ঈমানদারদের দুআ

 


বিভিন্ন কারণে আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তার মাঝে একটি হলো- আমাদের জন্য ঈমানদারদের দুআ। যে কেউ যে কোনো সময় যদি বলে- আল্লাহ অমুককে ক্ষমা করে দিন। অথবা জানাজার নামাজ। অথবা কারো মৃত্যুর পর মানুষ তার কথা মনে করে যদি বলে- আমি বা আমরা দুআ করছি আল্লাহ উনাকে ক্ষমা করে দিন। উনি খুবই দ্বীনদার মানুষ ছিলেন। এটাও তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবে।

এই ব্যাপারটা কি আমাদের হাতে? - না। যদি বলি আংশিকভাবে? - কিছুটা। কেন কিছুটা? - প্রভাব। ভেরি গুড! প্রভাব। কার কথা মানুষ বেশি মনে করবে এবং তার জন্য বেশি করে ক্ষমা চাইবে? যার কার্যক্রম অনেক বেশি মানুষের উপকার করে। যিনি বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। যার উত্তম চরিত্র এবং উত্তম আচার-ব্যবহারের কথা মানুষ মনে রাখে। তাই, পরপারে চলে যাওয়া মানুষদের কথা চিন্তা করতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সবার আগে কার কথা আমাদের স্মরণে আসে? যাদের কার্যক্রম আমাদের সবচেয়ে বেশি উপকার করেছে। যারা আমাদের সবচে বেশি সাহায্য করেছেন। যাদের চরিত্র, যাদের উপকার আমাদের কাজে লেগেছে। অতএব, যদিও এ উপায়টি সরাসরি আমাদের হাতে নেই, পরোক্ষভাবে আমরা এর জন্য বীজ বপন করে যেতে পারি। কিভাবে? ভালো ভালো কাজ করে। দানশীল হয়ে, দয়ালু হয়ে, সহমর্মিতা প্রদর্শন করে, অন্যদের খোঁজ খবর নিয়ে। যেন আমরা মানুষের মাঝে সবচে বেশি প্রভাব রেখে যেতে পারি। যার ফলে, সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ যেন আমাদের জন্য দুআ করে; আমাদের মৃত্যুর পর অথবা আমাদের জীবিত থাকাবস্থায়। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন, যে দুআগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রত্যাখ্যান করেন না তা হলো- এক মুসলিম ভাইয়ের জন্য অপর মুসলিম ভাইয়ের দুআ তার অনুপস্থিতে।" সে জানেও না আর আপনি আপনার হাত উত্তোলন করে আল্লাহর নিকট দুআ করছেন- "ও আল্লাহ! আহমেদ ভাই আমার সাথে খুবই উত্তম আচরণ করেছেন। আমার টাকার ভীষণ দরকার ছিল, তিনি আমাকে ধার দিয়েছেন। ইয়া আল্লাহ! তাকে আরও বেশি বেশি ধন-সম্পদ দান করুন। ইয়া আল্লাহ! তার পাপগুলো ক্ষমা করে দিন।" এই দুআটা এসেছে একেবারে আপনার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এটা কবুল করবেন। প্রসঙ্গত, এই সুন্নাহটির কথা আমার ভুলে গেছি। আরেক ভাইয়ের জন্য দুআ করলে আপনার কী ক্ষতি হবে। আর জানেন তো? আপনি যখন আপনার মুসলিম ভাইয়ের জন্য দুআ করেন তখন একজন ফেরেশতা আপনার জন্যেও দুআ করেন। ফেরেশতা বলেন- ইয়া আল্লাহ! যে দুআ করছে তাকেও এটা দান করুন। [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- একজন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করলে তা কবুল হয়। তার মাথায় একজন ফিরিশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য দু’আ করে তখন নিয়োজিত ফিরিশতা বলে থাকে আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরুপ। সহিহ মুসলিম]  মানুষের জন্য দুআ করলে আপনি কী হারাবেন! আমরা কতটা কৃপণ হতে পারি! আমরা এমনকি অন্যদের জন্যেও দুআ করি না। এটা জানা সত্ত্বেও অন্যদের জন্যে যে দুআ করি আমরাও সেটা পাবো। - ড. ইয়াসির কাদি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا وَقَدْ وُكِّلَ بِهِ قَرِينُهُ - প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন ক্বারিন, একজন করে সহযোগী শয়তান বরাদ্দ করা আছে। তারা সারাক্ষনই তোমাদের কুমন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। এর মানে কি আপনারা বুঝতে পারছেন? এটা কিন্তু টম এন্ড জেরি কার্টুনের মতো না যে এক কাঁধে ত্রিশূল হাতে শয়তান দাঁড়িয়ে থাকে আর অন্য কাঁধে ফেরেশতা। এমন না কিন্তু। একটি শয়তান সবসময় থাকে। আপনি যা-ই দেখছেন, যা-ই করছেন, জীবনে যত অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন—তার কাজ হলো, এর প্রতিক্রিয়ায় আপনাকে দিয়ে সম্ভাব্য সর্ব নিকৃষ্ট কাজটি করানো। কেউ এসে আপনাকে সালাম জানালো। সে আপনাকে বলবে, “সে সালাম দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভেতরে ভেতরে তোমাকে ঘৃণা করে।” আপনিও বলেন, “হ্যাঁ আসলেই!” “হ্যাঁ, ওয়ালাইকুমুস সালাম। হুহ” (একটু সন্দেহসহ আপনি জবাব দেন) ভালো কিছু দেখলেন, সেটার মধ্যে মন্দ কিছু খুঁজে দেখার ইচ্ছে করবে। আবার খারাপ কিছু দেখলেন। সে বলবে, “এটা অতোটা খারাপ না। এতো খারাপ না। দেখোই না! তুমি তো মাত্র একমাস আগেই উমরাহ করলে। অনেক সোয়াব কামিয়েছো। কোন সমস্যা নেই। আর রামাদান তো এক সপ্তাহ পরেই আসছে! এতো চিন্তা কীসের? আল্লাহ তো তোমাকে ক্ষমা করেই দিচ্ছেন।” আপনি ভাবছেন, “হ্যাঁ! আসলেই তো! আল্লাহ অনেক ক্ষমাশীল!” যেকোনো পরিস্থিতিতে পড়েন না কেন আপনি, একটি চিন্তা মাথায় আসে, “খারাপ কিন্তু অতো খারাপ না। তুমি ভালোই আছো।” আর ভালো জিনিস হলে বলে, “আরে! তুমি আসলেই তা করতে চাও?” কখনও কি এমন হয়েছে যে আপনি বিছানায় শুয়ে আছেন, এখনো ইশা পড়েননি। আর আপনার শরীর যেন চারগুণ ভারী হয়ে গেছে? সে বলে, “শুধু আর পাঁচটা মিনিট শুয়ে থাকো। তারপর উঠে নামায পড়ো। শুধু পাঁচ মিনিট!” আপনিও ভাবলেন, “হ্যাঁ আর মাত্র পাঁচ মিনিট। নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য একটু সময় দরকার।” আর এমন হয় যে কিছু বোঝার আগেই… (ঘুম) এমন হয় কি না? এটাই সারাক্ষণ হয়। আপনি তাকে বুঝে ফেলার আগেই সে উধাও হয়ে যায়! ভাবেন, এটা আপনারই চিন্তা। আপনারই দোষ। আমি অনেক ক্লান্ত। শুধু একটু… আজ বাজে একটা দিন… সে বলে, “খুব বাজে দিন গেছে আজ”… আপনিও বলে ফেলেন, “অনেক বাজে দিন গেলো!” এটা যে তার কাজ, আপনার তা বুঝে ওঠার আগেই সে অদৃশ্য হয়ে যায়। নিয়মিত সূরাতুন নাস তেলাওয়াত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন এগুলো তেলাওয়াত করতেন। কেন? কারণ, শয়তান নিজের কাজে খুবই নিয়মিত। সে খান্নাস! সে আসে আবার পালিয়ে যায়। আবার আসে আবার উধাও হয়। পেশাদারিত্বের সাথে করে সে। সারাক্ষণ! সে কোন বিরতি নেয় না। আপনি নেন। আমি নিই। সে চায় আপনি শিথিল হোন। আর প্রসঙ্গক্রমে, আরাম করার সময় আপনি কি বলেন, “আর অল্প একটু। অল্প একটু পরেই করছি”? আর খানাসা মানে আপনাদের কী বলেছিলাম? দেরী করানো। বিলম্বিত করা। সে শুধু চায় আপনি দেরী করেন। ইবাদতে দেরী করেন। দেরীতে সাড়া দিন। আপনার মায়ের সাথে কথা বলা দরকার। আপনার স্ত্রীকে কিছু বলতে চান। আপনার কারও কাছে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। ফোন করে দুঃখিত বলতে হবে। “আমি বরং কাল ফোন দেব তাকে।… আজকে দিনটা সুবিধার না। এখন বলাটা অসুবিধা।” কিছু দান করতে যাবেন, “হ্যাঁ আমি দেব! আমি দেব! এই সপ্তাহ শেষে।” একটু বিলম্বিত করলেন। এরপর আরেকটু। আরেকটু। এটাই খান্নাসের কাজ। الَّذِى يُوَسْوِسُ فِى صُدُورِ النَّاسِ - নোমান আলী খান [ সমাধানঃ ভালো কাজে দেরি না করা। শয়তান নামাজে দেরি করাতে চাইলে আকরাম নদভি এক আলোচনায় বলেছেন উনি এটা করেন। উনি শয়তানকে বলেন, ঠিক আছে আমাকে এখন অজু করতে দাও। আমি এখন অজু করবো। তারপর দেখি। এরপর অজু করলে আল্লাহ সাহায্য করেন। শয়তান পালিয়ে যায়। অন্তরে নামাজ পড়ার আগ্রহ জেগে উঠে।]

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট