মানুষকে যখন সৃষ্টি করা হয়...
মানুষকে যখন সৃষ্টি করা হয় তখন তাকে সকল সৃষ্টির উপর সর্বাধিক মর্যাদাবান এবং সম্মানিত করে সৃষ্টি করা হয়। সে মর্যাদা আসে আল্লাহর দেওয়া রূহ আমাদের ভেতর ফুঁকে দেওয়ার কারণে। ঐ আধ্যাত্মিক আলো যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাথে যুক্ত হই। যে আলো নিজেই আল্লাহর সাথে যুক্ত হতে চায়। আর রূহ আল্লাহর এতই বিস্ময়কর এক সৃষ্টি যে, আল্লাহ ফেরেশতাদের সকল ব্যাটালিয়নকে, যাদের সংখ্যা গণনাতীত, সকল আকাশের সমস্ত ফেরেশতাদের তিনি বলেন- فَاِذَا سَوَّیۡتُهٗ وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِیۡ فَقَعُوۡا لَهٗ سٰجِدِیۡنَ - "আমি যখন তাকে পূর্ণ মাত্রায় বানিয়ে দেব আর তাতে আমার পক্ষ হতে রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও।" (১৫:২৯) অন্য কথায়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আদম আলাইহিস সালাম এবং তাঁর সন্তানদের সৃষ্টি করেছেন এমন সর্বোচ্চ সম্মান এবং মর্যাদা দিয়ে যে সম্মান এবং মর্যাদা আল্লাহর কোনোসৃষ্টি কোনোকালে পায়নি। সর্বোচ্চ সম্মান!! এ ধারণাটি এতোই শক্তিশালী যে, তার মানে, ধরাপৃষ্ঠে জন্ম নেওয়া প্রতিটি আদম সন্তান, পৃথিবীর যে প্রান্তেই তার জন্ম হোক না কেন, যে গ্রামেই তার জন্ম হোক না কেন, যে শতকেই তার জন্ম হোক না কেন প্রতিটি মানব আল্লাহর নিকট বেশি মর্যাদাবান সকল ফেরেশতাদের সম্মিলিত জমায়েতের চেয়েও। জিব্রিল আলাহিস সালামও এর অন্তর্ভুক্ত। এখন, সূরাতুল ইস্রার এ আয়াতটি নিয়ে চিন্তা করুন। وَ لَقَدۡ کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ اٰدَمَ - "আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি।" (১৭:৭০) একটু থেমে ভেবে দেখুন। মানুষকে কী ধরণের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে! সুবহানাল্লাহ! আর মর্যাদা এসেছে আল্লাহ প্রদত্ত রূহের কারণে। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাথে যুক্ত হই। একটি হাদিসে এসেছে একদিন জিব্রিল আলাহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন- "একজন ঈমানদারের জন্য সত্যিকারের আভিজাত্য রাত্রি বেলা নামাজে দাঁড়ানোর মাঝে।" দুনিয়াতে আমরা যে পরীক্ষায় অবতীর্ণ আছি তার মূল কথা হলো—আমরা কি আমাদেরকে প্রদত্ত সেই সম্মান সেই মর্যাদা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করছি? সেজন্য এই সম্মান হারিয়ে ফেলার চেয়ে চরম পরাজয়, বাজেতম ব্যর্থতা আর নেই। আর তাইতো সুরাতুল আলে ইমরানে এসেছে-"যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে। আর আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (এবং বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’। ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান করবে। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’। (৩: ১৯১-১৯২) এ অংশটি খেয়াল করুন- ‘ তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান করবে।' আগুনে প্রবেশ করলে তো আগুনে পোড়ার ব্যথার কথা আগে মনে আসার কথা। কিন্তু এ লোক জানে, আগুনে পোড়ার শাস্তির চেয়েও মন্দ ব্যাপার হলো আমি আল্লাহর দেওয়া সর্বোচ্চ উপহারটি হারিয়ে ফেলেছি। আমি আমার সম্মান হারিয়ে ফেলেছি। কীভাবে আমি এটি হারিয়ে ফেললাম! তাই সে বলে- নিশ্চয় তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান করবে। اِنَّکَ مَنۡ تُدۡخِلِ النَّارَ فَقَدۡ اَخۡزَیۡتَهٗ - ইন্নাকা মান তুদখিলিন না-রা ফাকাদ আখযাইতাহ। - নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে - 109. Ali ' Imran Aayah 192 - বায়্যিনাহ টিভি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন