আল্লাহর কিতাব


 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন সম্পদশালীরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, বিয়ের আগে তারা একটি চুক্তিনামা সাক্ষর করে। আমাদের মধ্যে যদি ডিভোর্স হয় তাহলে সম্পদের ৫০% স্ত্রী পাবে, ৫০% স্বামী পাবে। মজার ব্যাপার হলো- এ চুক্তিনামায় এটাও উল্লেখ থাকে যে, যদি স্ত্রী জেনা করে তাহলে সে কিছুই পাবে না। আর এটা আইনগতভাবে বাধ্য।

তো, তারা যখন আমাদের বলে- তোমাদের ইসলামে অনেক বেশি আইন-কানুন বিধি-নিষেধ; আমাদের এসব নেই। আমরা বলি- হ্যাঁ। তোমাদেরও আছে। যদি সবকিছুই ওপেন হতো তাহলে স্ত্রীর তো ডিভোর্স হলেই ৫০% সম্পত্তি পাওয়ার কথা। সে জেনা করুক বা যা ইচ্ছা তাই করুক, তাতে তো এই নিয়মের কোনো পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল না। সে জেনা করতে পারবে না, কেন তোমরা এই শর্ত আরোপ করছো তাহলে। তার মানে, এমনকি তারাও বিশ্বাস করে জেনা-ব্যভিচার করা মন্দ কাজ। তারা আমাদের আরো বলে, আমরা ক্রমাগত নিজেদের পরিবর্তন করে চলছি। আর তোমরা সপ্তম শতকে আটকে আছো। আমি বলি- আমরা গর্বের সাথে সপ্তম শতকে আটকে আছি। এবং এটা নিয়ে আমরা যারপরনাই গর্বিত। আল্লাহ যেমন সূরা কাহাফের প্রথম আয়াতে বলেছেন- "সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, আর তাতে কোন বক্রতার অবকাশ রাখেননি।" এই কিতাবের নিয়মকানুন কখনো নতিস্বীকার করবে না। কখনো বেঁকে যাবে না। আল্লাহ তাঁর কিতাবে কোনো বিচ্যুতি রাখেননি। এখন, 'ইওয়াজ' বা বিচ্যুতির মানে কী? বিচ্যুতি মানে, কোনো কিছু সোজা চলছিল এরপর ধীরে ধীরে বেঁকে যেতে শুরু করলো। আর একবার যখন বেঁকে যেতে শুরু করে, এরপর ক্রমান্বয়ে শুধু বক্র হতেই থাকে। এক শতাংশ বেঁকে যদি বিশ মিটার উপরে উঠে যান, তখন এটা আর এক শতাংশ থাকে না, এটা তখন বিশ শতাংশ বেঁকে যায়। এভাবে যথেষ্ট পরিমাণে উপরে উঠতে থাকলে আপনি একেবারে ভিন্ন একটি গন্তব্যে গিয়ে উপনীত হবেন। আমাদের সমাজে কী হয়? সমাজের এমন কিছু নিয়ম-কানুন থাকে যা ভঙ্গ করা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। দুই বছর পার হয়ে গেলে...না, এ নিয়ম ভাঙ্গা এতটা খারাপ কিছু না। তিন বছর পর...এতে সমস্যা নেই। চার পাঁচ বছর পর, এ নিয়ম ভাঙ্গাই এখন আইনের অংশ। আইন করা হয়েছে যে, এ নিয়ম আর মানা যাবে না। ভাঙতে হবে। ভালো খারাপের মানদন্ড সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশ ত্রিশ বছর পূর্বে যদি আজকের আমেরিকার নৈতিক অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করতেন যে, আমেরিকানরা কি কখনো অমুক অমুক জিনিসকে বৈধ করে নিবে? তারা তখন জবাব দিতো- কক্ষনো না। এমনটা কোনোদিন ঘটবে না। কিন্তু, এখন এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দুনিয়া। ত্রিশ বছর আগের মানুষেরা এ দুনিয়া চিনবে না। আমরা এমনকি একশ বছর আগে নিয়েও কথা বলছি না, আমরা কথা বলছি ত্রিশ বছর আগে নিয়ে। তাহলে স্ট্যান্ডার্ড পরিবর্তিত হচ্ছে। আরো মজার ব্যাপার হলো, প্রতিবার একটা পরিবর্তন এনে তারা বলে, এটাই মানব জাতির সর্বোচ্চ চূড়া। এর চেয়ে উত্তম কোনো সমাজ হতে পারে না। এরপর কয়েক বছর পরে... না, না, না। ঐটা অত ভালো ছিল না। এটাই সেরা। তারা শুধু এটা নিজেদের জন্য করে না। তারা বলে, আমাদের যে সবচেয়ে সেরা নৈতিক মানদন্ড আছে, সেরা দর্শন আছে, সেরা জাস্টিস আছে তাই নয়, সমগ্র দুনিয়াকে এটা গ্রহণ করে নিতে হবে। কারণ, এটাই যে সেরা। এরপর যখন তারা এতে পরিবর্তন নিয়ে আসে, তখন আবার সমগ্র দুনিয়াকেও তাদের সাথে পরিবর্তিত হতে বলে। এরপর আবার পরিবর্তন আনে, সবাইকে বলে আবার তাদের সাথে পরিবর্তিত হতে। আর যদি তাদের সাথে আপনি পরিবর্তিত না হোন, তারা তখন বলে আপনি ব্যাকওয়ার্ড, সেকেলে। তাদের এ যুক্তির বিরুদ্ধে কুরআন কী বলে? আমি আপনাদের নিকট একটি চিত্র উপস্থাপন করছি। সমগ্র দুনিয়া যেন একটি নদী যা নিচের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সেই স্রোতস্বিনী নদীর মাঝখানে একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে। যার শিকড়গুলো মাটির বহু গভীরে শক্ত করে প্রোথিত। পাথর গড়িয়ে যাচ্ছে, মাছগুলো গড়িয়ে যাচ্ছে, সবাই স্রোতের তালে হারিয়ে যাচ্ছে কিন্তু গাছটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আজকের দুনিয়ায় একজন ঈমানদারের অবস্থা গাছটি আঁকড়ে ধরে থাকা ব্যক্তির ন্যায়। কারণ, আপনি আল্লাহর এই কিতাব ধারণ করে আছেন। "আসলুহা সাবিতুন ওয়া ফারউহা ফিস সামাই- اَصۡلُهَا ثَابِتٌ وَّ فَرۡعُهَا فِی السَّمَآءِ - যার মূল সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত আর শাখা-প্রশাখা আকাশপানে বিস্তৃত। "(১৪:২৪) যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি গাছটি শক্ত করে ধরে থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি টিকে থাকবেন। প্রেসার অনুভব করবেন। কিন্তু হারিয়ে যাবেন না। যখনি একটুখানি ছেড়ে দিবেন কী হবে তখন? অন্য সবার মত বানের তোড়ে হারিয়ে যাবেন। আজ একটুখানি দূরে, কাল আরো একটু, এরপর আরেকটু... এটা আপনাকে শুধু নিচের দিকেই নিয়ে যেতে থাকবে। এই উম্মাহর সদস্য হওয়ার মানেই হলো আমরা স্রোতের এই চাপ অনুভব করবো। চাপ আসবে আর দিন দিন শুধু খারাপ হতে থাকবে। পরিস্থিতি যত খারাপ হবে আমাদের তত বেশি শক্ত করে আল্লাহর কিতাব আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। নতুবা পতন হতে হতে একেবারে চূড়ান্ত পতনের স্থানে নিক্ষিপ্ত হব। আল্লাহ কুরআনের অন্যত্র যেমন বলেছেন- فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوۃَ وَ اتَّبَعُوا الشَّهَوٰتِ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیًّا - অতঃপর তাদের পর এল অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা নামায হারালো, আর লালসার বশবর্তী হল। তারা অচিরেই ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। (১৯ঃ ৫৯) প্রথম পতন কোনটি ছিল? নামাজ। এরপরের আরও জঘন্য পতন হল, فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا (Then they will fall into deviation) غَي এর আক্ষরিক অর্থ হল, deviation বিচ্যুতি, নৈতিক অধঃপতন। অর্থাৎ, তাদের মূল্যবোধের ক্রমান্বয়ে অধঃপতন ঘটবে। অনৈতিকতার এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে ক্রমান্বয়ে নামতে থাকবে। আর এরপর তাদের চূড়ান্ত পতন হবে জাহান্নামে। - নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে

****************************************************************************

তাওবার একটি শর্ত হলো, যিনি তাওবা করেছেন তাকে অবশ্যই কোনো ভাল কাজ করার মাধ্যমে এই মন্দ কাজের ক্ষতিপূরণ করতে হবে। অন্য কথায়, একটি খাঁটি তাওবা আপনাকে আরো ভালো মানুষে পরিণত করে। আপনি আপনার দান-সদকা বাড়াবেন। আপনার যাকাত, আপনার নামাজ, আপনার দোআ, আপনার জিকির, আপনার কুরআন অধ্যয়ন বা তিলাওয়াত বাড়াবেন। হয়তো কোনো এতিমের দেখাশোনা করতে পারেন। এগুলো বাড়াবেন। কারণ, আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, আমি অন্যায় করেছি আমাকে এর ক্ষতিপূরণ করতে হবে। আমি ভুল কাজ করে এসেছি আমাকে এর প্রতিবিধান করতে হবে। আর তাইতো আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা (পরাক্রমশালী এবং মহিমান্বিত) বলেন, যারা পাপ কাজ করে আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন... "তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (২৫:৭০) - ইয়াসির কাদি।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট