জাহান্নামীদের করুণ অবস্থার সামান্য বিবরণ

 


❑ জাহান্নামীদের করুণ অবস্থার সামান্য বিবরণঃ জাহান্নামীদেরকে যখন জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ঘিরে ধরবে তখন তারা জাহান্নাম থেকে বের হয়ে পুনরায় দুনিয়ায় এসে সৎ কাজ করার জন্য আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে দিন, আমরা পূর্বে যে (খারাপ) কাজ করতাম, তার পরিবর্তে আমরা ভাল কাজ করব। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি যে, তখন কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত? আর তোমাদের নিকট তো সতর্ককারী এসেছিল। কাজেই তোমরা শাস্তি আস্বাদন কর, আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই’। (সূরা ফাতিরঃ ৩৭)

অর্থাৎ আল্লাহ জাহান্নামীদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন এবং তাদের আর কখনোই ক্ষমা করবেন না। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘জাহান্নামীরা বলবে, ‘হে আমাদের রব, দুর্ভাগ্য আমাদের পেয়ে বসেছিল, আর আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট। হে আমাদের রব, জাহান্নাম থেকে আমাদেরকে বের করে দিন, তারপর যদি আমরা ফিরে যাই তবে অবশ্যই আমরা হব যালিম।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই থাক, আর আমার সাথে কথা বল না।’ (সূরা মু’মিনুনঃ ১০৬-১০৮) ❑ জাহান্নামীগণ তাদের আবেদনে নিরাশ হয়ে জাহান্নামের প্রহরীগণের নিকট আসবে এবং কিছুটা হলেও শাস্তি কমানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশ করার আবেদন করবে। “আর যারা জাহান্নামে থাকবে তারা জাহান্নামের দারোয়ানদেরকে বলবে, ‘তোমাদের রবকে একটু ডাকো না! তিনি যেন একটি দিন আমাদের আযাব লাঘব করে দেন।’ তারা বলবে, ‘তোমাদের নিকট কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেননি? জাহান্নামীরা বলবে, ‘হ্যাঁ’ অবশ্যই। দারোয়ানরা বলবে, ‘তবে তোমরাই দু’আ কর। আর কাফিরদের দো‘আ কেবল নিষ্ফলই হয়”। (সূরা মু’মিন: ৪৯-৫০)

অতএব, জাহান্নামীদের সকল আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে। তাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের কোন পথ থাকবে না, এমনকি শাস্তি হতে সামান্যটুকুও কমানো হবে না এবং তাদেরকে ধ্বংসও করা হবে না। বরং তাদের উপর জাহান্নামের শাস্তি চিরস্থায়ী হবে। শেষ পর্যন্ত যখন তাদের কোন চেষ্টাই কাজে আসবে না তখন তারা এমনভাবে কাঁদতে থাকবে যে, কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে পানির পরিবর্তে চোখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই জাহান্নামবাসীগণ এমনভাবে কাঁদতে থাকবে যে তাদের চোখের পানিতে নৌকা চালালে তা চলবে এবং তারা রক্ত কান্না করবে। (মুসতাদরাক হাকিমঃ ৮৭৯১)

পুলসিরাতের ভয়াবহতাঃ পুলসিরাত জাহান্নামের উপর রাখা একটি সেতু বা সাঁকো। এটা চুলের থেকেও চিকন এবং তরবারীর থেকেও ধারালো হবে। পুলসিরাতের পথ হবে অত্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন। জাহান্নামের উপর রাখা এই পুলসিরাত প্রত্যেকেই অতিক্রম করতে হবে। পুলসিরাত পার হয়ার সময়টি এমন কঠিন হবে যে, তখন মানুষ তাদের আপন জনদের কথাও ভুলে যাবে। পুলসিরাতের নিচে জাহান্নামের আগুন এত বেশি ভয়াবহ হবে যে, সেখানে নবীগণ পর্যন্ত ভয়ে শুধু বলতে থাকবেঃ "রব্বি সালামুন, রব্বি সালামুন" অর্থঃ হে আল্লাহ বাঁচাও! হে আল্লাহ বাঁচাও।

পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় ভয়ে ভীত থাকার কারণে নবীগণ ব্যতীত অন্য কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হবে না। পুলসিরাতে আগুনের তৈরি হুক থাকবে যা লোকদেরকে তাদের পাপ অনুযায়ী ধরে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। হাসান বাসরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার ভাইকে বললঃ তোমার কি জানা আছে যে, তোমাকে জাহান্নামের উপর দিয়ে পার হতে হবে? সে বললঃ হ্যাঁ। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, তোমার কি জানা আছে যে, তুমি সেখান থেকে মুক্তি পাবে? সে বললঃ না। তখন ঐ ব্যক্তি বললঃ তাহলে তুমি কি করে হাসছ? এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির ঠোঁটে আর কখনো হাসি দেখা যায়নি। "আল্লাহুম্মা হাসিবনি হিসাবাই ইয়াসিরা"___ (আমিন)

❖ এই দুনিয়ার মাঝে সবচাইতে উত্তম সম্পদ কোনটি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ একজন নেক ও সৎ কর্মপরায়ণ স্ত্রী। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এই দুনিয়ার পুরোটাই হচ্ছে ভোগ-বিলাস ও আনন্দ উল্লাসের সামগ্রী। তার মাঝে সবচাইতে উত্তম সম্পদ হচ্ছে নেক ও সৎ কর্মপরায়ণ (উপযুক্ত) স্ত্রী।” সহীহ মুসলিমঃ ১৪৬৭।

গুনাহ করেছেন? তওবা করতে চান...? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একজন মুসলিম কোনো পাপ কাজ করার পরে ছয় ঘন্টা সময় পার না হওয়া পর্যন্ত বাম পাশের ফেরেশতা সেটা তার আমল নামায় লিপিবদ্ধ করেন না। সে যদি অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন বাম পাশের ফেরেশতা তা একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দেয় (অর্থাৎ সেই পাপ তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করেন না)। আর সে যদি তোওবা না করে, তাহলে সেটা খারাপ কাজ হিসেবে তার আমল নামায় লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আল-মাজমু আল কাবীরঃ ৮/১৫৮, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যদি কোনো বান্দা কোনো পাপ কাজ করে ফেলে, অতঃপর সে উত্তমরূপে ওযু করে পবিত্রতা অর্জন করে এবং দাঁড়িয়ে যায় ও দুই রাকআ’ত (নফল) সালাত আদায় করে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।” (আবু দাউদঃ ১৫২১, শায়খ আলবানী (রহঃ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) তাওবাহ করার জন্যে দুই রাকাত নফল নামাযের বিবরণঃ (১) কৃত পাপের জন্য আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হতে হবে। (২) উত্তমরুপে পূর্ণাংগ ওযু সম্পাদন করতে হবে। (৩) "আমি তোওবার জন্যে দুই রাকাত নফল নামায পড়ছি", অন্তরে এতোটুকু চিন্তা করে বা স্থির করে আল্লাহু আকবার বলে বুকে হাত বেধে নামায শুরু করতে হবে। এটাই হচ্ছে নিয়ত, মুখে উচ্চারণ করে আলাদা কোন নিয়তের দুয়া পড়তে হবেনা। (৪) দুই রাকাতে যেকোন সুরা বা আয়াত কিরাত হিসেবে পড়া যাবে। (৫) একমনে আল্লাহমুখী হয়ে নামায পড়তে হবে, নামাযে অন্য কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করা যাবেনা। (৬) নামাযের সিজদাতে বা সালাম ফেরানোর পূর্বে আল্লাহর কাছে তোওবা ও ইস্তেগফারের দুয়াগুলো পড়তে হবে। (৭) কুরান ও হাদীসের দুয়াগুলো আরবীতে মুখস্থ করে পড়া ভালো তবে আরবী না জানলে এই নামাযে বাংলাতে দুয়া করা যাবে। (৮) আর নামাযে দুয়া পড়তে না চাইলে সালাম ফিরিয়ে মুনাজাতে আল্লাহর কাছে তোওবা ও ইস্তেগফারের দুয়াগুলো পড়তে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণ তওবা করার তৌফিক দান করুক এবং সেই সাথে আমাদের সকলকে ক্ষমা করুক। আমিন।

❖ জাহান্নামের সবচেয়ে হালকা শাস্তি কোনটি হবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ আগুনের ২টি জুতা। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, নোমান বিন বাশির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি হবে ঐ ব্যক্তির, যার পায়ের নিচে আগুনের ২টি অঙ্গার (জুতা পরিয়ে দেয়া হবে) রাখা হবে, যার ফলে তার মস্তিষ্ক টগবগ করে গলে গলে পড়তে থাকবে। [সহিহ মুসলিম, ১ম খন্ড, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং- ৪০৭]

❖ জান্নাতের সব থেকে বড় নিয়ামত কোনটি হবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার দর্শন। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, মহান আল্লাহ তায়ালা জান্নাতবাসীদের জিজ্ঞাসা করবেনঃ হে জান্নাত বাসীগণ! তোমরা কি তোমাদের আমলের প্রতিদান পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা জবাব দিবে হে আমাদের প্রভু, আপনি আমাদেরকে এমন সব নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি। তখন আমরা সন্তুষ্ট হবো না কেনো...! তখন আল্লাহ বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও অধিক উত্তম ও উন্নত জিনিস দান করবো না? তারা বলবে এর চেয়ে অধিক ও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন আমি চিরকাল তোমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো। কোনদিন আর অসন্তুষ্ট হবো না। এরপর আল্লাহ নিজের নূরের পর্দা খুলে ফেলবেন। আল্লাহর অতিশয় সুন্দর সত্তার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে জান্নাত বাসীগণ জান্নাতের সকল নিয়ামতের কথা ভুলে যাবে, এক নজরে তারা শুধু মহান আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবে......। এভাবে হাজার হাজার বছর কেটে যাবে......। সুবহানাল্লাহ...। (বুখারিঃ ৬৫৪৯)


Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট