আল্লাহর সাথে সময় কাটানো

 


আমরা কুরআন এবং হাদিস থেকে শিখেছি যে প্রচুর মানুষ জাহান্নামে যাবে, অগণিত অসংখ্য মানুষ। জাহান্নামে বেশি মানুষ থাকবে জান্নাতের চেয়েও। বস্তুত, অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে। কুরআন এবং সুন্নায় এটা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা সাবার ২০ নাম্বার আয়াতে এসেছে- وَ لَقَدۡ صَدَّقَ عَلَیۡهِمۡ اِبۡلِیۡسُ ظَنَّهٗ فَاتَّبَعُوۡهُ اِلَّا فَرِیۡقًا مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ-”তাদের ব্যাপারে ইবলীস তার ধারণা সত্য প্রমাণিত করল (যে ধারণা ইবলীস আল্লাহর নিকট ব্যক্ত করেছিল যে, অল্প সংখ্যক ব্যতীত সে মানুষদেরকে নিজের বশীভূত করে ছাড়বে)। ফলে মু’মিনদের একটি দল ছাড়া তারা সবাই তার অনুসরণ করল।”

আল্লাহ এখানে বলছেন মানব জাতি সম্পর্কে ইবলিশের অনুমান সত্য প্রমাণিত হলো। মানব জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইবলিশকে অনুসরণ করল। শুধু ছোট একদল ঈমানদার ছাড়া। ইবলিশের অনুসরণটাই মানব জাতির ডিফল্ট অবস্থা। মানব জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই জীবনের চেয়েও বড় একটি লক্ষ্যে কাজ করতে আগ্রহী নয়। বেশির ভাগ মানুষ পশুসুলভ জীবন যাপন করতে পেরেই সন্তুষ্ট। যখন একজন মানুষ পশুর মত জীবন যাপন করে, তখন সে মানুষ একটি পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ, পশুর তো একটি অজুহাত আছে যে সে একটি পশু। কিন্তু, পশুর মত জীবন যাপন করায় মানুষের কী অজুহাত আছে? ঠিক এ জন্যই জাহান্নামের শাস্তি এতোটা ভয়াবহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করছেন বিভিন্ন রকম কার্যক্ষমতা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং ফিতরাহ বা সহজাত প্রকৃতি দিয়ে। এ সমস্ত কিছু মানুষকে সহজ একটি প্রশ্নের দিকে ধাবিত করার কথা। কেন আমি এখানে? কোন কারণে আমার এ অস্তিত্ব? জীবনের লক্ষ্য কী? এ প্রশ্নটি সকল মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখার কথা। কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন? আমার মৃত্যুর পর কী হবে? একজন মানুষ যদি এ প্রশ্নটি নিয়ে কোনো পরোয়া না করে, একজন ব্যক্তি যদি এই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী আনন্দ ফুর্তির মাঝে নিজেকে নিমজ্জিত করে রাখে এবং এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে পালিয়ে বেড়ায়- তখন এ ব্যক্তি সবচেয়ে দাম্ভিক উপায়ে আচরণ করলো। সমগ্র জীবনে একটি বারের জন্যেও চিন্তা করেনি- এখানে আমি কী করছি? মৃত্যুর পরে আমার কী হবে? আমরা বিশ্বাস করি, এ প্রশ্নের উত্তর একেবারেই সুস্পষ্ট। একবার যখন আপনি অন্তরচক্ষু খুলে চারদিকে তাকিয়ে দেখবেন তখন বুঝতে পারবেন- অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি অবশ্যই আমাদের প্রতি নবী-রাসূল প্রেরণ করে থাকবেন। এখন তাহলে দেখি কারা কারা নবুয়ত দাবি করেছেন। দেখি তারা কোন কোন বিষয়ের প্রতি আহ্বান করেছেন। এভাবে আপনি যখন আব্রাহামিক ধর্মগুলো সম্পর্কে জানবেন, সত্য খোঁজার এই অভিযানে সবগুলোই আপনার কাছে কিছুটা যৌক্তিক মনে হবে। আপনি আরও জানবেন এ সবগুলো ধর্ম একটার পরে একটা এসেছে। এভাবে শেষে এসে আপনি আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (স) এর বার্তা সম্পর্কে অবগত হবেন। তাহলে, আমরা উপরে উল্লেখিত আয়াত থেকে শিখছি ইবলিশ মানব জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের উপর বিজয়ী হবে। শুধু ছোট একদল বিশ্বাসী ছাড়া। সূরা সোয়াদেও এসেছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইবলিশকে বললেন- لَاَمۡلَـَٔنَّ جَهَنَّمَ مِنۡکَ وَ مِمَّنۡ تَبِعَکَ مِنۡهُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ - "আমি তোমাকে আর তাদের (অর্থাৎ মানুষদের) মধ্যে যারা তোমাকে অনুসরণ করবে তাদের সবাইকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।" (৩৮:৮৫) আমরা কুরআন থেকে আরও জানি- وَ مَاۤ اَکۡثَرُ النَّاسِ وَ لَوۡ حَرَصۡتَ بِمُؤۡمِنِیۡنَ - " (হে আল্লাহর রাসূল!) তুমি যত প্রবল আগ্রহ ভরেই চাও না কেন, মানুষদের অধিকাংশই ঈমান আনবে না।" আমরা আমাদের রাসূল (স) এর হাদিস থেকে জানি, কিয়ামতের দিন অন্য নবীদের দেখা যাবে কারো কারো অনুসারীর সংখ্যা একেবারেই কম হবে। কারো কারো মাত্র দুই তিন জন অনুসারী থাকবে। কারো কারো এমনকি শুধু একজন অনুসারী থাকবে। কারো কারো কোনো অনুসারীই থাকবে না। কল্পনা করুন ঐ সমস্ত নবীদের কথা, তাদের সমগ্র জাতি তাদের প্রত্যখ্যান করলো। কুরআনে আরও এসেছে, জাহান্নামে একটার পর একটা দলের আগমন দেখে জাহান্নামের ফেরেশতারা অবাক হয়ে যাবে। কী!! আরও আসছে!! আরও আসছে!! প্রতিবার যখনি এক দলের আগমন ঘটবে ফেরেশতারা তাদের জিজ্ঞেস করবে- কিভাবে তোমাদের পরিণতি এখানে হলো? কোনো সতর্ককারী কি তোমাদের কাছে আসেনি? কোনো রাসূল কি তোমাদের মাঝে আসেনি? তারা জবাবে বলবে- হ্যাঁ, রাসূল এসেছিল। কিন্তু, আমরা সেই রাসূলকে অস্বীকার করেছিলাম এবং আমরা বলেছিলাম আল্লাহ আমাদের প্রতি কোনো কিতাব অবতীর্ণ করেননি। - ড. ইয়াসির কাদি
আমাদের জন্য ইবাদাত করা কঠিন আর মানুষের সাথে সময় কাটানো সহজ। ইফতারের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া সহজ কিন্তু নামাজ পড়া কঠিন। মানুষের সাথে আড্ডা দেওয়া বা ঘুরতে যাওয়া সহজ। কিন্তু আল্লাহর সাথে সময় কাটানো কঠিন। পক্ষান্তরে, রাসূলুল্লাহ (স) এর ক্ষেত্রে...তাঁর জন্য মানুষের সাথে সময় কাটানো ছিল কঠিন। আর আল্লাহর সাথে সময় কাটানো তাঁর জন্য ছিল সহজতর। রাসূলুল্লাহ (স) যখনই কোন চাপে ভুগতেন, এই দুনিয়ার কোনো ঘটনা যদি তাকে যন্ত্রনা দিতো তিনি বিলাল (রা) কে বলতেন- ''হে বেলাল! আমাদের জন্য নামাজের প্রশান্তি নিয়ে আসো।" অর্থাৎ ইকামাত দাও বিলাল। কারণ নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে আল্লাহর রাসূল (স) আনন্দিত হয়ে যেতেন। যদি আমরা রাসূলুল্লাহ (স) এর স্পিরিটের কাছাকাছি যেতে চাই, আমরা যদি উচ্চ মর্যাদা পেতে চাই তাহলে শিখতে হবে কিভাবে আল্লাহর সাথে আরও বেশি সময় কাটানো যায়। আমরা কখনোই রাসূলুল্লাহ (স) এর মত হতে পারবো না। কিন্তু, আল্লাহর সাথে সময় কাটানোর আনন্দ উপভোগ করা আমাদের শিখতে হবে। আল্লাহর বাণীতে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়ার আনন্দ উপভোগ শিখতে হবে। আপনার জীবনে এমনটি যখন ঘটা শুরু করবে আপনি তখনো মানুষের সাথে সময় কাটাবেন, দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো করবেন কিন্তু আল্লাহর সাথে কথা বলার সময় এমন বিস্ময়কর আনন্দ পাবেন যা অন্য কোথাও পাবেন না। দিনের সমস্যাগুলো মাকাবেলার অফুরন্ত শক্তি পাবেন কারণ আপনার রাত কেটেছিল জায়নামাজে। কেউ যখন আপনার সাথে ছিল না আপনি তখন আল্লাহর নৈকট্য অনুসন্ধানে রত ছিলেন। কোনো মানুষকে দেখানোর জন্য না, কারণ কেউ তো আপনার সাথে ছিল না। ছিলেন শুধু আপনি এবং আল্লাহ। এটা যদি আপনার জীবনে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে কোনো সমস্যাতেই বা কোনো বিপদেই আপনার অন্তর আর সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে না। সবকিছুতে ধৈর্য ধরা সহজ হয়ে যাবে। - নোমান আলী খান ও ইয়াসির কাদির আলোচনা থেকে

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট