কে।
অতএব, সকলেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে অন্যরা ছোট মনে করলেও এ কারণে নিজেকে ছোট মনে করবেন না এবং অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজেকে মাপবেন না।
▣ কবরে ৪টি প্রশ্নঃ
★ মান রাব্বুকা (তোমার প্রতিপালক কে) ?
★ মা দীনুকা (তোমার ধর্ম কী ছিল) ?
★ মান নাবীয়ুকা (তোমার নবী কে) ?
অথবা মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখিয়ে বলা হবে,
মান হাযার রাজুল (এ ব্যক্তিটি কে) ?
এই তিনটি উত্তর ঠিকমত দিতে পারলে, তাকে আরও একটি প্রশ্ন করা হবে। সেটা হলঃ
★ এই উত্তরগুলো তুমি কোথায় পেয়েছ? উত্তর দেবেঃ পবিত্র কুরআন থেকে।
▣ কিয়ামতের ময়দানে পাঁচটি প্রশ্ন, যেগুলোর উত্তর না দিয়ে কেউ এক পা সামনে অগ্রসর হতে পারবে না।
★ নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে?
★ যৌবনের শক্তি-সামর্থ্য কোথায় ব্যয় করেছে?
★ ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে?
★ কোথায় তা ব্যয় করেছে?
★ সে (দ্বীনের) যতটুকু জ্ঞানার্জন করেছে সে অনুযায়ী কত টুকু আমল করেছে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার জন্য, যেভাবে জীবন গড়ার দরকার আল্লাহ আমাদেরকে ঠিক সেভাবেই জীবন গড়ার তৌফিক দাণ করুক। আমিন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন