আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়

 


মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের খেয়াল-খুশি, ইচ্ছা-আকাংখা বা কামনা-বাসনা বিসর্জন দেওয়া মুমিনদের জন্য সুখ ও সফলতার একটা মাধ্যম। মহান আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন, তোমরা কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় না কর। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, আল্লাহ তা ভালো জানেন। সুরা আলে-ইমরানঃ ৯২।

নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোন কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে তার চাইতে উত্তম কিছু দ্বারা প্রতিস্থাপন করবেন।” মুসনাদে আহমাদঃ ২২৫৬৫। শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এই দুনিয়ার পুরোটাই হচ্ছে ভোগ-বিলাস ও আনন্দ উল্লাসের সামগ্রী। তার মাঝে সবচাইতে উত্তম সম্পদ হচ্ছে নেক ও সৎ কর্মপরায়ণ (উপযুক্ত) স্ত্রী।” সহীহ মুসলিমঃ ১৪৬৭। এজন্যই একজন হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আ'নহু বলেছেন, “ঈমানের পর মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচাইতে বড় নেয়ামত হচ্ছে অনুগতা, মিষ্ট ভাষী, কোমল হৃদয়ের মুমিনাহ স্ত্রী। আর শিরকের পরে বান্দার জন্য সবচাইতে বড় বিপদ হচ্ছে ধারালো জিহবার ও বদ চরিত্রের অবাধ্য স্ত্রী।”

আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

❖ প্রতি হাজারে কত জন আদম সন্তান জাহান্নামী হবে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে? গতকালকের এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, আবু সা’ঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আল্লাহ আদমকে ডেকে বলবেন, হে আদম! তিনি বলবেন, আমি তোমার খিদমতে হাযির। যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদের (নিক্ষেপ করার জন্য) বের কর। আদম (আ.) বলবেন, কী পরিমাণ জাহান্নামী বের করব? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শ’ নিরানব্বই জন। আর এটা ঘটবে ঐ সময়, যখন (ক্বিয়ামতের ভয়াবহতায়) শিশু বুড়িয়ে যাবে। (আয়াত): আর প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে, আর মানুষকে দেখবে মাতাল, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে মাতাল নয়, কিন্তু আল্লাহ্‌র শাস্তি বড়ই কঠিন (যার কারণে তাদের ঐ অবস্থা ঘটবে)- [সূরা হাজ্জ: ২]।

এ ব্যাপারটি সাহাবাগণের নিকট বড় কঠিন মনে হল। তখন তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদের মধ্যে থেকে (মুক্তি প্রাপ্ত) সেই লোকটি কে হবেন? তিনি বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর যে ইয়াজুয ও মা‘জুয থেকে এক হাজার আর তোমাদের হবে একজন। এরপর তিনি বললেন, সপথ ঐ সত্তার, যার করতলে আমার প্রাণ! আমি আশা রাখি যে তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ হবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা ’আলহামদুলিল্লাহ’ ও আল্লাহু আকবার’ বলে উঠলাম। তিনি আবার বললেন, সপথ ঐ সত্তার, যার হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই আশা রাখি যে তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। অন্য সব উম্মাতের তুলনায় তোমাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে কালষাঁড়ের চামড়ার একটি সাদা চুলের মত। অথবা সাদা দাগ, যা গাধার সামনের পায়ে হয়ে থাকে। [বুখারী: হা/৬৫৩০, বাংলা, তাওহীদ পাবলিসেন্স, ৬/৫৪, ফাতহুল বারী, ১/৩৮৮।]

সাবধান! বর্তমান সময়ে কেন জানি বিদাতিদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে টুপি-দাঁড়িওয়ালা বক্তা পর্যন্ত বিদাতে ছেয়ে আছে। এবিষয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে আছে মহিলা আলেমা নামের কিছু জাহেলা। আর এই সব বিদাতি সাধারণ মানুষ, টুপি-দাঁড়িওয়ালা বিদাতি বক্তা, মহিলা আলেমা নামের জাহেলা বিদাতিদের সংখ্যা এতই বেশি যে, যেদিকে তাকাই শুধু বিদাত আর বিদাত! যেন বিদাতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে চতুর্দিকে। কাউকে কিছু বলাও যায়না। নিজেকে সংশোধন করা তো দুরের কথা বরং বললেই এদের অহংকার আরও বেড়ে যায়। এত মানুষ এটা করছে, তাহলে কি সবাই ভুল? এত মানুষ কি তাহলে জাহান্নামে যাবে? বাব দাদার আমল থেকে এটা করে আসছে! অমক বড় হুজুর এটা করে, আর আমি করব না? এত দিন তো এটা শুনি নি, নতুন হদিস নিয়ে এসেছে! তুই লা-মাজহাবী, তুই আহলে হাদিস, তুই ওয়াহাবী, তুই ইয়াহুদীদের দালাল ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব অহংকারমূলক মন্তব্য তারা ছুড়ে মারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, “তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে, যখন বিদআত তোমাদেরকে এমনভাবে ঘিরে নেবে যে, বিদআত করতে করতে তোমাদের যুবকেরা বৃদ্ধ হবে, আর বিদআত করতে করতে ছোটরা বড় হবে এবং মানুষ বিদআতকে সুন্নাত হিসাবে গ্রহন করবে। আর যদি কেউ কোন বিদআত ত্যাগ করে, তখন তাকে বলা হবে, তুমি কি একটা সুন্নাত ত্যাগ করলে?” সাহাবীগন (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, ”কখন এমনটা হবে??” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন (হকপন্থি) আলিমদের মৃত্যু হয়ে যাবে, ক্বারিদের (reciters) সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, দীন এর বুঝ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা হবে খুবই অল্প, নেতা/মাতবরদের সংখ্যা বাড়বে, বিশ্বস্ত মানুষ হবে খুবই কম, দীন এর কাজের মধ্যে মানুষ দুনিয়ার লাভ খুঁজবে এবং দীনী ইলম বাদ দিয়ে বাকি অন্যান্য জ্ঞান অন্বেষণ করা হবে। (সুত্রঃ- সুনান আদ-দারেমিঃ ১/৬৪,দুটি ভিন্ন সনদে, প্রথমটি সাহিহ এবং দ্বিতীয়টি হাসান, শায়খ আলবানী, হাকিমঃ ৪/৫১৪)। আল্লাহ আমাদের সকলকে পরিপূর্ণ বিদাত মুক্ত হয়ে সহি সুন্নাহ মোতাবেক কবুলযোগ্য আমল করার তৌফিক দান করুক। আমিন

❖ জাহান্নামের দরজার সংখ্যা কয়টি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ ৭ টি। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে, জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি যা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে’ [সূরা হিজির: ৪৩-৪৪]

❖ জাহান্নামীদের মধ্যে কাফিরদের শরীরের চামড়া কত হাত মোটা হবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ ৪২ হাত। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে কাফিরের শরীরের চামড়া হবে বিয়াল্লিশ হাত মোটা, দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান এবং জাহান্নামে তার বসার স্থান হবে মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী ব্যবধান পরিমাণ। [তিরমিযী- হা/২৫৭৭, মিশকাত- হা/৫৪৩১]

মানুষের আত্মা যখন কবজ করার সময় হয়, তখন আল্লাহর নির্দেশে আকাশ থেকে মালাকুল মউত বা মৃত্যুর ফেরেশতারা সেই ব্যক্তির নিকটে আসে। নেককার লোকদের জন্যে রহমতের ফেরেশতা আসে, আর পাপাচারী ব্যক্তির জন্যে আজাবের ফেরেশতারা আসেন। আজাবের ফেরেশতাদের ভয়ংকর চেহারা ও রূপ দেখেই কাফের, মুশরেক ও পাপাচারী মুসলমানদের আত্মাটা ভয়ে শরীরের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগে পালানোর চেষ্টা করে। এমনকি পাপাচারী ব্যক্তির আত্মাটা তার নখের নীচে, পশমের নিচে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে। মালাকুল মউত পলায়নপর এই আত্মাকে পিটিয়ে পিটিয়ে টেনে বের করে আনার চেষ্টা করেন। বের করার সময় আত্মাটার এমন কষ্ট হয়, যেনো একটা চটের বস্তার মধ্যে দিয়ে একটা লোহার আংটা ঢুকিয়ে দিয়ে টেনে বের করার সময় যেভাবে ছিড়েফুড়ে বের হয়ে আসে, ঐ আত্মাটাও সেইভাবে ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে বের হয়ে আসে। আর এইজন্যই ‘সাখারাতুল মউতের’ সময় পাপী লোকদের এতো কষ্ট হয়। অপরদিকে নেককার বান্দাদের আত্মা মালাকুল মউতের আহবানে সাড়া দিয়ে এতো সহজে বের হয়ে আসে, যেইভাবে একটা পানির পাত্রকে কাত করলে একদম সহজেই পানি বের হয়ে আসে। আর শহীদদের মৃত্যু কষ্ট হয় সবচেয়ে কম। একটা পিপিলীকা কামড় দিলে যতটুকু কষ্ট হয়ে, ঠিক তেমনি কষ্ট হয় যখন একজন শহীদের শরীর থেকে তার আত্মাটা বের হয়ে যায়। মানুষের আত্মা কবজ করা শুরু হয় একেবারে তার পায়ের নখ থেকে। এইভাবে মৃত্যুর ফেরেশতারা আত্মাটাকে সমস্ত শরীর থেকে বের করে এনে গলার গরগরা পর্যন্ত নিয়ে আসেন। গলার গরগরা পর্যন্ত নিয়ে আসলে তখন ঐ ব্যক্তি একটা শব্দ করে বা কাপুনি দেয়, আর এরপরেই তার দুনিয়ার হায়াত শেষ হয়ে যায়। এরপরে তার বারযাখী বা পর্দার জীবন শুরু হয়। সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী। আমি কাবার প্রভু মহান আরশের মালিকের কাছে এই দুয়া করছিঃ হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে, আমাদের পরিবারের সকলকে আপনার প্রশস্ত রহমত ও খাস ভালোবাসা অর্জন করার তোওফিক দান করুন, আমিন।

❖ সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘুমিয়ে ফযরের নামায কাযা করে ফেললে, শয়তান তার সাথে কি করে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ শয়তান তার কানে পেশাব করে দেয়। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, রাসুল (সাঃ) বলেন, “কেউ সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে ফযরের নামায কাযা করে ফেললে, শয়তান তার কানে পেশাব করে দেয়।” (বুখারীঃ ৫৪/৪৯২)

❖ চন্দ্র এবং সূর্যকে ক্বিয়ামতের দিন কোঁথায় নিক্ষেপ করা হবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন চন্দ্র এবং সূর্য-এর ইবাদতকারীদের ভর্ৎসনা করার জন্য এতদ্ব উভয়কে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। হাদীছে এসেছে, হাসান বাছরী (রহ.) বলেন, আবু হুরায়রাহ (রা.) আমাদেরকে রাসূল (ছা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে দুটি পনিরের আকৃতি বানিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন হাসান বাছরী জিজ্ঞেস করলেন, তাদের অপরাধ কি? জবাবে আবু হুরায়রাহ বললেন, আমি রাসূল (ছা.) হতে এ ব্যাপারে যাকিছু শুনেছি, তাই বর্ণনা করলাম, এই কথা শুনে হাসান বাছরী নীরব হয়ে গেলেন। [সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ, ১/৩২, হা/১২৪, মিশকাত, হা/৫৪৪৮, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৬৯।]

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট