ফিতনার এই যুগে বাচ্চাদের কীভাবে বড় করবো?
ভয়াবহ ফিতনার এই যুগে আমার বাচ্চাদের কীভাবে বড় করবো? (২য় পর্ব) - নোমান আলী খান শয়তান মানুষের নিকট বিভিন্ন উপায়ে আসে। আল্লাহ এমনকি বলেছেন মানুষের মাঝে শয়তান আছে, জীনদের মাঝে শয়তান আছে। রাইট? মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস। সুতরাং, এমন অনেক মন্দ প্রভাব আছে যা এসে আমার অল্পবয়সী ছেলে বা মেয়েকে ধরাশায়ী করতে চাইবে। আর তারা এতে গুরুতরভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়বে। আমাকে নিশ্চিত করতে হবে তারা যেন এ ধরণের পরিবেশে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। কীভাবে নিশ্চিত করবেন যে, আমাদের শিশুরা যেন এ ধরণের পরিবেশ হ্যান্ডল করতে পারে। এ খুৎবা সব উত্তর দিতে পারবে না। আমি আগেই আপনাদের বলে রাখছি। কিন্তু এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে আমরা সতর্ক হতে পারি এবং কিছু প্র্যাক্টিক্যাল পদক্ষেপ নিতে পারি। আমি একটি অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করতে যাচ্ছি। যখন আমি একটি মুসলিম দেশে গিয়েছিলাম (তখন এ অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল)। কারণ আমি ভেবেছিলাম তরুণদের সমস্যা তথা মুসলিম তরুণদের সমস্যা... এটা তো পাশ্চাত্যের বিষয়। মুসলমানরা, আলহামদুলিল্লাহ্, মুসলিম দেশে বাস করা মুসলমানরা, যারা আযান শুনতে পায়, খাবার হালাল না হারাম এটা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না, যারা জীবনের শুরু থেকেই ইসলামের সাথে পরিচিত, ইচ্ছে করলেই ওমরায় যেতে পারে, প্রতি বছর ইসলামী ভ্রমণ করে যা তাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। তারা তো অনেক কম ফিতনার মুখোমুখি হবে। যাইহোক, তো এ শিশুগুলোর সাথে একটি স্কুলে আমার একটি সেশন ছিল। টিনেজ ছেলে এবং মেয়েদের সাথে। কয়েক শ ছেলে এবং কয়েক শ মেয়ে। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার বক্তব্য শেষ হয়ে গেলে, মাইক্রোফোনে তাদের প্রশ্ন নেয়ার পরিবর্তে, কারণ তারা হয়তো মাইকের সামনে এসে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে না... আমি শিশুদের সম্পর্কে একটি ব্যাপার জানি, তারা নিজেদের স্বাভাবিক আচরণটা দেখায় না যখন সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাই যদি তাদের বলেন, মাইকের সামনে এসে তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারো। তারা তখন এমন প্রশ্ন করবে যেটাতে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। কারণ স্টেজে প্রিন্সিপল আছে। তাদের পিতামাতারা আছে। ক্যামেরাম্যান আছে। তারা অতিরিক্ত সতর্ক। এমতাবস্থায় আসল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে না। তাই, ভাবলাম, আমি জাস্ট স্টেজ থেকে নেমে শিশুদের ভিড়ের মাঝে ঢুকে পড়বো। এরপর তাদের সাথে কথা বলবো। কোনো ক্যামেরা থাকবে না। আমি শুধু তাদের জিজ্ঞাসাগুলো জানতে চাই। তাই, প্রিন্সিপাল যখন ঘোষণা দিলো- কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে হাত উঠাও। সেখানে প্রায় হাজার খানেক শিশু উপস্থিত ছিল; কয়েক শ ছাত্র, কয়েক শ ছাত্রী। কিন্তু কেউ হাত উঠালো না। এজন্য আমি বললাম, আমাকে শুধু তাদের কাছে যেতে দিন এবং কথা বলতে দিন। তো, আমি ছাত্রদের ভিড়ের মধ্যে চলে গেলাম এবং ছাত্রীদের ভিড়ের মধ্যেও। আমি এক সাইডে গেলাম। কয়েক ঘণ্টা ধরে, তাদের প্রশ্নের যেন কোনো শেষ নেই। একজনের উপর আরেকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে প্রশ্ন করার জন্য। আমার জন্য এটা শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল না, এটা ছিল শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ। আমি জানতে চেয়েছিলাম এই শিশুগুলোর মাথায় কী কাজ করছে? তারা কী সম্পর্কে জানতে চায়? আর এই কিশোরীদের মাঝে অনেকজন জানতে চেয়েছে- যদি কেউ সবসময় একাকীত্ব ফিল করে সে তখন কী করবে? যখন মনে হয় কেউ আপনার কথা শুনে না তখন কী করবেন? যখন মনে হয় কেউ আপনার প্রতি কোনো মনোযোগ দেয় না তখন কী করবেন? যখন মনে হয় আপনার পিতা-মাতা আপনাকে আসলে ভালোবাসে না তখন কী করবেন? এগুলো ছিল তাদের প্রশ্ন। বার বার, পুনরায়। একই প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন। একাকীত্ব। কেউ আমাকে শুনে না এমন অনুভূতি। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার অনুভূতি। কেউ ভালোবাসে না এমন অনুভূতি। এ ধরণের প্রশ্ন। বারংবার একই প্রশ্ন। আমি ভাবছিলাম, সম্ভবত একজন মেয়ে এরকম ফিল করছে। বা দুইজন মেয়ে। পঞ্চাশ বারের পর আমাদের স্বীকার করতে হবে কিছু একটা ঘটে চলছে এখানে। আমাদের বাচ্চারা ফিল করে যে সবাই তাদের কথা ভুলে গেছে। একজন শিশু তার পিতামাতার কাছ থেকে অন্যতম যে একটি বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তা হলো-- গভীর সম্পর্কের একটি চেতনা। একটি সত্যিকারের সম্পর্কের অনুভূতি। আর আপনি গভীর সম্বন্ধের চেতনা বিকশিত করতে পারবেন না, যদি আমাদের বাচ্চাদের সাথে আমাদের কথোপকথনগুলো সবসময় কৃত্রিম হয়। আমরা যদি শুধু ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করি, নামাজ পড়েছ?! অজু করেছ?! উঠ তাড়াতাড়ি ফজরের সময় হয়েছে!! হোমওয়ার্ক করেছ? (জোর গলায়) খেতে আসো!! এটা দেখো না! আচ্ছা আচ্ছা, ঈদের জন্য কোন ধরণের জুতা চাও? তাদের সাথে এগুলোই আমাদের কথোপকথন। এগুলোই শুধু। খাবার, হোমওয়ার্ক, কিছু ইসলামিক বিষয়, ঘরের কিছু কাজ কর্ম। এভাবে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়। এছাড়া যদি আর কিছু হয়... ছুটিতে কোথাও গেলেও ভালো সময় কাটে। তখনও ভালো কথাবার্তা হয় না, শুধু ভালো সময় কাটে। বাচ্চারা তখন শিখে যায়, আমার বাবা মার সাথে আমার শুধু তখনোই কথা বলার দরকার হয় যখন আমার ক্ষুধা লাগে, বা যখন আমার টাকার দরকার হয়, বা অন্য কিছুর দরকার হলে। এ ছাড়া আমি শুধু আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলবো। আমার তাদের সাথে কথা বলার দরকার নেই। আবার অনেক সময় পিতা-মাতা কিছু নিয়ে কথা বলছে, আর বাচ্চা হিসেবে তুমি তাদের সামনে এলে। তখন তারা বিরক্ত হয়ে...যাও! আমার এখন কথা বলছি। অন্য রুমে যাও। বাচ্চাটা তখন মনে করে, উনাদের সাথে তো আমার কথা বলার সুযোগ নেই। তখন পিতামাতা বলে- হ্যাঁ, সে তেমন কথা বলে না। হ্যাঁ, সে কথা বলে না। কারণ, আপনারা তাকে কথা বলার কোনো সুযোগই দেন না। (৭:৫০-১২:০৫ মিনিটের অনুবাদ। সম্পূর্ণ খুতবা ২৮:২১ মিনিট
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন