বিবাহিতরা যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়

 


বিবাহিতরা যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়

--------------------------- যখন একজন বিবাহিত পুরুষ বা বিবাহিত নারী জেনা ব্যভিচার করে এটা ছোটো কোনো অপরাধ নয়। এটা এমনকি 'হুদুদের' অন্তর্ভুক্তও নয়। হুদুদ হলো আপনি যখন কোনো অপরাধ করেন এ জন্য আপনাকে একটি শাস্তি দেওয়া হয়। যেন আপনি ঠিক হয়ে যান। এ ভুল আর না করেন। এ কারণে অবিবাহিতরা ব্যভিচারে লিপ্ত হলে এবং যদি চারজন সাক্ষী পাওয়া যায়, তাহলে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী একশো বেত্রাঘাত করতে হবে। (ইসলামী রাষ্ট্রে শরিয়তি আদালত এগুলো কার্যকর করবে। সকল যুক্তি প্রমান সাক্ষ্য উপস্থাপনের পর।) [বিধানগুলো আপনাদের জানাচ্ছি যেন বুঝতে পারেন এগুলো হালকাভাবে নেয়ার বিষয় না। এগুলো খুবই গুরুতর গুরুতর অপরাধ।] কিন্তু, বিবাহিতদের জেনা ব্যভিচার আরো বড় অপরাধ। এটা আসলে আল-মুহারবা (اَلْمُهَارَبَةْ)। আল-মুহারাবার অর্থ বুঝিয়ে বলছি। মুহারাবা অর্থ আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। আপনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে। আর যখন কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তাদেরকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করতে হবে। যদি কেউ ব্যভিচারের মাধ্যমে তার বিবাহকে লঙ্ঘন করে, এটা হাদ নয়, এটা আসলে মুহারবা। আল্লাহ এর জন্য দিয়েছেন অনেক বেশী কঠিন বিধান। যেটা রসূল (সঃ) এর সহীহ হাদীসে বর্ণিত এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- যদি একজন বিবাহিত পুরুষ এবং বিবাহিত নারী এটা করে, তাহলে তাদেরকে পাথরের আঘাতে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। যেটা হলো অনেক অনেক অনেক বেশী কঠোরতাপূর্ণ; তাই না? মৃত্যুদন্ড? হত্যা? কেনো? কেনো এটা এতো কঠোরতাপূর্ণ? আপনি এই আইনটি বুঝবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইসলামে বিবাহের মর্যাদা বুঝতে পারবেন। আল্লাহর কাছে বিবাহ হলো ميثَاقاً غَلِيظاً (মিসাকান গলিযা)। আমি আপনাদেরকে আগেই বলেছি যে এটা একটা মজবুত চুক্তি। একজন অবিবাহিত পুরুষ এবং একজন অবিবাহিত নারী একটি ভুল করেছে। তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু শাস্তি দেয়ার পর, তারা নিজেদের মতো জীবন পরিচালনা করতে পারবে। তারা তওবা করতে পারে, এরপর জীবন চলতে থাকবে। ঠিক আছে ? কিন্তু একজন বিবাহিত পুরুষ এবং একজন বিবাহিত নারী এমন একটি চুক্তিতে প্রবেশ করেছে, কোনো মানুষের পক্ষে যার থেকে শক্তিশালী চুক্তিতে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। যদি আপনি সেই চুক্তি লঙ্ঘন করেন, বেশিরভাগ আলেমদের মতামত অনুযায়ী, আর আমি যতটুকু অধ্যয়ন করেছি, আমার কাছে এই মতটিই সবচেয়ে সন্তোষজনক মনে হয়েছে যে, এটা হুদুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটা মুহারাবা। আরো জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ এবং তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। কারণ আল্লাহর নিকট বিবাহ অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে বিবেচিত। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, কেনো বিবাহ এতো গুরুতর ব্যাপার? সূরা নূরের কেন্দ্রীয় অংশে হৃদয়ের কথা এসেছে; আপনাদের স্মরণে আছে? সূরা নূরের হৃদয়ের মধ্যে কি রয়েছে? হৃদয়। ঠিক আছে। এখন হৃদয়ের ব্যাপারটি হলো, এটাই আপনার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। কারণ বিচার দিবসে, কোনো কিছুই কোনো কাজে আসবে না, কোনো কিছুই কোনো কাজে আসবে না, إِلَّا مَنْ أَتَى ٱللَّهَ بِقَلْبٍۢ سَلِيمٍۢ (ইল্লা মান আতাল্লাহা বিক্বলবিন সালীম), শুধুমাত্র যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট আসবে সুস্থ হৃদয় নিয়ে। এখন, হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখতে হবে; তাই না? ঠিক আছে। আল্লাহ বিবাহ সম্পর্কে কি বলেছেন ? وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً (ওয়ামিন আয়াতিহি আন খলাক্বা লাকুম মিন আনফুসিকুম আযওয়াজা লিতাসকুনু ইলাইহা, ওয়াজা’আলা বাইনাকুম মাওয়াদ্দাতান ওয়া রহমাহ), সূরা রূমে তিনি বলেছেন, তাঁর অলৈকিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে তিনি তোমাদেরকে বিবাহিত দম্পতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা একে অপরের মাঝে প্রশান্তি খুঁজে পাও, তোমরা স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পাও। প্রশান্তি কোথায় অনুভূত হয়? হৃদয়ে। প্রকৃতপক্ষে, বিবাহের উদ্দেশ্য হলো আপনার হৃদয়ে প্রশান্তি নিয়ে আসা। আর যখন হৃদয় প্রশান্ত হয়, এটা আল্লাহর ইবাদতের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। এটা আসলে হৃদয়ের সুরক্ষা, যা পাওয়া যায় বিয়ের মাধ্যমে। আর এ সুস্থ হৃদয় আপনাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। যখন আপনার বিয়েতে শান্তি থাকে, অন্য সবকিছুতেই শান্তি থাকে। দেখুন রসূল (সঃ) এর জীবনের সবচেয়ে কঠিন ঘটনাগুলোর একটি- হুদায়বিয়াতে সাহাবীরা সবাই তাঁর কথা শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, তাঁদের সবাই কথা শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এটা রসূল (সঃ) এর জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহুর্ত। কাফেরদের অবাধ্যতায় তিনি অভ্যস্ত ছিলেন, মুনাফিকদের অবাধ্যতায় তিনি অভ্যস্ত ছিলেন। সাহাবাদের নয়। সেদিন তিনি সাহাবাদের মাথা মুণ্ডনের আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শুনছিলেন না। কারণ তাঁরা মনে করেছিলেন হুদায়বিয়ার সন্ধি মুসলমানদের জন্য অপমানকর। তাঁরা চুক্তির শর্তগুলো মানতে পারছিলেন না। এটা তাঁর হৃদয়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন মূহুর্ত; আর কে তাঁকে প্রশান্তি দিচ্ছেন? আমাদের মা দিচ্ছেন। আমাদে মা বলেছিলেন আপনি মাথা মুন্ডন করুন। আপনার দেখাদেখি তারাও শুরু করবে। পরে তারা সবাই করেছিলেন। তাহলে একজন স্ত্রী প্রশান্তি দিতে পারে। আপনি খেয়াল করেছেন? এটা আল্লাহ عَزَّ وَجَلَّ আমাদেরকে বিয়ের মাধ্যমে দিয়েছেন। যখন আপনি এটা নিয়ে অবহেলা করেন, তখন আপনি মূলত এই দীন নিয়ে অবহেলা করছেন। এটাকে স্পর্শ করবেন না। আপনি যদি আসলেই অন্য কারো সাথে থাকতে চান, স্ত্রীকে আগে তালাক দিন। এরপর অন্য কাউকে বিয়ে করুন। বিয়ের সীমানার বাইরে যাবেন না। কারণ সেটা হলো আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। প্রসঙ্গক্রমে, প্রসঙ্গক্রমে, কোনো পুরুষ যদি অন্য কারো কাছে যায়, যদি সে তার স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করে, কিন্তু গোপনে; তখন আপনি কি করবেন? কিছুই না। আপনি কি ধারণা করবেন? কিছুই না। এর জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ধরবেন। কিন্তু দুনিয়াতে কখন শাস্তিটি প্রযোজ্য হবে? যখন সে প্রকাশ্যে চারজন বা তার অধিক মানুষের সামনে কাজটি করবে। সে শুধু বিবাহের সীমা লঙ্ঘনই করেনি, সে বিবাহের সীমা লঙ্ঘন করেছে প্রকাশ্যে। দেখতে পাচ্ছেন ? এখানে দুইটি অপরাধ। প্রথম অপরাধ এটা প্রকাশ্যে; দ্বিতীয় অপরাধ এটা বিবাহের সীমা লঙ্ঘন। এটা মৃত্যুদন্ড পাওয়ার যোগ্য। তো, চাবুকের শাস্তি এবং পাথর মেরে মৃত্যুদন্ডের মধ্যে এই হলো পার্থক্য। - নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে - সূরা নূর ১ম পর্বের অংশ বিশেষ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সহজ দশটি(১০)টি জিকির!

দিরিলিসের আরতুগ্রুলের সকল পর্ব কিভাবে দেখবেন?

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে