জান্নাতের নারীরা কেমন হবে


 জান্নাতের নারীরা কেমন হবেঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া এবং তাতে যা কিছু আছে তার সবকিছু থেকেও উত্তম। যদি জান্নাতের কোন নারী দুনিয়ার দিকে তাকাত, তাহলে (তাদের সৌন্দর্যে) আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানগুলো আলোকিত হয়ে পড়ত এবং সুগন্ধে ভরে যেত। আর তার মাথার ওড়নাটি দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তা থেকেও উত্তম। (বুখারীঃ ৬৫৬৮)

তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন, জান্নাতের নারীরা শুধুমাত্র একবার দুনিয়ার দিকে উঁকি দিলেই যদি সাড়া দুনিয়া আলোকিত হয়ে যায়, সাড়া দুনিয়ায় সুগন্ধে ভরে যায়, তবে জান্নাতের সেই নারীরা কি পরিমাণ সুন্দর হতে পারে...! আর তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে, এত সুন্দর করে যে প্রভু এই নারীদের সৃষ্টি করলেন, সেই মহান স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাহলে কত সুন্দর হতে পারেন...। জান্নাতীদের সব থেকে বড় নিয়ামত হবে আল্লাহ তায়ালার দর্শনঃ মহান আল্লাহ তায়ালা জান্নাতবাসীদের জিজ্ঞাসা করবেনঃ হে জান্নাত বাসীগণ! তোমরা কি তোমাদের আমলের প্রতিদান পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা জবাব দিবে হে আমাদের প্রভু, আপনি আমাদেরকে এমন সব নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি। তখন আমরা সন্তুষ্ট হবো না কেনো...! তখন আল্লাহ বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও অধিক উত্তম ও উন্নত জিনিস দান করবো না? তারা বলবে এর চেয়ে অধিক ও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন আমি চিরকাল তোমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো। কোনদিন আর অসন্তুষ্ট হবো না। এরপর আল্লাহ নিজের নূরের পর্দা খুলে ফেলবেন। আল্লাহর অতিশয় সুন্দর সত্তার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে জান্নাত বাসীগণ জান্নাতের সকল নিয়ামতের কথা ভুলে যাবে, এক নজরে তারা শুধু মহান আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবে......। এভাবে হাজার হাজার বছর কেটে যাবে......। সুবহানাল্লাহ...। (বুখারিঃ ৬৫৪৯) তাহলে এবার একটু চিন্তা করে দেখুন সেই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রব্বুল আলামিন কত সুন্দর...! সুবহানাল্লাহ...। আল্লাহ যেন আমাদেরকে জান্নাতে তার মহান দিদার নছিব করেন। আমিন। সুম্মা আমিন।

নরম বিছানা ত্যাগ করে, আরামের ঘুম বাদ দিয়ে ফযর সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়া একটু কষ্টকর কাজ, এ কারণে অনেকে চার ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত পড়লেও ফযরের সালাতের ব্যপারে উদাসীন থাকে। তার উপর শীতকালে ফযরের সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করাতো আরো কষ্টকর। কিন্তু এই কষ্টকর কাজের আড়ালে কত বড় ফযীলত লুকিয়ে রয়েছে, আর তা না করলে কি ক্ষতি বা শাস্তি রয়েছে, আমরা সবাই কি তা জানি বা উপলব্ধি করি? এ সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করা হলো। আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সবাইকে নেক আমল করার তোওফিক দিন, আমিন। (১) ফযর ও আসরের সালাত সঠিক সময়ে আদায় করাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘‘যে ব্যক্তি দুইটি ঠান্ডা সময়ের (অর্থাৎ, ফযর ও আসর) সালাতের হেফাজত করবে, সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সহীহ বুখারীঃ ৫৭৪, সহীহ মুসলিমঃ ১৪৭০। এই দুইটি সময়ে ব্যস্ততা বা ঘুমের কারণে অনেকেই উদাসীন হয়ে সালাত কাযা করে ফেলে। একারণে এই দুইটি সালাত হেফাজত করার বিশেষ ফযীলত হিসেবে সে জান্নাতে যাবে। (২) ইশা ও ফযরের সালাত জামাতের সহিত আদায় করাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইশা সালাতের জামাতে হাযির হবে, তার জন্য অর্ধেক রাত পর্যন্ত কিয়াম (নফল সালাত আদায়) করার সমান নেকী হবে। আর যে ব্যক্তি ইশা সহ ফজর সালাত জামাতের সহিত আদায় করবে, তার জন্য সারারাত ধরে কিয়াম করার সমান নেকী হবে।” সহীহ মুসলিমঃ ৬৫৬, তিরমিযীঃ ২২১, আবু দাউদঃ ৫৫৫, আহমাদ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিকদের নিকট সর্বাধিক কঠিন ও ভারী সালাত হচ্ছে ইশা ও ফজরের সালাত। এই দুই সালাত আদায়ের মধ্যে কি পরিমান কল্যাণ ও সওয়াব রয়েছে, যদি তারা সে সম্পর্কে জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা এই দুই সালাতের (জামাতে) অংশগ্রহণ করত।” সহীহ বুখারীঃ ৬৫৭, সহীহ মুসলিমঃ ৬৫১। (৩) ফযরের সালাত আদায় করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়ঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফযরের সালাত আদায় করলো, সে আল্লাহর জিম্মায় বা দায়িত্বে চলে গেলো।” সহীহ মুসলিমঃ ১৫২৫, তিরমিযীঃ ২২২, ইবনু মাজাহঃ ৩৯৪৫। (৪) কষ্টের সময় সুন্দরভাবে ওযু করার ফযীলতঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “গুনাহর কাফফারার জন্য আমল হচ্ছেঃ (ক) (জামআ’তে) সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা, (খ) জামআ’তের জন্য পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যাওয়া, (গ) কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে ওযু করা। যে ব্যক্তি এই আমলগুলো করবে, তার জীবন হবে কল্যাণময়, আর মৃত্যুও হবে কল্যাণময়। আর (এই আমলগুলোর বিনিময়ে সে তার গুনাহ থেকে এমনভাবে পবিত্র হবে) যেই দিন তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন, গুনাহর ক্ষেত্রে তার অবস্থাও হবে ঠিক সেই দিনের মত (নিষ্পাপ)।” জামি তিরমিযীঃ ৪/১৭৩-১৭৪; হাদীস নং-৩২৩৪। ইমাম তিরমিযী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটিকে ‘হাসান গরীব’ বলেছেন। মুহা’ম্মদ নাসিরউদ্দীন আলবানী (রহিঃ) হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন। (৫) ফযর সালাত কাযা করলে সেই দিনে বরকত কমে যাবে, একারণে মনে বিষণ্ণতা ও অনুতাপ সৃষ্টি হবেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ ঘুমাতে যায়, শয়তান তখন তার মাথায় তিনটা গিঁট লাগিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিঁট লাগানোর সময় সে বলে, “এখনো অনেক রাত্র বাকী আছে” অথাৎ তুমি শুয়ে থাক। যখন সে জেগে উঠে, সে যদি আল্লাহর যিকর করে (অর্থাৎ আল্লাহকে স্মরণ করে), তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। অতঃপর সে যদি ওযু করে, তাহলে আরো একটি গিঁট খুলে যায়। আর সে যদি সালাত আদায় করে, তাহলে সবগুলো গিঁট খুলে যায় এবং তার সকালটা হয় আনন্দ ও উদ্দীপনার সহিত। আর সে যদি (ঘুম থেকে না উঠে, আল্লাহকে স্মরণ না করে, ওযু না করে এবং ফযরের নামায না পড়ে), তাহলে তার সকালটা হয় ক্লান্ত ও বিষাদময়।” সহীহ বুখারীঃ ১১৪২, সহীহ মুসলিমঃ ৭৭৬, নাসায়ীঃ ১৬১০। (৬) ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমিয়ে থেকে ফরয সালাত কাযা করলে তার শাস্তির বিবরণঃ একবার এক স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে কয়েকটি পাপের শাস্তি দেখানো হয়। উল্লেখ্য, নবী-রাসুলদের সব স্বপ্ন ওয়াহী, অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য স্বপ্ন। একদিন সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আজ রাতে আমার কাছে দুইজন আগন্তুক এসেছিল। তারা আমাকে বললো, আমাদের সাথে চলুন। আমি তাদের সাথে গেলাম। আমরা এমন এক লোকের কাছে পৌঁছলাম, যে চিত হয়ে শুয়ে ছিলো। অপর এক ব্যক্তি পাথর নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে শুয়ে থাকা ব্যক্তির মাথায় আঘাত করছে এবং থেঁতলে দিচ্ছে। যখন সে পাথর নিক্ষেপ করছে তা গড়িয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। লোকটি গিয়ে পাথরটি পুনরায় তুলে নিচ্ছে। এবং তা নিয়ে ফিরে আসার সাথে সাথেই লোকটির মাথা পুনরায় পূর্বের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। সে আবার লোকটির কাছে ফিরে আসছে এবং তাকে পূর্বের মতো শাস্তি দিচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার সংগী দুইজনকে জিজ্ঞাস করলামঃ সুবহা’ন-আল্লাহ! এরা কারা? তারা পরবর্তীতে উত্তর দেন, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যারা কুরআন মুখস্থ করে তা পরিত্যাগ করে এবং ফরয নামায না পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে।” সহীহ বুখারী, রিয়াদুস সালেহীনঃ ১৫৪৬।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট