ঘুম থেকে জেগে উঠার পর দুআ

 


ঘুম থেকে জেগে উঠার পর আমরা কোন দুআ পড়ি? "আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা'দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহীন নুশুর। " অর্থ: সকল প্রশংসা তাঁর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যুর (ঘুমের পর) পর আবার জীবন দিয়েছেন। আর তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন।

প্রতিদিন একটি নতুন জীবন। প্রতিবার আল্লাহ আপনাকে জেগে উঠার সুযোগ দিচ্ছেন এই জন্য যে, যেন ভুল করে থাকলে আবার নতুন করে শুরু করতে পারেন। ভালো ভালো আমল করে যেন জান্নাতের উচ্চ মাকাম লাভ করতে পারেন। ক্রমান্বয়ে জান্নাতে নিজের অবস্থান যেন উন্নত করে নিতে পারেন। আল্লাহ বলেন- وَ لِکُلٍّ دَرَجٰتٌ مِّمَّا عَمِلُوۡا - "প্রত্যেককে তার আমল অনুযায়ী দারাজাত বা লেভেল দেয়া হবে।" (৬:১৩২) অর্থাৎ আপনি যত বেশি ভালো কাজ করবেন তত উপরের জান্নাত পাবেন। প্রতিদিন ঘুরে ফিরে নেক আমল করার সুযোগগুলো বার বার আমাদের কাছে আসে। বিশেষ করে প্রতিদিনের ফরজ সুন্নত নামাজগুলো। এগুলোকে বোঝা হিসেবে দেখবেন না । সুযোগ হিসেবে দেখুন। আল্লাহ নিজেই বলেছেন- اِنۡ اَحۡسَنۡتُمۡ اَحۡسَنۡتُمۡ لِاَنۡفُسِکُمۡ - তোমরা যদি ভাল কর, তবে নিজেদের জন্যই ভাল করবে।(১৭:৭) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন— "ঐ দিনের চেয়ে আর কোনোদিনই আমার কাছে বেশি অনুতাপের নয়; যেদিনের সূর্যাস্ত হয়ে গেলো, আমার জীবনকালও কমে গেলো কিন্তু আমার আখিরাতের জন্য উপকারী কিছু করলাম না।" বিচার দিবসের একটি নাম হল 'ইয়াওমাল হাসরা।' এই নামটি আল কুরআনে একবার এসেছে। সূরা মারিয়ামের ৩৯ নাম্বার আয়াতে। وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ - "আর তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ দিবস সম্পর্কে যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, অথচ তারা রয়েছে উদাসীনতায় বিভোর এবং তারা ঈমান আনছে না।" (১৯:৩৯) আরবি 'হাসরা' শব্দের অর্থ হলো খুবই খারাপ পর্যায়ের অনুতাপ, অনুশোচনা। যেমন, আমরা বলে থাকি— 'ওহ, সে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর অনুশোচনা অনুভব করছে।' কিন্তু আরবিতে অনুতাপের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নাদিমা অর্থও অনুতাপ করা। "হায় হায়! আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার এটা করা ঠিক হয়নি।" সাধারণ অনুতাপ। কিন্তু 'হাসরা' শব্দটি ব্যবহার করা হয় চরম পর্যায়ের অনুতাপ বোঝাতে। কেউ যদি চরম ধরণের অনুশোচনা অনুভব করে তখনি কেবল 'হাসরা' শব্দটি ব্যবহার করা হয়। যাইহউক, বিচার দিবসকে বলা হয় 'ইয়াওমুল হাসরা।' আর কারণটি খুবই স্পষ্ট। আপনি যদি ভুল গাড়ি ক্রয় করে থাকেন এটা এক ধরণের অনুতাপ। কিন্তু কল্পনা করুন—আপনি আপনার সারা জীবন নষ্ট করে ফেলেছেন। সব শেষ। দ্বিতীয়বার আর কোনো সুযোগ পাওয়া যাবে না। এখন আপনার জন্য অনন্তকালের ঠিকানা ঠিক করা হবে। কেমন হবে সেই অনুতাপ!! আর তাই বিচার দিবসকে বলা হয়— 'ইয়াওমাল হাসরা বা সীমাহীন অনুতাপের দিন।' সেই দিনের মত আফসোস আর কোনো দিন হবে না। আমাদের স্কলাররা বলেছেন, এই অনুশোচনার ব্যাপারটা সবার ক্ষেত্রে ঘটবে একমাত্র শহীদ ছাড়া। এমনকি শহীদও সামান্য অনুশোচনা অনুভব করবে। সৎকর্মশীলরা এক ধরণের অনুশোচনা অনুভব করবে। কেন? কারণ, সৎকর্মশীলরা নিজেদের দোষ দিবে, যদিও তারা জান্নাত পাচ্ছে তবু নিজেদের দোষ দিবে। একবার আপনি জান্নাতে পৌঁছে গেলে আর কোনো অনুশোচনা থাকবে না। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত এমনকি সৎকর্মশীলরাও কিছুটা অনুশোচনা অনুভব করবে। কোন কারণে? কেন তারা আরো বেশি সৎ কাজ করেনি, তাহলে তো জান্নাতের আরো উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে পারতো। যদিও তারা A- পেয়েছে, আর আলহামদুলিল্লাহ A- ও ভালো। "ইস! যদি আর সামান্য একটু চেষ্টা করতাম তাহলে তো A+ পেতাম!" তাই, সুযোগগুলো কাজে লাগান। সেদিনের অনুশোচনাটা যেন অতোটা তীব্র না হয়। বরং সেদিন যেন আমরা তার মত হই যে তার আমলনামা দেখে এতোটা খুশি হবে যে, মানুষকে ডেকে ডেকে বলবে— فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ ۙ فَیَقُوۡلُ هَآؤُمُ اقۡرَءُوۡا کِتٰبِیَهۡ - তখন যাকে তার আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘এই যে আমার আমলানামা পড়ে দেখ। اِنِّیۡ ظَنَنۡتُ اَنِّیۡ مُلٰقٍ حِسَابِیَهۡ - আমি জানতাম যে, আমাকে আমার হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। আজ আমরাই আমাদের এই আমলনামার রচয়িতা। তাই প্রতিটি সূর্যোদয়কে একটি নতুন সুযোগ হিসেবে দেখুন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

❝সূরা হুজুরাত❞

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে