পবিত্র কুরআনে ১১ টা জিনিষের শপথ

 


❖ পবিত্র কুরআনে ১১ টা জিনিষের শপথ করে আল্লাহ বলেছেন, "অবশ্যই সে সফলকাম হয়ে গেল"। তিনি কার ব্যাপারে এই সফলতার কথা বলেছেন? গতকালকের এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ যে নিজেকে পাপ থেকে পরিশুদ্ধ করেছে, যে নিজের নফস ও প্রবৃত্তিকে দুষ্কৃতি থেকে পবিত্র করে, যে সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে এবং যে নফসের চাহিদা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষের মধ্যে গোনাহ ও ইবাদতের যোগ্যতা গচ্ছিত রেখেছেন, কিন্তু তাকে কোন একটি করতে বাধ্য করেননি; বরং তাকে উভয়ের মধ্য থেকে যে কোন একটি করার ক্ষমতা দান করেছেন । হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো‘আ করতেন

اللّٰهُمَّ آتِ نَفْسِيْ تَقْوَ اهَا وَزَ كِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْ لَاهَا অর্থাৎ “হে আল্লাহ্ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক।” [মুসলিম: ২৭২২] তাকওয়া যেভাবে ইল্হাম হয়, তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা কোন কোন মানুষের পাপের কারণে তাদের অন্তরে পাপেরও ইল্হাম করেন। [উসাইমীন: তাফসীর জুয আম্মা] যদি আল্লাহ্ কারও প্রতি সদয় হন তবে তাকে ভাল কাজের প্রতি ইলহাম করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজ করতে সমর্থ হয় সে যেন আল্লাহ্র শোকরিয়া আদায় করে। আর যদি সে খারাপ কাজ করে তবে তাওবা করে আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসা উচিত। আল্লাহ্ কেন তাকে দিয়ে এটা করালেন, বা এ গোনাহ তার দ্বারা কেন হতে দিলেন, এ ধরনের যুক্তি দাঁড় করানোর মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহ্র রহমত থেকে দূরে সরিয়েই রাখা যায়, কোন সমাধানে পৌঁছা যাবে না। কারণ; রহমতের তিনিই মালিক; তিনি যদি তার রহমত কারও প্রতি উজাড় করে দেন তবে সেটা তার মালিকানা থেকে তিনি খরচ করলেন পক্ষান্তরে যদি তিনি তার রহমত কাউকে না দেন তবে কারও এ ব্যাপারে কোন আপত্তি তোলার অধিকার নেই। যদি আপত্তি না তোলে তাওবাহ করে নিজের কোন ক্রটির প্রতি দিক নির্দেশ করে আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসে তবে হয়ত আল্লাহ্ তাকে পরবর্তীতে সঠিক পথের দিশা দিবেন এবং তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে দিবেন এবং তাকওয়ার অধিকারী করবেন। ঐ ব্যক্তির ধ্বংস অনিবার্য যে আল্লাহ্র কর্মকাণ্ডে আপত্তি তোলতে তোলতে নিজের সময় নষ্ট করার পাশাপাশি তাকদির নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ভাল আমল পরিত্যাগ করে তাকদীরের দোষ দিয়ে বসে থাকে। হ্যাঁ, যদি কোন বিপদাপদ এসে যায় তখন শুধুমাত্র আল্লাহ্র তাকদীরে সন্তুষ্টি প্রকাশের খাতিরে তাকদীরের কথা বলে শোকরিয়া আদায় করতে হবে। পক্ষান্তরে গোনাহের সময় কোনভাবেই তাকদীরের দোহাই দেয়া যাবে না। বরং নিজের দোষ স্বীকার করে আল্লাহ্র কাছে তাওবাহ করে ভবিষ্যতের জন্য তাওফীক কামনা করতে হবে

❖ রাসুল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যাপারে কোন কথাটি সঠিক? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি হবেঃ রাসুল (সাঃ) আমাদের মতই একজন মানুষ ছিলেন, আমারা সাধারণ মানুষ, আর তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুল, রাসুল (সাঃ) নূরের তৈরি নয়, তিনি মাটির তৈরি এবং রাসুল (সাঃ) অবশ্যই মৃত্যুবরণ করেছেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর সর্বশেষ নবী হওয়ার সাথে সাথে তিনিও একজন মানুষ ছিলেন। আল্লাহ বলেনঃ “ক্বুল ইন্নামা আনা বাশারুকুম মিসলুকুম” (হে নবী) আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। (সুরা কাহাফঃ ১০৯) সুতরাং, কুরআন দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন এবং তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন। আল্লাহ বলেনঃ “ইন্নাকা মায়্যিতুন ওয়া ইন্নাহুম-মায়্যিতুন” (হে নবী) আপনিও মৃত্যু বরণ করবেন আর তারাও মৃত্যু বরণ করবেন। (সুরা আল-যুমারঃ ৩০) এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও একদিন মৃত্যুবরণ করবেন। সুতরাং যার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জীবিত মনে করে তাদের আকীদা বা বিশ্বাস হলো ইসলাম বিরোধী, কুরআন বিরোধী। এছাড়া, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরে সাহাবীরা আশ্চর্য হয়ে পড়েন একজন নবী কি করে মারা যেতে পারেন? উমার (রাঃ) খোলা তলোয়ার নিয়ে ঘোষণা করেন, যেই ব্যক্তি বলবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তার ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবো। তখন এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি, আবু বকর (রাঃ) এই ভুল ধারণা দূর করে দেন সমস্ত সাহাবীদের অন্তর থেকে এই বলে, যেই ব্যক্তি মুহাম্মাদের পূজা করতো সে জানুক মুহাম্মাদ মারা গেছেন। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর উপাসনা করে সে জানুক আল্লাহ চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তখন তিনি দলীল হিসেবে কুরআনের এই আয়াত পেশ করেনঃ “মুহাম্মাদ, তিনিতো আল্লাহর রাসুল ছাড়া আর কিছু নন, তার পূর্বে অনেক রাসুল মৃত্যু বরণ করেছেন। এখন তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন বা নিহত হন তোমরা কি তোমাদের পূর্ব অবস্থায় (কুফুরীতে) ফিরে যাবে? প্রকৃতপক্ষে যেই ব্যক্তি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদেরকে প্রতিদান দিবেন”। (সুরা ইমরানঃ ১৪৪) সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, রাসুল (সাঃ) অবশ্যই মৃত, জীবিত নয়। আর হায়াতুন-নবী – এর অর্থ হলো নবী জীবিত। অথচ এই কথা না কুরআনে আছে আর না কোনো সহীহ হাদীসে আছে। বরং উপরের আলোচনা থেকে এই কথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হায়াতুন্নবী বলা কুরআন বিরোধী আকীদা। (নাউজুবিল্লাহ)। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী। নূরের তৈরি হচ্ছেন ফিরিশতামণ্ডলী। মহানবী (সঃ) আদমের অন্যতম সন্তান। সুতরাং তারও আদিসৃষ্টি মাটি থেকেই। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল! আপনি আপনার উম্মাতদেরকে) বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন মানূষ। আমার প্রতি অহী নাযেল হয় যে, নিশ্চয় তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য। (আল-কাহফ: ১১০) উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৈহিক চাহিদার দিক দিয়ে আমাদের মতই মানুষ ছিলেন। তিনি খাওয়া-দাওয়া, পিশাব-পায়খানা, বাজার-সদাই, বিবাহ-শাদী, ঘর-সংসার সবই আমাদের মতই করতেন। পার্থক্য শুধু এখানেই যে, তিনি আল্লাহর প্রেরীত রাসূল ও নবী ছিলেন, তাঁর কাছে আল্লাহর তরফ থেকে দুনিয়ার মানুষের হিদায়েতের জন্য অহী নাযিল হত, আর অমাদের কাছে অহী নাযিল হয় না। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহি আকিদা পোষণ করার তৌফিক দান করুক। আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট