সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার

 


ফেইসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি সোস্যাল মিডিয়াতে অনর্থক, অপ্রয়োজনীয় বা হারাম কাজের পেছনে সময় নষ্ট করে আমরা যে নিজেদের অজান্তেই আমাদের কত বড় ক্ষতি করে ফেলছি, সেটা নিয়ে একজন শায়খের কিছু মূল্যবান কথা শুনুন। আল্লাহ সকল মুসলিমদেরকে হেফাজত করুন, আমিন। সুলায়মান আর-রুহাইলি হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “তোমরা এই ক্বাইয়িদাহ (মূলনীতি, principle) গ্রহণ করো। যেই জিনিস তোমাকে কোন ফরয বা ওয়াজিব কাজ হতে বিরত রাখে বা বাঁধা দেয় সেটা তোমার জন্য হারাম। আর যেই জিনিস তোমাকে ফযীলতপূর্ণ কোন কাজ (যেমন সুন্নত, মুস্তাহাব বা যেকোন ভালো কাজ) হতে বিরত রাখে বা বাঁধা দেয় সেটা তোমার জন্য মাকরুহ (ঘৃণিত বা অপছন্দনীয়)।

সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি তার উপর ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক অর্পিত ফরয দায়িত্ব ত্যাগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে ব্যস্ত থাকে, এমনকি সে তার ছেলে-মেয়ের দিকে খেয়াল রাখেনা, তাদের হক্ক আদায় করেনা, এমনকি অনেক অফিসের কর্মীরা অনলাইনে যোগাযোগ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কোন উদ্দেশ্য নিয়ে সেই অফিসে আগত লোকেরা কাজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, আর সেখানকার কর্মী তখন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। সেই লোক হয়তোবা ৫ মিনিট, ১০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর সেই কর্মী তখন মোবাইলে গেমস খেলতে থাকে। আমার কাছে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেছে, “আমি এই অফিসের অমুক কর্মীর কাছে একবার গিয়েছিলাম আর সে তখন মোবাইল টিপাটিপি করছিলো আর বললো, আপনি ২-৩ মিনিট দাঁড়ান। আমি তাকে বললাম, ভাই আমি আপনার কাছে একটা কাজে এসেছি। সে তখন বললো, আপনি দেখছেন না আমি কাজ করছি?” সে তার ওয়াজিব কাজ ফেলে রেখে এই ধরণের যোগাযোগে ব্যস্ত। সে মেসেজ পাঠাচ্ছে, অন্যের মেসেজ পড়ছে। এইভাবে কোন কাজে ব্যস্ত হওয়ার কারণে কোন ব্যক্তি যদি ফরয কাজ ত্যাগ করে, তখন যে কারণে সে ফরয কাজ ত্যাগ করেছে সেটা তখন তার জন্য হারাম হয়ে যায়। আর যদি এইভাবে কোন কাজে ব্যস্ত হওয়ার কারণে ফযীলতপূর্ণ কাজ ছেড়ে দেয় তখন সেটা তার জন্য মাকরুহ হয়ে যায়। আজকাল আমরা যদি কিছু মানুষকে জিজ্ঞেস করি, “আজ তুমি কতটুকু ক্বুরআন তেলাওয়াত করেছো?” তাহলে সে বলে, “আল্লাহর কসম! আজ আমি একটুও ক্বুরআন তেলাওয়াত করিনি।” শায়খঃ “আচ্ছা। তুমি সর্বশেষ কোন দিন ক্বুরআন তেলাওয়াত করেছিলো?” উত্তরে সে বলে, “জুমুআ’হর দিন। মনে হয়, সেইদিন একটু ক্বুরআন তেলাওয়াত করেছিলাম।” শায়খঃ “ভাই, তুমি কেনো ক্বুরআন তেলাওয়াত করোনা?” সাধারণ মুসলিমঃ “আমিতো ক্বুরআন পড়ার সময়ই পাইনা।” শায়খঃ “আজকাল মানুষ (Facebook, Whats app, Tweeter-এর মতো) সোস্যাল মিডিয়াতে যতটা সময় নষ্ট করে, আমি বলি তারা যদি এর অর্ধেক সময় ক্বুরআন তেলাওয়াত করতো, তাহলে একদিনে পাঁচ পারা ক্বুরআন পড়ে ফেলতে পারতো। আর এইগুলো যদি তাকে কোন হারাম কাজে লিপ্ত করে, তাহলে সেটাতো আরো মারাত্মক। যদি কোন ব্যক্তি এমন কিছু দেখে যা দেখা আল্লাহ হারাম করেছেন, যেমন হারাম ছবি, নিকৃষ্ট কথা, গায়ের মাহরাম মহিলাদের সাথে যোগাযোগ করা, আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন...কোন সন্দেহ নাই এইভাবে সে নিজের উপরে যুলুম করছে। ভাইয়েরা আমার! একারণে আমি বলি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একে অন্যের সাথে যোগাযোগের মধ্যে অনেক ভালো দিক রয়েছে। এইগুলো অনেক দূরকে আমাদের জন্য কাছে নিয়ে আসে, এইভাবে একজন ব্যক্তি বই পড়তে পারছে, সংবাদ জানতে পারছে, মানুষের সাথে পরিচিত এবং যুক্ত হতে পারছে। কিন্তু এইগুলো ব্যবহারের জন্য আমাদের নিজেদেরকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এছাড়া এইগুলোতে বিদ্যমান হারাম জিনিস হতে আমাদেরকে খুব সতর্ক এবং সাবধান থাকতে হবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সব কিছু দেখছেন। এইগুলো ব্যবহার করার কারণে ফরয ত্যাগ করা থেকে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। এইগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার করে সীমা লংঘন করা উচিৎ নয়। ভাইয়েরা আমার! আমার কাছে এমন সংবাদ পৌঁছেছে যে, কিছু লোকেরা এইগুলো ব্যবহার করার কারণে তাদের ঘরের লোকেরা একত্রিত হওয়া ত্যাগ করেছে। সেই ঘরের মধ্যে বসেই ছেলে-মেয়েরা একে অন্যের সাথে হোয়াটস এপ বা এমন মিডিয়া দিয়ে একজন আরেকজনের সাথে মেসেজে কথা বলছে। একই বাড়ির মধ্যে একজন এক রুম থেকে, আরেকজন অন্য রুম থেকে মোবাইলে কথা বলছে কিন্তু তারা ঘরে একত্রিত হয়ে বসেনা। যদি একজনের তার ভাইয়ের কাছে কিছু প্রয়োজন হয় সে তার ভাইকে মেসেজ পাঠায়, যদিও সেই ভাই ঘরের অন্য রুমে উপস্থিত। এমনকি স্বামী স্ত্রী একত্রিত হয় আর স্বামী বলে, আজ সারাদিন আমি বাহিরে যাবোনা, ঘরেই থাকবো। কিন্তু পুরো সময়টা স্বামী তার মোবাইলে আর স্ত্রী তার মোবাইলে কাটাচ্ছে। অনলাইনে একজন আরেকজনের সাথে অতিরিক্ত যোগাযোগের কারণে লোকদের অন্তরসমূহ একজন থেকে আরেকজন থেকে দূরে সরে গেছে।

শায়খ বলেন, “আমি বলছিনা তোমরা এইগুলো একেবারেই ব্যবহার করবেনা। বরং এইগুলো ব্যবহার করো, এইগুলোর ভালো দিক আছে সেইগুলো তোমরা গ্রহণ করো। কিন্তু আমাদের এইগুলো ব্যবহার করা উচিৎ সঠিক রাস্তায়। এক বৃদ্ধ মহিলার কথা শুনে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। সেই বৃদ্ধ মহিলা দেখলো, তার ছেলে-মেয়েরা যখনই তাকে দেখতে আসে আর তারা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন তিনি তার ঘরের দরজায় একটা বাক্স রেখে দিলেন আর তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা আমার ঘরে প্রবেশ করতে চাও তাহলে তোমাদের মোবাইল এই বাক্সে রেখে আমার ঘরে প্রবেশ করো। এইভাবে বৃদ্ধার ঘরে তার ছেলে-মেয়েরা যখন প্রবেশ করে তখন তারা যেনো শুধুমাত্র তার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসে, তার ঘরে বসে শুধুমাত্র তার মায়ের এবং তাদের ভাইদের সাথে কথা বলে এটা নিশ্চিত করে। আর তারা যখন ফিরে যাবে তখন তাদের মোবাইল নিয়ে যাবে। এটা সত্যি একটা ঘটনা। আল্লাহ সেই বৃদ্ধ মহিলাকে আমাদেরকে এই নসীহত দানের জন্য উত্তম প্রতিদান দিন। আমাদের উচিৎ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া।”

❖ সাপ্তাহিক ঈদের দিন কোনটি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ জুম’আ বারের দিন। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, "জুম’আর দিন হল সাপ্তাহিক ঈদের দিন।" [ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮]

"জুম’আর দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদা সম্পন্ন।" [মুসনাদে আহমদঃ৩/৪৩০; ইবন মাজাহঃ১০৮৪]

❖ কোন দরূদটি বিদাতি দরুদ এবং তার উপর আমল করা নাজায়েজ? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ উপরের সবগুলোই। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, দরূদে শিফা; দরূদে তাজ; দরূদে লাকী; দরূদে নারিয়া; দরূদে তুনাজ্জিনা এসবগুলো দরুদের নামে বানোয়াট বিদাতি দরুদ। এগুলো পড়া যাবে না। এগুলো সাধারণত বাজারে বহুল প্রচলিত মানুষের ঈমান ধ্বংসকারী কিছু বই যেমনঃ ১। মুকসেদুল মুমিনিন, ২। নিয়ামুল কুরআন, ৩। নূরানি পাঞ্জেগানা ইত্যাদি। এইসকল বইগুলোতেই লিখা থাকে। সুতরাং এই সব বিদাতি দরুদের বই কারও বাসায় থাকলে, আজই ধ্বংস করে ফেলুন। এগুলো থেকে দূরে থাকুন। দরুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দরূদ হচ্ছে, দরূদে ইব্রাহীম। যেটা আমরা সলাতের মধ্যে পড়ি। সুতরাং দরূদ পড়তে চাইলে এই সর্বশ্রেষ্ঠ দরূদ দরূদে ইব্রাহীম পড়ুন। সারাদিন পড়ুন, হাজার হাজার বার পড়ুন। ইনশাআল্লাহ।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট