অনন্যসুলভ ঈমান

 


তাবারানী শরীফের একটি অসাধারণ বর্ণনায় এসেছে "রাসূল (স) একদিন এক বেদুঈনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যখন সে আল্লাহর নিকট দোয়া করছিল..." এখন বেদুইন বলতে আসলে কাদের বুঝায়? সহজভাবে বললে আমাদের সময়কার গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষদের মত। যারা খুবই সিম্পল জীবন যাপন করতেন।

তো, রাসূল (স) থামলেন এবং সে কী বলছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন। তিনি শুনতে পেলেন লোকটি বলছে-- “হে একক সত্তা! এই পৃথিবীর চোখ দিয়ে যাকে দেখা সম্ভব নয়, যার মহানুভবতা মানুষের ক্ষুদ্র মস্তিস্কের পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, তিনি যেমন প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য মানুষের পক্ষে সেরূপ প্রশংসা করা সম্ভব নয়, কোনো ঘটনা তাঁকে পরিবর্তন করতে পারে না, তিনি সময় শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় করেন না, তিনি পৃথিবীর সকল পাহাড় পর্বতের একেবারে সঠিক ওজন জানেন, তিনি পৃথিবীর সকল মহাসাগরের একেবারে সঠিক আয়তন জানেন, বৃষ্টির ফোটার একেবারে সঠিক সংখ্যা তিনি অবগত আছেন, তিনি পৃথিবীর সকল গাছের সর্বমোট পাতার একেবারে সঠিক সংখ্যা জানেন, রাত তার অন্ধকারে যা কিছু লুকিয়ে রাখে এবং দিন তার আলোতে যা প্রকাশ করে তার সবই তিনি জানেন, আল্লাহর কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক আকাশ অন্য আকাশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না, আল্লাহর কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাটির একটি স্তর অন্য স্তরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না, পাহাড়ের গভীর অন্ধকারের কোন গর্তও তাঁর কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে রাখতে পারে না এবং গভীর সমুদ্রের গহীন অন্ধকারও আল্লাহর কাছ থেকে কিছু গোপন রাখতে পারে না।” এমন অসাধারণ ছিল তাঁর বিশ্বাস, তাঁর ঈমান। এভাবে আল্লাহর প্রশংসা করার পর সে দোয়া করতে লাগলো। তাঁর দোয়াও ছিল অসম্ভব সুন্দর। “ও আল্লাহ! আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় যেন আমার জীবনের সর্বশেষ সময় হয়, আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ যেন আমার জীবনের সর্বশেষ কাজ হয়, আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দিনে যেন আমি আপনার সাক্ষাত লাভ করি।” এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডেকে আনলেন। তিনি বললেন এই লোকের নামাজ শেষ হলে আমার কাছে আসতে বলো। সে আসলে রাসূল (স) তাঁকে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলেন। সে কোন গোত্রের তাও জানতে চাইলেন। সে বলল- আমি বনু আমর ইবনে সা’সা’ থেকে এসেছি। তারা রাসূল (স) এর দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। তারপর রাসূল (স) তাঁকে একটি উপহার দিলেন। লোকটি কেমন সরল মনের ছিল অথচ তাঁর বিশ্বাস এতো দৃঢ় ছিল তা আমাদের দেখানোর জন্য রাসূল (স) তাঁকে বললেন, জানো কেন আমি তোমাকে এই উপহার দিয়েছি? সে বলল- কারণ আমি আপনার আত্মীয়। রাসূল (স) বললেন - না, না এই কারণে না। আত্মীয়তার সম্পর্কের নিজস্ব অধিকার রয়েছে। আমি তোমাকে এই উপহার দিয়েছি কারণ তুমি কেমন অসম্ভব সুন্দর করে আল্লাহর প্রশংসা করেছো, আর কেমন অনন্যসুলভ তোমার ঈমান।” [শায়েখ আব্দুন নাসের জাংদার Strengthening Belief in Times of Uncertainty লেকচার থেকে] এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “আমাকে একটি বাক্য শিক্ষা দিন যা আমি বলব।” তখন রাসূল বললেন, “বল, لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، اَللّٰهُ أَكْبَرُ كَبِيْراً، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْراً، سُبْحَانَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, অতীব বড়। আল্লাহ্‌র অনেক-অজস্র প্রশংসা। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান। প্রবল পরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় এবং কোনো শক্তি কারো নেই। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, আল্লা-হু আকবার কাবীরান, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি কাসীরান, সুবহা-নাল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন, লা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হিল ‘আযীযিল হাকীম। তখন বেদুঈন বলল, এগুলো তো আমার রবের জন্য; আমার জন্য কী? তিনি বললেন: “বল, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ، وَارْحَمْنِيْ، وَاهْدِنِيْ، وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে আপনি হেদায়াত দিন, আমাকে নিরাপদ রাখুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়ারযুক্বনী এরপর যখন বেদুঈন ফিরে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি তার হাত কল্যাণে পূর্ণ করে নিল”। [আরবি না পারলে দুয়াগুলোর বাংলা অর্থ পড়ুন। বার বার পড়ুন।]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে