সূরা কুরাইশ নিয়ে কিছু কথা

 সূরা কুরাইশ নিয়ে কিছু কথা


- নোমান আলী খান সবাইকে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সুরাতুল কুরাইশ নিয়ে কিছু কথা। সূরা ফিলের পরপরই এই সূরা শুরু হয়। সুরাটি সহজে দুভাবে বিভক্ত করা যায়। খুবই ছোট সূরা এটি। কিন্তু আপনি একে দুভাগে দেখতে পারেন। প্রথম ভাগে আছেঃ আল্লাহ তৎকালীন কুরাইশদের জন্য কি কি করেছিলেন। তিনি কুরাইশদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কিছু নির্দিষ্ট জিনিস করেছেন। আর তিনি কী করেছেন? তিনি তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যে তারা শীত বা গ্রীষ্মে সবচাইতে সুবিধাজনক সময়ে সফর করতে পারে, অন্যান্য গোত্রের কাছ থেকে কোনরকম ছিনতাই বা ডাকাতির ভয় ছাড়াই। অথচ সে গোত্রগুলো পরিচিতই ছিল ছিনতাই আর ডাকাতির জন্য। কেন? কারণ তারা এই ঘরের জিম্মাদার। তাই আল্লাহ জিজ্ঞেস করছেন, আমি তোমাদের এতো সুযোগ সুবিধা কেন দিলাম? কেন আমি তোমাদেরকে হাতি বাহিনী থেকে রক্ষা করলাম? আগের সূরাতে আছে। কোন কারণে? এর বদলে তোমাদের কি দেয়া উচিত? فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ তাদের উচিত এই ঘরের রবের ইবাদত করা। তাদের উচিত এই ঘরের রবের ইবাদতে মগ্ন হয়ে যাওয়া। “তাদের আল্লাহ্‌র ইবাদত করা উচিত” – বলার বদলে তিনি বললেন, “তাদের উচিত রাব্বা হাযাল বাইতের ইবাদত করা”। (এই ঘরের রবের) এটা কেন? তিনি এই কথাটি বললেন কারণ, সেই ঘরটি ইবরাহিম আলাইহিস সালাম একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নির্মান করেছিলেন। শুধু আল্লাহ্‌র ইবাদত করার জন্য। দেখো তোমরা কি অবস্থা করেছো এই ঘরের! এই ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাওয়ার দরুন সুযোগসুবিধাগুলো পাবার পরও কীভাবে এর পবিত্রতা তোমরা নষ্ট করতে পারলে? কীভাবে তোমরা এটা করতে পারলে? আর এই প্রশ্নটিই তাদের করা হচ্ছে এখানে। এরই মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন এটা মূলত পূর্ববর্তী সূরারই সম্পূরণ। আগের সূরার সাথে সরাসরি সংযুক্ত। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দুয়া এখানে কবুল হয়েছে। দুয়ার প্রথম অংশ ছিলঃ তাদেরকে নিরাপত্তা দাও। رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا بَلَدًا ءَامِنًا দুয়াটির দ্বিতীয় অংশ ছিলঃ وَارْزُقْ أَهْلَهُۥ مِنَ الثَّمَرٰتِ তাদেরকে সর্বপ্রকার রিযিক দিন। সর্বপ্রকার ফল। তো সুরাতুল ফীল হলো কীভাবে আল্লাহ এটাকে নিরাপদ করলেন। আর সুরাতুল কুরাইশ হলো কীভাবে একে সমৃদ্ধ করলেন, কীভাবে তাদের সবরকম ফল দিলেন, সফর করতে পারছে তারা! এজন্যই বলার হয় শান্তি ও সমৃদ্ধি। দুটোই একসাথে চলে। শান্তি সুরাতুল ফীলে। আর সমৃদ্ধি সুরাতুল কুরাইশে! দেখুন, সমাজে যদি শান্তি থাকে কিন্তু সমৃদ্ধি না থাকে তবে বাঁচা সম্ভব না। আপনার বাসা নিরাপদ তো কি হয়েছে? চাকরি না পেলে ক্ষুধায় মরবেন। আর যদি সমৃদ্ধি থাকে কিন্তু নিরাপত্তা না থাকে তবে? আপনার ঘর নিরাপদ না, ব্যাংক নিরাপদ না, আপনার গাড়ি নিরাপদ না। আপনি বাঁচতে পারবেন না! বাঁচার জন্য আপনার দুটো জিনিসই লাগবে। আর আল্লাহ দুটো জিনিসই কুরাইশদের দিয়েছিলেন। যেন তারা বেঁচে থাকে এবং উন্নতি লাভ করে একটি সমাজ হিসেবে। যেন তাঁর সমৃদ্ধি লাভ করে একটি সমাজ হিসেবে। তার বদলে শুধু একটি জিনিস চেয়েছেন তিনি । ""এই ঘরের রবের ইবাদত করো। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ঐতিহ্যে ফিরে যাও।"" আর পরবর্তি সূরাতে আমরা দেখবো কীভাবে তারা এই ঐতিহ্যে প্রত্যপর্ণ করতে ব্যর্থ হলো। বারাকাল্লাহুলি ওয়ালাকুম। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি তা’আলা ওয়া বারাকাতুহু।

***************************************************************************************************
ইসলামে অনেক সুন্দর সুন্দর ঘটনা .....................
একদিন রাতের বেলা দয়াল নবীজি (সঃ) আরবের গলি দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এক ঘর থেকে অসহায় এক কান্নার আওয়াজ শুনে নবীজি সেই ঘরে গিয়ে দেখলেন, একজন হাতে চক্কি ( হাত দিয়ে আটা তৈরির এক যন্ত্র) ঘুরাচ্ছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি হল তোমার। কান্না করছো কেন.? প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, আমি মক্কার সর্দার উমাইয়ার ক্রয় করা গোলাম (ইসলামের প্রাথমিক সময়) । অনেক যন্ত্রণায় আছি আমি। সারাটিদিন মাঠে তার ছাগল দুম্বা চড়াই, আর রাতে সে আমাকে দিয়ে গম থেকে আটা তৈরি করায়। ভালো করে খেতে ও দেয়না, ঘুমাইতে ও দেয় না। শরীরে খুবই অসুস্থতা বোধ হচ্ছে। এই কথা শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম, সেই ব্যক্তিকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি কিছুক্ষণ আরাম কর। আমি ই তোমার কাজ করে দিচ্ছি, এই বলে নবীজি হাতে চক্কি নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন। আর বড় ক্লান্ত শরীর নিয়ে সেই গোলামকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিলেন। এইভাবে প্রতি গভীর রাতে নবীজি তার ঘরে গিয়ে তাকে সাহায্য করতেন। এবং নিজে কাজ করে তাকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিতেন। একদিন সেই গোলাম বলে, সাবধানে থাকিয়েন, এইখানে নাকি এক মোহাম্মদ আছে। তার থেকে দুরে থাকবেন, সে নাকি অনেক বড় যাদুকর। তার কাছে যে একবার যায় সে নাকি ফেরত আসতে পারেনা। ওর ধর্ম গ্রহণ করে নেয়। এমন কথা শুনে দয়াল নবীজি মুচকি হাসলেন.. গোলাম বলে, আপনি হাসছেন কেন.? নবীজি বলেন, তুমি যে মোহাম্মদ এর কথা বলছো, আমি ই হলাম সেই মোহাম্মদ। এই কথা শুনে, নবীজির সুন্দর চারিত্রিক বাস্তব প্রমাণ দেখে ওই গোলাম অঝোর নয়নে কান্না করতে লাগলেন। সাথে সাথে নবীজির কাছে কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে যান।🥰 (সিরাতে নববী-৬৮৩) সত্যিই ইসলামে এমন অনেক সুন্দর সুন্দর ঘটনা আছে যা শুনলে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে সঠিক আমল করার তৌফিক দান করেন আমিন🥰🌹💕

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট