‘হাওয়া’ (কুপ্রবৃত্তি বা খেয়াল-খুশির) অনুসরণ


 ক্বুরআন হাদীসের বিপরীতে ‘হাওয়া’ (কুপ্রবৃত্তি বা খেয়াল-খুশির) অনুসরণ মানুষকে ধ্বংস করে। (১) আল্লাহ তাআ’লা হযরত মুসা আ’লাইহিস সালামের সাথে ত্বুয়া উপত্যকায় কথোপকথনের সময় মুসা নবীকে যারা হাওয়ার অনুসরণ করে তাদের থেকে সতর্ক করে বলেন, অর্থঃ কাজেই যে ব্যক্তি কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখেনা এবং হাওয়া (নিজ প্রবৃত্তির) অনুসরণ করে, সে যেন আপনাকে তার উপর ঈমান আনা থেকে ফিরিয়ে না রাখে, নতুবা আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন। সুরা ত্বোয়া হাঃ ১৬।

(২) আল্লাহ তাআ’লা হযরত মুহা’ম্মদ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করতে আদেশ করেছেন। পক্ষান্তরে, লোকদের হাওয়ার অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে বলেন, অর্থঃ (হে নবী মুহাম্মদ!) আমি আপনার উপর সত্য বিধানসহ কিতাব নাযিল করেছিন যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী ও সংরক্ষক। কাজেই আল্লাহ যা নাযিল করেছেন আপনি সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে বিচার ফায়সালা করুন। আর আপনার কাছে যে সত্যবিধান এসেছে সেটা ছেড়ে দিয়ে তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করবেন না। সুরা আল-মাইয়ি’দাহঃ ৪৮। আল্লাহ তাআ’লা ক্বুরআনে বারবার হাওয়া বা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করার ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। তারপরেও এক শ্রেণীর মানুষ নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করার পরেও ক্বুরআন হাদীসের চাইতে তাদের তাদের হাওয়াকেই প্রাধান্য দিবে। এইভাবে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে ঈমান থেকে, ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে। সুবহা’নাল্লাহ! আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগেই এই ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক করে গেছেন। আবু বারযাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য সবচাইতে বেশি ভয় করি তোমাদের পেট এবং যৌনাংগের শাহওয়াত (কামনা-বাসনা) এবং পথভ্রষ্টকারী হাওয়া (কুপ্রবৃত্তির) ব্যাপারে।” মুসনাদে আহমাদঃ ১৯২৭৪, ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহি’মাহুল্লাহ সহীহ বলেছেন, যাম্মুল হাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্যে শীঘ্রই এমন একদল লোক বের হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তি পরায়ণতা এমনভাবে প্রবহমান হবে, যেইভাবে কুকুরের বিষ (জলাতঙ্ক রোগ) আক্রান্ত ব্যক্তির সারা দেহে সঞ্চারিত হয়। কোন একটি শিরা বা জোড়া বাকী থাকে না যেখানে উক্ত বিষ প্রবেশ করে না।” তিরমিযীঃ ৬৪১, ইবনু মাজাহঃ ৩৯৯২। সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহঃ ১৩৪৮। তাবেয়ীদের যুগ থেকেই বহু মুসলমান কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে ধ্বংস হয়েছিলোঃ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত লোকদের মাঝে সর্বোত্তম প্রজন্ম হচ্ছে সাহাবীদের যুগ, এরপরে তাবেয়ী, এরপরে তাবে-তাবেয়ীদের প্রজন্ম। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আমার প্রজন্ম। এরপর তাদের পরে যারা। এরপর তাদের পরে যারা।” সহীহ বুখারীঃ ৩৬৫১, মুসলিমঃ ২৫৩৩। ইমাম নববী রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্ম হচ্ছে সম্মানিত সাহাবীরা। দ্বিতীয় প্রজন্ম হচ্ছে তাবেয়ীগণ। তৃতীয় প্রজন্ম হচ্ছে তাবে-তাবেয়ীগণ।” ইমাম নববী রচিত সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থঃ ১৬/৮৫। তাবেয়ীদের যামানা ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম হলেও তাদের যুগেই বহু মুসলমান প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ধ্বংস হয়েছিলো, যা তাবেয়ী বিদ্বান ইমাম মুহাম্মদ ইবনু সিরীন রহি’মাহুল্লাহর বাণী থেকে স্পষ্ট হয়। প্রথমে আমরা তাঁর পরিচয় সংক্ষেপে জেনে নেই, এরপর তাঁর উদ্ধৃতি তুলে ধরা হবে ইন শা আল্লাহ। ইমাম মুহাম্মদ ইবনু সিরীন রহি’মাহুল্লাহ একজন প্রখ্যাত তাবেয়ী বিদ্বান ছিলেন। ১১ হিজরী সনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর প্রায় ২২ বছর পর ৩৩ হিজরীতে উষমান বিন আফফান রাদিয়ল্লাহু আ’নহুর শাসনকালে তার জন্ম হয়। যায়েদ ইবনে ষাবিত, ইমরান ইবনে হুসাইন, আনাস বিন মালিক, আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের মতো প্রসিদ্ধ সাহাবীদের থেকে তিনি ইলম অর্জন করেছিলেন, আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। তিনি আরেকজন প্রখ্যাত তাবেয়ী বিদ্বান হাসান আল-বাসরী রহি’মাহুল্লাহর সমসাময়িক ছিলেন, এমনকি তাঁদের দুইজনেরই জন্ম হয়েছিলো ইরাকের একই শহর বাসরাতে। ইসলামী জ্ঞানের অনেক শাখাতে ইমাম মুহাম্মদ ইবনু সিরীন রহি’মাহুল্লাহর বিচরণ থাকলেও স্বপ্নের ব্যাখ্যাকার হিসেবে তার জীবদ্দশাতেই লোকদের মাঝে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিলেন। তবে আমাদের দেশে বিদআ’তী মোল্লাদের লিখা এবং অর্থ লোভী পুস্তক ব্যবসায়ীদের ছাপানো “স্বপ্নের ব্যাখ্যা” বইটি ইমাম মুহাম্মদ ইবনু সিরীন রহি’মাহুল্লাহর লিখিত নয়। এই বইটা তার নামে চালিয়ে কোটি কোটি মুসলমানকে বোকা বানানো হয়েছে। অথচ এই বইটি মারাত্মক শিরকী এবং কুফুরী মিশ্রিত একটি বই। যাই হোক, প্রায় ৭৭ বছর বয়সে ১১০ হিজরীতে ইমাম মুহাম্মদ ইবনু সিরীন রহি’মাহুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ইমাম মুহাম্মদ ইবনু সিরীন রহি’মাহুল্লাহ তাঁর যুগে মুসলমান নামধারী অনেক লোক, যারা নিজেদের হাওয়ার অনুসরণ করে পথভ্রষ্ট হয়েছিলো, তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করেছিলেন, “আমার মনে হয়, আজকে যদি দাজ্জাল বের হয় তাহলে আহলুল হাওয়া (প্রবৃত্তির অনুসরণকারী লোকেরা) দাজ্জালকে অনুসরণ করবে।” শারহ উসূল আল-ইতিক্বাদঃ ১/১৩১।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট